ঢাবির প্রশ্নপত্র ফাঁস: ৮৭ শিক্ষার্থীসহ মোট আসামি ১২৫

DU logo

দেড় বছরের দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল আলোচিত প্রশ্নফাঁস মামলার অভিযোগপত্র প্রস্তুত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এছাড়াও, অনেকের তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে। নাম-ঠিকানা সঠিক পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

আজ (৩০) সকালে মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডি প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম। সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি শাহ আলম, ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ, পিপিএম এবং বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরলস পরিশ্রম, কর্মদক্ষতা এবং সুকৌশল পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ প্রশ্নফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াত চক্রকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তার করা হয় মূলহোতাসহ মোট ৪৭ জনকে। এদের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

দেশব্যাপী আলোচিত এই ঘটনার শুরু ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে। সে রাতে গণমাধ্যম কর্মীদের দেওয়া কিছু তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। সেসময় গ্রেপ্তার করা হয় মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থী। তাদের দেওয়া তথ্যে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাফিকে।

এ ঘটনায় ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়। তদন্তে উঠে আসে, চক্রটি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতো। ২০১৫ এবং ২০১৬, পর পর দুই বছর প্রশ্নফাঁসকৃত প্রশ্ন নিয়ে সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি বাসায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছিলো তারা। চক্রের মাস্টারমাইন্ড নাটোর জেলার ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ মোট ২৮ আসামিকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে প্রশ্নফাঁস চক্রটির মূলোৎপাটন করে সিআইডি।

সিআইডি প্রধান জানান, মূলত দুইভাবে জালিয়াতি হয়। একটি চক্র প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। অন্যটি পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করে থাকে। প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁসকারী পুরো চক্র চিহ্নিত হলেও ডিজিটাল ডিভাইস চক্রটিকে চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল জালিয়াত চক্রটিকেও চিহ্নিত করা গেছে। ধরা পড়েছে চক্রের মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, মূলহোতা ইব্রাহীম, মোস্তফা কামাল, হাফিজুর রহমান হাফিজ এবং তাজুল ইসলাম।

গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই মামলাটির তদন্ত ছিলো সুবিশাল এক কর্মযজ্ঞ। এই কার্যক্রমে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরাও বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় সমাজ থেকে প্রশ্নফাঁসের ব্যাধি দূর করা সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।

তার মতে, গত দেড় বছরে সিআইডির টানা অভিযান এবং একের পর এক আসামি গ্রেপ্তারের ফলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এসএসসি-এইচএসসিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের খবর পাওয়া যায়নি। আগামীতেও প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় সিআইডির বিশেষ নজরদারি থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চক্রের মূলহোতাদের অঢেল অবৈধ অর্থ-সম্পদের খবর পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাৎক্ষনিক তদন্তে প্রায় ২০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ইতোমধ্যে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মানিলন্ডারিং মামলাও করেছে সিআইডি।

Comments

The Daily Star  | English
NBR speeds up auction process of abandoned goods

NBR moves to speed up auction of abandoned goods

About 2 lakh tonnes of imported goods left abandoned at Chattogram port alone for years

2h ago