আফগানিস্তান ও বৃষ্টি বাধা পেরিয়ে লঙ্কানদের জয়

আগে ব্যাট করে সর্বসাকুল্যে শ্রীলঙ্কা করেছিল ২০১ রান। কিন্তু ডার্ক লুইস ম্যাথডের অদ্ভুত ফাঁদে পড়ে আফগানিস্তানের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ১৮৭ রানের। বৃষ্টিতে তাই বিপদেই পড়েছিল লঙ্কানরা। তার উপর প্রতিপক্ষের ভালো সূচনা। সেখান থেকে দুর্দান্ত বোলিং করে ম্যাচ বের করে এনেছেন লঙ্কান বোলাররা। আর এর নেতৃত্ব দিয়েছেন নুয়ান প্রদিপ। ফলে ৩৪ রানে ম্যাচ জিতে নেয় চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।
তবে শ্রীলঙ্কা যে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে তার মূলনায়ক ছিলেন কুশল পেরেরা। এক প্রান্তে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন ওপেনার। দলের বাকী সব ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে তিনিই ছিলেন ব্যতিক্রম।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা বেশ ভালোই করেছিল আফগানিস্তান। এক প্রান্তে হজরতউল্লাহ জাজাই ছিলেন বেশ মারমুখী। ৩৪ রানের ওপেনিং জুটি উপহার দেন তারা। তাতে বেশ ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছিল লঙ্কানদের। তখন মোহাম্মদ শাহজাদকে অধিনায়ক কারুনারাত্নের ক্যাচ বানান লাসিথ মালিঙ্গা। আর উইকেট পেয়ে যেন শ্রীলঙ্কানরা জেগে ওঠে। নুয়ান প্রদিপ, ইশুরু উদানা, থিসারা পেরেরা সবাই দারুণ বোলিং করতে থাকেন। ফলে ২৩ রানের ব্যবধানে ৫টি উইকেট তুলে নেয় দলটি।
আফগানরা তখন একশ রানের অনেক আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায়। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান নজিবুল্লাহ জাদরান। এ দুই ব্যাটসম্যান স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৬৪ রান। আফগানও যেন প্রাণ ফিরে পায়। তখন রীতিমতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন প্রদিপ। গুলবাদিনকে আউট করে জুটি তো ভাঙেনই, সঙ্গে রশিদ খানের উইকেটটিও তুলে নেন। তাতে জয়ের ভিত পেয়ে যায় লঙ্কানরা।
এরপর লঙ্কানদের জয়ের আশা টিকিয়ে রেখেছিলেন নজিবুল্লাহ। কিন্তু খুব বেশি ভোগাতে পারেননি তিনি। লঙ্কান অধিনায়ক কারুনারাত্নের তৎপর ফিল্ডিংয়ে তাকে রানআউটে কাটা পড়েন এ আফগান। ততক্ষণে জয় উৎসব শুরু হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার। হামিদ হাসানকে বোল্ড করে তা নিশ্চিত করেন মালিঙ্গা।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন নজিবুল্লাহ। ৫৬ বলে ৬টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। জাজাইয়ের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান। এছাড়া অধিনায়ক গুলবাদিন করেন ২৩ রান। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ৩১ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন নুয়ান প্রদিপ। ৩৯ রানের বিনিওয়ে ৩টি উইকেট নেন মালিঙ্গা।
এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাট করতে থাকেন দুই ওপেনার কুশল পেরেরা ও অধিনায়ক দিমুথ কারুনারাত্নে। বড় কোনো ঝুঁকি না নিয়ে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাট করে চলেন এ দুই ব্যাটসম্যান। সিঙ্গেলসের উপর খেলে মাঝে মধ্যেই মারছিলেন বাউন্ডারি। ফলে প্রথম পাওয়ার প্লেতে রান চলে আসে বিনা উইকেটে ৭৯।
