গতিশীল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, যত্রতত্র বাস থামানোয় দুর্ঘটনা

Meghna-Gumti Bridge
দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর যানজট দূর হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছেন যাত্রীরা। তবে ফুটওভার ব্রিজ ও বাস স্টপেজ না থাকায় ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ছবি: স্টার

দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর যানজট দূর হওয়ায় একদিকে যেমন স্বস্তিতে রয়েছেন যাত্রীরা, অন্যদিকে ফুটওভার ব্রিজ ও বাস স্টপেজ না থাকায় ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, আগে মেঘনা সেতু ও মেঘনা-গোমতী সেতু দুই লেনের ছিলো। ফলে মহাসড়কের এই অংশে যানবাহনের জট লেগে থাকতো বা গাড়ি ধীর গতিতে চলতো। নতুন সেতু উদ্বোধনের আগে মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটারের এই অংশ পার হতে কখনও কখনও ৫-৬ ঘণ্টা লেগে যেতো। কিন্তু, নতুন সেতু দু’টি উদ্বোধনের পর সব যানবাহন মহাসড়কে দ্রুতগতিতে চলছে। মাত্র ১০ মিনিটেই পার হয়ে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার।

এই ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে মেঘনা সেতুর ঢাল জামালদি থেকে গোমতী সেতুর ঢাল পাখির মোড় পর্যন্ত মোট ৮টি স্থানে যাত্রী ওঠা নামার জন্য বাস থামানো হয়। কিন্তু, বাসস্টপেজ বা বাসস্ট্যান্ড না থাকায় মহাসড়কের উপরই বাস থামে। যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে বাসে ওঠা-নামা করেন।

এদিকে, গত ২৫ মে সেতু দুটি উদ্বোধনের পর থেকে ৭ দিনের মধ্যে মহাসড়কের এই অংশে তিনটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

গত শনিবার মহাসড়কের ভিটিকান্দি এলাকায় সোনারগাঁও থেকে ভবেরচরগামী গজারিয়া পরিবহন নামে একটি বাসে যাত্রী উঠানামা করছিলো। এ সময় বেপরোয়াভাবে নোয়াখালীগামী একুশে পরিবহণের একটি বাস গজারিয়া পরিবহনের বাসকে পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাস দুটির সামনের ও পিছনের অংশ। এ সময় ঘটনাস্থলেই একুশে পরিবহনের বাসচালকের সহকারী নিহত হন। এ ঘটনায় দুই শিশুসহ আহত হন আরও ২০ যাত্রী।

দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের দিন ২৫ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচরে অ্যাম্বুলেন্স চাপায় সুমিতা বড়ুয়া (৯) নামের এক শিশু নিহত হয়। রাস্তা পার হওয়ার সময় ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

এছাড়াও, গত ২৭ মে মহাসড়কের গজারিয়ার জামালদি অংশে পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ মিয়া দুর্ঘটনায় পড়েন। একটি কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় বিপিএম পদক পাওয়া এই পুলিশ সদস্যকে পা হারাতে হয়।

এ বিষয়ে গজারিয়ার ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কবির হোসেন খান জানান, “মহাসড়কে কোন স্পিডব্রেকার থাকে না। যানবাহন চলে দ্রুতগতিতে। আগে সরু সেতু থাকায় যানবাহনের গতি কম ছিলো। এখন নতুন সেতু উদ্বোধনের পর যানবাহনের গতি বেশি। তবে, মহাসড়কের গজারিয়া অংশের দুই পাড়ে লোকালয় আছে। তবে, কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজন মহাসড়ক পার হন। মাঝে মাঝে আমাদের সাহায্য নেয়।”

“অন্যদিকে মহাসড়কে বাস থামানোর কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। কিন্তু, গজারিয়ার ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে কমপক্ষে ৮টি স্থানে যাত্রীদের ওঠা-নামা করতে বাস থামানো হয়। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মহাসড়কে বাস থামানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবহার না করলে ও রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করলে দুর্ঘটনা কমবে বলে মনে হয়।”

মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর এই অঞ্চলের মানুষের বড় ধরনের ভোগান্তি কমে গেছে। তবে, এখন বেশি গতিসহ নানা কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য প্রয়োজনীয় কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “একটি দুর্ঘটনা যে কতো দুঃখের তা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারই জানেন। ঈদ ঘিরে যেখানে মানুষের আনন্দে থাকার কথা, সেখানে এমন দুর্ঘটনা বেদনাদায়ক। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও সচেতন ও সর্তক থাকতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনও সর্তক রয়েছে।”

মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, দ্বিতীয় মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু চালুর ফলে এটি যানজটের পরিবর্তে এখন দ্রুতগতির সড়কে পরিণত হয়েছে। তবে, অতিমাত্রার গতিও প্রতিরোধ করা হবে। কারণ কোন এলাকায় কি পরিমাণ গতি থাকবে তা চিহ্নিত করা আছে। এই গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই মহাসড়কে মেশিনও রয়েছে। কোনো যানবাহন তা নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলাচল করলেই মামলায় পড়ে যাবে। হাইওয়ে পুলিশের সেই যন্ত্র ও প্রযুক্তি এই সড়কে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু, ঈদের কারণে হয়তো তার ব্যবহার হচ্ছে না। তবে ঈদের পরেই এই গতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার জানান, এই মহাসড়কটিতে লোকাল বাসের জন্য প্রয়োজন ‘বাস বে’। পৃথিবীর উন্নত সব দেশের দ্রুতগতির রাস্তার প্রয়োজনীয় স্থানে ‘বাস বে’ রয়েছে। অর্থাৎ বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য মূল রাস্তার পাশে বাড়তি রাস্তা। পকেট আকৃতির বাড়তি এই সড়কে বাস থামানো হলে মূল সড়কের কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। কিন্তু, মহাসড়কগুলোতে ‘বাস বে’ নেই। তাই লোকাল রুটে চলাচলকারী বাসগুলো ব্যস্ততম এবং দ্রুতগতির মূল সড়কের মধ্যে একপাশ দখল করে যাত্রী তোলা বা নামানো হয়। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago