বাইরে আমেজ নেই, ভেতরে ক্রিকেটীয় উন্মাদনা

ICC cricket world cup fan
ছবি: একুশ তাপাদার

বাংলাদেশে বিশ্বকাপ হলে পুরো ঢাকা শহর যেমন রঙ মাখে, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ঘিরে লন্ডন শহরের সেই বাস্তবতা নেই। কেবল ওভাল স্টেডিয়াম ঘিরেই দেখা মিলল বিশ্বকাপের রঙ। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের বিপুল সমারোহের শহরে ক্রিকেট খেলার বিশ্বকাপের মতো বড় আসরও সমুদ্রের বুকে এক বালতি জলের মত ছোট্ট ব্যাপার। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে খেলতে নামা স্বাগতিক ইংল্যান্ডের জন্য গলা ফাটাতে মানুষেরও অবশ্য কোনো কমতি নেই। একদম ভরপুর গ্যালারি আর ক্রিকেটীয় উন্মাদনাতেই শুরু হয়েছে ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।

আগের দিন সন্ধ্যায় লন্ডন শহরে নেমেই অল্প সময়ে এখানকার তাল বুঝে ফেলা শক্ত। আনকোরা হলে যা হয়। সহজ পথেও চক্কর অবধারিত। যদিও বন্ধু-বান্ধব আর স্বজনরা বিস্তর পরামর্শ দিয়ে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, তবু লন্ডন মেট্রোর ম্যাপ (এখানে যা টিউব নামে পরিচিত) প্রথম দেখায় হিজিবিজি লাগাই স্বাভাবিক। সেই হিজিবিজি টিউবের চক্করে বার দুয়েক ঘুরপাক খেয়ে বার্কিং (পূর্ব লন্ডনে অবস্থিত) থেকে ওভাল স্টেডিয়ামে আসতে বেশ সময় লেগে গেল। রাস্তাতেই দেখলাম টস হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ। হ্যাপা আর কাকে বলে!

তবে ওভাল টিউব স্টেশন থেকে নেমেই সব পানির মতো সহজ। স্টেশনের একদম গা ঘেঁষা কেনিংটন ওভাল স্টেডিয়াম। তড়িঘড়ি মিডিয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড সংগ্রহ করে ঢুকতে চোখে পড়ল অনেকগুলো লম্বা লাইন। কেউ ঢুকছে গ্যালারিতে। কেউ গ্যালারি থেকে বেরিয়ে লাইন দিয়েছে গলা ভেজানো আর গা গরম করার দোকানে। কারো আবার পেট পুজোর তাড়া। পুরো পরিবেশেই চার-ছক্কা, হইহই ব্যাপার।

কিন্তু সেই কলরবের মধ্যেও আছে অদ্ভুত মাপজোক। কোন স্কেলে কোন রব উঠলে চড়া শোনাবে না আবার একদম নেতিয়ে পড়াও যাবে না- এ যেন সবারই জানা। যেন কোরাসের তাল মিলিয়েই চলছে উত্তাপের উঠানামা। সুশৃঙ্খল আর সুচারুভাবে।

বাঙালির ক্রিকেট প্রেম এখন গুরুতর পর্যায়ে। যেকোনো কিছুতে মার-মার, কাট-কাট পরিস্থিতি। তীব্র জাতীয়তাবোধের তাড়নায় উত্তেজনার পারদ সর্বদা থাকে চূড়ায়। এখানে তার বালাই নেই। পুরো আমেজই বিপরীত। খেলা দেখাটা নিছক বিনোদন আর ঘটা করে আনন্দ করার উপলক্ষ। জেসন রয়, জো রুট, ইয়ন মরগ্যানদের প্রতিটি বাউন্ডারিতে তাই হুল্লোড় চলল। আবার মরগ্যানকে যখন ছেঁটে ফেলে ভোঁ দৌড় দিলেন ইমরান তাহির, তার জন্যও তালি কম পড়েনি। বাংলাদেশে যেমন কেউ ভালো করতে থাকলে তালি, আবার পা হড়কালেই গালি চলে তীব্র, এখানে তালি থাকলেও নেই গালি! আর এই না থাকাতেই ক্রিকেটীয় উন্মাদনার পরিমিতিবোধ আভিজাত্যের সঙ্গে ধরা দেয়।

ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ড। বাইশ গজে ব্যাটে-বলের এই খেলার সঙ্গে লেপ্টে আছে আভিজাত্যের তকমা। সেই তকমাটা অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গেই বেশি। যদিও হালের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের রমরমা বাজার ওয়ানডে ক্রিকেটের গায়েও জড়িয়ে দিয়েছে ঐতিহ্যের পোশাক।

আগামী মাস দেড়েক ঐতিহ্য, ব্রিটিশ আভিজাত্য আর ক্রিকেট উন্মাদনার এক মিশেল দেখার আশা তাই করা যেতেই পারে। তবে উপমহাদেশীয় দলগুলো মাঠে নামার পর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে উদযাপন প্রকাশের তফাতও হয়ত দেখা যাবে প্রকটভাবে।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

4h ago