আক্ষেপ আর তালগোল পাকানোর ম্যাচ

Shakib Al Hasan
ছবি: রয়টার্স

লুকি ফার্গুসেনের শর্ট বলে তামিম ইকবালের কুপোকাত হওয়া, থিতু হয়ে মুশফিকুর রহিমের ভুলবোঝাবুঝিতে রান আউট, দারুণ খেলতে থাকা সাকিবের হুট করে বিদায়। পরে ফিল্ডিংয়ে মুশফিকের অবিশ্বাস্য ভুলে কেন উইলিয়ামসনকে রান আউট করতে না পারা। নিউজিল্যান্ডের ৮ উইকেট ফেলে দিয়েও যখন উত্তেজনা চূড়ায় তুলে হারল বাংলাদেশ। পেছনে পড়ে থাকা আলাদা আলাদা সময়ের এসব দৃশ্য একসঙ্গে জড়ো হয়ে ভক্তদের মনে নিশ্চিতভাবেই বাড়বে আফসোস। রান তাড়ায় কিউইরা প্যানিকড করায় বাংলাদেশ হারতে হারতে জিতেই যেত, কিন্তু এতগুলো ভুলের পর আর সেটা কি করে হয়।

বুধবার ওভালে লাল-সবুজে ভরপুর গ্যালারি আক্ষেপে পুড়তে পুড়তে মাঠ ছেড়েছে। ২৪৪ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে ১৭ বল আগে ২ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

রস টেইলরের ৮২, উইলিয়ামসনের ৪০। বাকিদের কেউ ২৫ এর উপরে যেতে পারেননি। রান তাড়ায় একটা পর্যায়ে সহজ জেতার পথ থেকে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তালগোল পাকাল নিউজিল্যান্ড। তাতে কেবল বাংলাদেশের আক্ষেপ বাড়ার আয়োজনই হয়েছে। সমর্থকরা মাত করলেন সারাক্ষণ, জাগিয়ে তুললেন। সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর মোসাদ্দেক হোসেন সেরাটা ঢেলে দিলেন, মেহেদী হাসান মিরাজ থাকলেন আগের মতই দারুণ। সাইফুদ্দিন শেষেও চেপে ধরেছিলেন। কিন্তু আফসোস বাড়া ছাড়া আর কিছু লাভ হয়নি। 

আগের দিন উইকেট দেখেই বোধহয় ভয়টা ঢুকে গিয়েছিল। নতুন উইকেটে খেলা হবে। সেই উইকেটে আবার বেশ ঘাসও আছে। ট্রেন্ট বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লুকি ফার্গুসেনদের সামলাতে এমন উইকেট কখনই বাংলাদেশের প্রত্যাশিত নয়। টসটাও এল না পক্ষে। মেঘলা আকাশে নামতে হলো ফার্গুসেনদের গোলার সামনে।

কিন্তু প্রথম ১০ ওভার বাংলাদেশ খারাপ খেলেনি। শুরুটা দেখেশুনে হওয়া দরকার। তাই হয়েছিল। এরমধ্যে ক্ষতিটা যা হলো সৌম্য সরকারের ২৫ বলে ২৫ করে আউট হয়ে যাওয়ায়। সৌম্য ফেরার পর  ফার্গুসেন বল হাতে নিলেন ১২তম ওভারে। গতি, মুভমেন্ট আর শর্ট বলে কাঁপিয়ে দিলেন প্রথম স্পেল। তামিম ইকবাল তাতে কাবু হয়ে দৌড় থামালেন। ওই চার ওভারের স্পেলে মাত্র ৭ রান দিয়ে তামিমকে ফিরিয়ে যে ভীতি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন কিউই স্পিডস্টার। তাতেই কুঁকড়ে গেল বাংলাদেশ। ফার্গুসেনের গোলার জবাবে দরকার ছিল পালটা আগ্রাসনের। সেটা আসেনি মাঝের ওভারে।

সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম তবু রয়ে সয়ে খেলে থিতু হয়ে পেটানোর চিন্তা নিয়ে থাকবেন। ৩৫ বলে ১৯ করা মুশফিকের আকস্মিক রান আউট সেই পরিকল্পনাতেও আনল বদল। সাকিব ছিলেন বলে আশাও ছিল। প্রথম ৩৩ বলে ১৩। পরে জিমি নিশামকে টানা তিন চার মেরে আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠেছিলেন, রানও বাড়ছিল তরতরিয়ে। ফিরছিল চ্যালেঞ্জ দেওয়ার আভাস। কিন্তু নিজের দুইশোতম ম্যাচে ৪৪তম ফিফটি করে সাকিব আর বেশি আগাতে পারেননি। ৬৮ বলে ৬৪ করে তিনি থামলেন, থামল যেন বাংলাদেশের সব রকমের লড়াই।

মিচেল স্ট্যান্টনার চেপে ধরলেন। হাঁসফাঁস করতে করতে ডট বল বাড়তে থাকল। ম্যাট হেনরি সেই সুযোগে একের পর এক উইকেট ছাঁটলেন। তিনশো বলের খেলায় ১৫৭টি ডটবল খেলল বাংলাদেশ। যেতে পারল আড়াইশ পর্যন্তও।

এরপরে বোলাররা যে লড়াই করেছেন সেই তো অনেক। ২৪৫ রানের মামুলি লক্ষ্য দিয়ে জেতার আশা অতি বাড়াবাড়ি। মার্টিন গাপটিলের আগ্রাসী শুরুর পর সেই বাড়াবাড়ি আশাই খানিকক্ষণের মধ্যে জেগে উঠেছিল।  সাকিব বল হাতে নিয়েই গাপটিল থামালেন, কলিন মনরোও সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায়। বাংলাদেশের পক্ষে কলরব বাড়ছিল। সেটা যখন চূড়ায় রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা তখন অবিশ্বাস্য ভুল করে বসলেন মুশফিক। মিড অন থেকে তামিমের সরাসরি থ্রো করে কেন উইলিয়ামসকে রান আউট করেই দিচ্ছিলেন। মুশফিক বল স্টাম্পে লাগার আগে অযথাই ধরতে গিয়ে হাত দিয়ে আগেই স্টাম্প ভেঙে ফেললেন।

তখন ৮ রানে থাকা উইলিয়ামস পরে ৪০ করে আউট হলেন। ততক্ষণে ম্যাচের গতিপথ হেলে গেছে কিউইদের দিকে। পরে সেই অবস্থা থেকে বারকয়েক রঙ বদলেছে ম্যাচের।  মিরাজ পর পর উইকেট নিয়ে ফিরিয়েছেন। সাইফুদ্দিন, মোসাদ্দেকরা জমিয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘আর ১০ রান বেশি হলে’, ‘আর ২০ রান বেশি হলে...’ এমন হতাশাই জমা হয়েছে। তবে অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা আবার অতটা হতাশ নন। দক্ষিন আফ্রিকাকে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন লড়াই করায় পরের ম্যাচগুলোতে তেতে উঠার বারুদ পাচ্ছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

2h ago