লঙ্কানদের ধারাবাহিকতা থামিয়েছেন মোহাম্মদ নবি। নিজের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই লঙ্কান অধিনায়ককে ফেরান তিনি। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে লাহিরু থিরিমান্নেকে নিয়ে দলের হাল ধরেন কুশল পেরেরা। গড়েন ৫২ রানের দারুণ এক জুটি। এ জুটিও ভাঙেন নবি। থিরিমান্নেকে বোল্ড করেন তিনি। কিন্তু এরপর যা করলেন নবি, তা দারুণ চমৎকারই বটে। শ্রীলঙ্কার আরেক সেরা ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিসকে তো আউট করেনই, ফিরিয়ে দেন সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজকে। দুজনকেই স্লিপে রহমত শাহর তালুবন্দি করান নবি। লঙ্কানরা ২ রানে হারায় ৩ উইকেট। ১ উইকেটে ১৪৪ রান তোলা দলটি পরিণত হয় ৪ উইকেটে ১৪৬ রানে।
নবির দেখানো পথে যেন আগ্রাসী হয়ে যান দলের বাকি সবাই-ই। পরের ওভারে আঘাত হানেন পেসার হামিদ হাসান। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে খালি হাতে ফেরান তিনি।
তবে লঙ্কানরা সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খায় এর দুই ওভার পরে। এবার রানআউট হন থিসারা পেরেরা। ছন্দে থাকা এ ব্যাটসম্যানকে হারানোয় লেজ বেড়িয়ে আসে দলটির। তবে এক প্রান্তে বুক চিতিয়ে লড়াই করে যান কুশল পেরেরা। লঙ্কানদের বড় ইনিংসের স্বপ্ন ধরে রেখে দারুণ ব্যাটিং করে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন তিনি। কিন্তু রশিদ খানের বলে হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। তার কুইকারে রিভার্স সুইপ করতে গেলে মোহাম্মদ শাহজাদের তালুবন্দি হন কুশল পেরেরা।
ফলে বড় বিপদে পড়ে যায় দলটি। এরপর নামে বৃষ্টি। প্রায় তিন ঘণ্টা বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ থাকার পর ফের শুরু হয় খেলা। তবে কমে আসে ম্যাচের পরিধি। ৪১ ওভার করে খেলা নির্ধারণ করা হয়। ৮ উইকেট হারিয়ে ১৮২ রান করা দলটি পড়ে সুরাঙ্গা লাকমলের ব্যাটে দুইশ রানের কোটা পার করে।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৮ রানের ইনিংস খেলেন কুশল পেরেরা। ৮১ বলে ৮টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। এছাড়া অধিনায়ক কারুনারাত্নে করেন ৩০ রান। থিরিমান্নে করেন ২৫ রান। আফগানিস্তানের পক্ষে ৯ ওভারে ৩০ রান খরচ করে ৪টি উইকেট নিয়েছেন নবি। ২টি করে উইকেট নেন রশিদ খান ও দৌলত জাদরান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৩৬.৫ ওভারে ২০১ (কারুনারাত্নে ৩০, কুশল পেরেরা ৭৮, থিরিমান্নে ২৫, মুশল মেন্ডিস ২, ম্যাথিউজ ০, ধনাঞ্জয়া ০, থিসারা পেরেরা ২, উদানা ১০, লাকমল ১৫*, মালিঙ্গা ৪, প্রদিপ ০; দৌলত ২/৩৪, হামিদ ১/৫৩, মুজিব ০/১৯, নবি ৪/৩০, গুলবাদিন ০/৩৮, রশিদ ২/১৭)।
আফগানিস্তান: ৩২.৪ ওভারে ১৫২ (শাহজাদ ৭, জাজাই ৩০, রহমত ২, হাশমত ২, নবি ১১, গুলবাদিন ২৩, নজিবুল্লাহ ৪৩, রশিদ ২, দৌলত ৬, হামিদ ৬, মুজিব ১; মালিঙ্গা ৩/৩৯, লাকমল ০/২৭, উদানা ১/২৮, প্রদিপ ৪/৩১, থিসারা পেরেরা ১/১৯, ধনাঞ্জয়া ০/৭)।
ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ৩৪ রানে জয়ী (ডিএল ম্যাথড)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নুয়ান প্রদিপ (শ্রীলঙ্কা)।
Comments