সেই দুঃসহ স্মৃতিই তামিম-মুশফিকদের আরও ঘনিষ্ঠ করেছে

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনারই জের। লন্ডনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ঈদের নামাজ কোথায় পড়বেন, তা নিয়ে কত্ত লুকোচুরি! আগের দিন টিম ম্যানেজমেন্টও জানালো, তারাও নাকি জানে না আয়োজকরা কোথায় ব্যবস্থা করেছে। পরে স্থান জানা গেলেও গণমাধ্যমের আর ছবি নেওয়ার উপায় ছিল না। আগ্রহ নিয়ে ক্রিকেটারদের মোলাকাতের অপেক্ষায় থাকা প্রবাসী ভক্তদের কথা তো বাদই গেল।
BD Cricketer Eid Day
লন্ডনে ঈদের দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, ছবি: সংগ্রহ

ক্রাইস্টচার্চের ঘটনারই জের। লন্ডনে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ঈদের নামাজ কোথায় পড়বেন, তা নিয়ে কত্ত লুকোচুরি! আগের দিন টিম ম্যানেজমেন্টও জানালো, তারাও নাকি জানে না আয়োজকরা কোথায় ব্যবস্থা করেছে। পরে স্থান জানা গেলেও গণমাধ্যমের আর ছবি নেওয়ার উপায় ছিল না। আগ্রহ নিয়ে ক্রিকেটারদের মোলাকাতের অপেক্ষায় থাকা প্রবাসী ভক্তদের কথা তো বাদই গেল।

গত মার্চ মাসে ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে ভয়ংকর হামলার মুখে পড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের চলাচলের রূপরেখা যে বদলে গেছে, লন্ডনে ঈদের দিনে মাশরাফি মর্তুজাদের নিয়ে নিরাপত্তার কড়াকড়িই সেই সাক্ষ্য দিল। তবে কোচ স্টিভ রোডস নিরাপত্তার এসব বাড়াবাড়ির মধ্যেই দিলেন নতুন এক খবর। একসঙ্গে বীভৎস পরিস্থিতিতে পড়ার পর থেকে নাকি ক্রিকেটাররা একে অপরের আরও কাছে চলে এসেছেন।

একসঙ্গে আনন্দ করলে হৈ হুল্লোড়ের চাপে সব স্মৃতি উবে যায়। দুঃখ তেমন নয়। যন্ত্রণার সময়, সংকটের সময়গুলোতে যারা একসঙ্গে হাতে হাত রেখে দাঁড়ান তাদের মনে ছাপ থেকে যায় গভীর। সংকট মানুষকে তাই কাছে নিয়ে আসে বেশি। তেমনটাই যেন হয়েছে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের।

মঙ্গলবার ঈদের দিন লন্ডনের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়েছেন ক্রিকেটাররা। নামাজের আগ পর্যন্ত সেই স্থানটা রাখা হয় গোপন। নামাজ পড়ে তারা হোটেলে ফেরার মুখেও ছবি তুলতে দেননি নিরাপত্তাকর্মীরা। খেলার মধ্যে ঈদ পড়ায় যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনের পাঠানো দেশি খাবার খেয়েই সবাইকে যেতে হয়েছে মাঠে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নামার আগের দিন প্রস্তুতি তো সারতে হবে। তবে বৃষ্টির কারণে সেই প্রস্তুতিও তেমন করে হয়নি। তার  আগেই গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়েছিলেন প্রধান কোচ স্টিভ রোডস।

এই ইংলিশ কোচ দায়িত্বের কম সময়েই ক্রিকেটারদের মনের গতিপ্রকৃতির সঙ্গেও যেন জড়িয়ে গেছেন। ক্রাইস্টচার্চের ভয়াবহ ট্রমা এবং তারপর সবার ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা তাকেও নাকি নাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতে মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। রোডসের দেখায় সিনিয়র-জুনিয়র সবার মধ্যেই এই ঘটনার পর ভ্রাতৃত্ব-বোধ বেড়ে গেছে আরও,  'যেভাবে খেলোয়াড়রা পুরো পরিস্থিতিটা সামলেছে তাদের শ্রদ্ধা করতেই হয়।  যেভাবে তারা সেই ট্রমা কাটিয়ে উঠল। রোজা শেষে আজ এখানে ঈদ উদযাপন করছে। কয়েকজনের জন্য এটা কঠিন ছিল। (আবার ফুরফুরে থাকা)। এটা হয়েছে কারণ ক্রাইস্টচার্চের ওই ঘটনার পর সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব-বোধ বেড়েছে।’

‘তারা সেদিন আক্রান্ত অন্য মুসলিমদের যন্ত্রণা অনুভব করতে চেয়েছে।  কিন্তু তারা যে অভিজ্ঞতার মধ্য গিয়েছে, যারা সেই গাড়িতে একসঙ্গে ছিল এবং আমি মনে করি এটি কোনভাবে তাদের নাড়িয়ে দিয়েছে এবং একে অন্যের কাছে ভরসা পেয়েছে।  তারা একে অপরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। যেভাবে একজন আরেকজনকে ওই ট্রমা থেকে বের করে এনেছে সেজন্য আমার অনেক শ্রদ্ধা আছে তাদের জন্য।’

সেই দুঃসহ স্মৃতির নেতিবাচক প্রভাব আর কারো মনে নেই। বৈশ্বিক রাজনীতির ফেরে পড়ে ঘুরপাক খাওয়া পৃথিবী অনেক মানুষেরই জীবন এলোমেলো করে দিয়েছে। তবু মানুষ আনন্দ বাঁচতে চায় বলেই এতসব বীভৎসতা দেখেও ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজে নেয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও খেলার মধ্যে তাদের জীবন যাপনের ধরণ মানিয়ে নিয়েছে। ক্রিকেটারদের মনের এই জোরকে ভীষণ শ্রদ্ধা বাংলাদেশের কোচের,  ‘এই মুহূর্তে সবাই বেশ ফুরফুরে, প্রাণবন্ত। এখন ক্রাইস্টচার্চের সেই দিনের কথা ভাবলে মনে হয় কীভাবে তারা উৎরে এল! আমি মনে করি তারা কি করতে চায় তা তারা জানত এবং যেমনটা আগে বলেছিলাম, এই কারণে তাদের জন্য আমিও কতটা সম্মানিত বোধ করছি।’

Comments

The Daily Star  | English

Protesters stage sit-in near Bangabhaban demanding president's resignation

They want Shahabuddin to step down because of his contradictory remarks about Hasina's resignation

41m ago