পশ্চিমবঙ্গে মুখোমুখি তৃণমূল-বিজেপি

নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক হুমকি, পাল্টা-হুমকিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী বিজেপি।
trinamool and bjp
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক হুমকি, পাল্টা-হুমকিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী বিজেপি।

সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে ভোটের রায়ের দুটি শিবিরকে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছেন রাজ্যের সাড়ে ছয় কোটি ভোটার।

একক শক্তিতে বলিয়ান তৃণমূলের শক্তি খর্ব হওয়ায় এবং দ্বিতীয় শক্তিধর বিজেপি শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া দুটো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা মুখোমুখি হুমকি, পাল্টা-হুমকি দিচ্ছেন।

আর এই মুখোমুখি হওয়ার প্রধান কারণ ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান। বিজেপি বলছে- এটি সব হিন্দুরাই দিতে পারেন। আর তৃণমূলের দাবি, বিজেপির রাজনৈতিক স্লোগান এটি।

তৃণমূল ইতিমধ্যেই এই স্লোগানের বিরুদ্ধ ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের।

বিজেপি এবার নির্বাচনের রাজ্যের ৪২ আসনের ১৮ আসনের দখল নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারে দুজন প্রতিমন্ত্রী পেয়েছে। জেলাস্তরের বিজেপি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা উচ্ছাসে ভাসছেন।

তৃণমূল ৪২ আসনের পেয়েছে ২২ আসন। ২০১৪ সালের তুলনায় ১২টি আসন কমেছে এবার। বিজেপির উত্থানে বেশ হতাশ মমতার দলের জেলাস্তরের নেতা-কর্মী এবং সর্বপরি সমর্থকরাও।

ঠিক এমনই বাস্তবতায় ফলাফল প্রকাশের পর রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান শুনে যে ভাষায় পথচারী বিজেপি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে গালাগাল করেছেন, সেটি এখন নেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। চর্চিত সেই ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিকভাবেও।

মুখ্যমন্ত্রীর এমন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সদ্য যোগ দেওয়া বিজেপি নেত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “দেখুন রাজ্যের একজন মুখ্যমন্ত্রী তাকে দেখে কে কি বললো সেটি শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ি থেকে বাইরে নেমে বাচ্চা ছেলেদের ধরতে চলে গেলেন। কী ভাষায় তাদের গালমন্দ করলেন, এটি ভাবতে আমি মহিলা হিসেবেও লজ্জিত বোধ করছি।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যারা আছেন, তারা আশা করি মুখ্যমন্ত্রীকে এ রকম আচরণ না করার অনুরোধ জানাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রায়গঞ্জ থেকে নির্বাচিত এই সাংসদ-প্রতিমন্ত্রী।

এদিকে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলায় দশজন গ্রেফতারের ঘটনায় গতকাল (১ জুন) দিনভর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে তৃণমূলের তিনজন মন্ত্রী দলীয় বৈঠকে যোগ দেওয়ার সময় একইভাবে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বিজেপি সাংসদের অনুগামীরা। আর সেটা নিয়েও সেখানে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপরই রাতে থানা ঘেড়াও করেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুমিক দিয়ে বলেন, “দেখুন আপনি এখন ‘জয় শ্রী রাম’ বলায় নিরীহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। আপনি উস্কানি দিয়েছেন, তাই পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে। ব্যারাকপুরকে নন্দীগ্রাম তৈরি করবেন না।”

বিজেপি নেতার এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করার পরই ‍মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেতা তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “মাত্র কয়েকটা আসন জিতেই এই অবস্থা শুরু করেছে বিজেপি। আমাদের হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। আমরা যদি মাঠে নামি তবে ওরা (বিজেপি) পালানোর সুযোগ পাবে না।”

উল্লেখ্য, ফলাফল প্রকাশের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত শুধু ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান ইস্যু নিয়ে জেলায় জেলায় একাধিক সংঘর্ষ, হামলা ও খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে কলকাতার গণমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে।

এছাড়াও, সম্প্রতি এক জনসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন যে দেশে নির্বাচন চলাকালে সহিংসতায় শুধু মাত্র উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের ৪০০ মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেসময় নির্বাচন কমিশনের হাতে ক্ষমতা ছিলো বলে উল্লেখ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago