শর্ট বল, গতি আর মুভমেন্টেই কাবু
টসের সময় থেকেই আকাশ মেঘলা। আকাশের মুখ দেখে টস জিতে বিনাবাক্যে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসন। তাদের কাজের কাজটা হয়েছে বোধহয় তখনই। প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশের জুতসই শুরুর পরও মাঝের ওভারে আর তালে থাকেনি। বল করতে এসে গতিতে কাঁপিয়ে দেন লুকি ফার্গুসেন। ট্রেন্ট বোল্ট ছিলেন আঁটসাঁটও। একমাত্র স্পিনার মিচেল স্টান্টনারও জায়গা দেননি, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হাঁসফাঁস করিয়ে থামিয়ে রেখেছেন দৌড়। আর কিউইদের ফিল্ডিংয় তো চোখ ধাঁধানো। বাংলাদেশ আসলে কত রান কম করেছে তা নিয়েই কেবল তর্কটা থাকল।
ওভালে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ ফের আগে ব্যাটিং পেয়ে আবার আর উড়েনি বাংলাদেশের ইনিংস। ধুঁকেধুঁকে ইনিংস থেমেছে ২৪৪ রানে। আগের ম্যাচের চেয়ে এটি ছিল ভিন্ন উইকেট, পেসারদের সুবিধা ছিল বেশি। তবু নির্দ্বিধায় বলা যায় অন্তত ৪০ রান কম করেছে মাশরাফি মর্তুজার দল।
ম্যাট হেনরি ৪৭ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। কিন্তু বাংলাদেশের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন ফার্গুসেনই। প্রথম স্পেলে চার ওভার বল করে এক্সপ্রেস গতির এই পেসার দেন মাত্র ৭ রান। নিয়ে নেন তামিম ইকবালের মহা-গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ওই সময় জায়গায় বল ফেলে তিনি যে গতিতে তুলেছেন তাতে কাবু হয়ে যায় বাংলাদেশ। তার আগ্রাসী গতির জবাবে পালটা আক্রমণ আনা যায়নি। বড় রান করার বাংলাদেশের প্লান-এ তখনই হয়ত বদলে যায়।
ঠিক কত রানের দিকে ছোটা উচিত। ওই সময় বাংলাদেশের শরীরী ভাষা দেখে ঠিক বোঝার উপায় ছিল না। একটা সময় যখন জায়গা মিলছে না, সিঙ্গেল নেওয়া ছিল ভীষণ দরকারি। কিন্তু বাংলাদেশ ওই জায়গায় মার খেয়েছে প্রচণ্ড। পুরো ইনিংসে ডট বল হয়েছে ১৫৭টি। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি বল থেকে কোন রান আনতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা।
একটা সময় তবু সাকিব আল হাসান ছিলেন বলে বড় কিছুর আশা উঁকি দিচ্ছিল। চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তায় ফার্গুসেনদের সামলে থিতু হয়েছিলেন তিনি। প্রথম ৩৩ বলে ১৩ করে গুটিয়ে থাকা সাকিব খোলাস ছাড়েন সুযোগ পেয়েই। রান নিতে গিয়ে ডাইভ দিয়ে কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছিলেন। কিছুক্ষণ শুশ্রুষা নেওয়ার পর উঠে দাঁড়িয়ে জিমি নিশামের পরের টানা তিন বলে পয়েন্ট দিয়ে তিন চার। দ্রুতই বাড়তে থাকে তার রান, প্রাণ ফিরে যায় ইনিংসও। লুকি ফার্গুসেনদের গোলায় নাজেহাল বাংলাদেশের ইনিংসে ফের আশার জয়গান। জড়তা ভেঙে ছুটে চলার আয়োজন।
সাকিব ফিফটি পেরিয়ে এগুচ্ছিলেন আরও বড় কিছুর দিকে। ৩৫ বলে ১৯ করে ভুল বোঝাবুঝিতে মুশফিকুর রহিমের রান আউট হওয়াটাও পুষিয়ে দেওয়ার দায় ছিল তার কাধে। কিন্তু নিজের দুইশোতম ওয়ানডেতে ৪৪তম ফিফটি করে খুব বেশি আর আগাতে পারলেন না সাকিব। ৬৮ বলে ৬৪ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তার ইনিংস থামার পরই বাংলাদেশের বড় সংগ্রহের আশা নিভে যায় অনেকটাই।
মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন এদিন আর ঝড় তুলতে পারেননি। অন্তত ২৭০ পর্যন্ত গেলেও কিছুটা হয়ত লড়াই করা যেত। তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ (তামিম ২৪, সৌম্য ২৫, সাকিব ৬৪, মুশফিক ১৯, মিঠুন ২৬, মাহমুদউল্লাহ ২০, মোসাদ্দেক ১১, সাইফুদ্দিন ২৯ , মিরাজ ৭, মাশরাফি ১, মোস্তাফিজ ০* ; হেনরি ৪/৪৮, বোল্ট ২/৪৪, ফার্গুসেন ১/৪০, গ্র্যান্ডহোম ১/৩৯, নিশাম ০/২৪, স্যান্টনার ১/৪১)
Comments