দুর্গম চরের বাসিন্দাদের জন্য ভাসমান হাসপাতাল

Friendship Hospital
গাইবান্ধায় এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ছবি: মো. ফয়সাল আহাম্মেদ

গাইবান্ধার দুর্গম এক চরের স্কুলশিক্ষক বেলাল হোসেন (৫০)। গত এক বছর ধরে বুকের বাম পাশের ব্যথায় ভুগছেন। তার অবস্থান থেকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতালটি বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে রয়েছে এবং সেখানে যেতে দিনের অর্ধেকটাই পেরিয়ে যায়। তাই ব্যথা সারাতে তার আর হাসপাতালে যাওয়া হয় না।

সম্প্রতি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তিনি ভাসমান এক হাসপাতালের খোঁজ পান, যেটি তার মতো দুর্গম চরের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবার বন্দোবস্ত করে আসছে।

এর ফলে, বিনা দ্বিধায় তিনি সেই হাসপাতালে যান এবং তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করেন। পরীক্ষায় তার হৃদরোগ ধরা পড়ে।

এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল (এএফএইচ) নামে স্থানীয় এক বেসরকারি সংস্থা ২০০৮ সালে এমিরেটস এয়ারলাইনস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় একটি ভাসমান জাহাজের ভেতর আধুনিক এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। সেই থেকে হাসপাতালটি চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে।

একই হাসপাতালে নিজের গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা নিয়ে গিয়েছিলেন কাইজারচরের বাসিন্দা রেখা বেগম (৩৫)। মেডিকেল সহকারীরা তাকে একটি মেডিকেল কার্ড দিয়ে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সেবা পাবেন।

এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের এক সহকারী অজিত ঘরামি জানান, কয়েক দিনের মধ্যে ফের সেবা নিতে আসতে হবে বিধায় এই দুজনকে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দল তিন থেকে চারদিন অন্তর অন্তর এসে তাদের সেবা দিয়ে যাবেন।

ভাসমান এই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন স্বনামধন্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা, যারা নির্দিষ্ট দিনে এসে জটিল অবস্থায় থাকা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যান। এছাড়া অন্যান্য রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ সরবরাহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেই করা হয়।

এই হাসপাতালের উদ্যোগে প্রায় ৪০ জন রোগীর চোখে অস্ত্রোপচারের জন্য ক্যাম্প করতেও দেখা গেছে। যেখানে ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা এসে সেসব রোগীদের চোখের ছানি অপসারণ করে দিয়েছেন।

সাময়িকভাবে স্থাপিত এমন একটি মেডিকেল ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায় যে, সব বয়সের প্রায় শতাধিক রোগী সেখানে রয়েছেন। কেউ চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন, কেউ অপেক্ষায় করছেন।

এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ প্রশাসক মো. ইউসুফ মিয়া বলেন, “আমরা গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম মিলিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার এলাকায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিচ্ছি। এই অঞ্চলে নদী তীরবর্তী প্রায় ৩৫টি পয়েন্টে আমাদের ভাসমান জাহাজ সারাবছর প্রদক্ষিণ করে।”

হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ তৌফিকুর রহমান বলেন, “এবার আমরা হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বেশ কয়েকজন রোগী দাবি করেছেন, ভাসমান এই হাসপাতালে তারা বিনামূল্যে যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন, তা দেশের অন্য কোথাও টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাবে কী-না সন্দেহ রয়েছে।

স্থানীয় দোকানদার সোনা উদ্দিন জানান, আশপাশে হাসপাতালের অভাব থাকায় দুর্গম চরের বাসিন্দাদের বহু রোগে ভুগতে হয়। তাছাড়া, দরিদ্রতার দরুন তারা চিকিৎসার প্রয়োজনে দূরে কোথাও যেতেও পারেন না।

“তবে, ভাসমান এই জাহাজ আমাদের জন্য আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে”, বলেন তিনি।

এই হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ইকবাল আহমেদ খান বলেন, “এমিরেটস ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা ২৪ ঘণ্টা সেবা দেই এবং আমাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই।”

কেবল হাসপাতালই নয়, ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ তাদের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের মাধ্যমে চরাঞ্চলের হতদরিদ্র শিশুদেরকে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাও প্রদান করছে।

হাসপাতালের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ তৌফিকুর রহমান বলেন, “দরিদ্রতা ও শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে চরের শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। এ ফলে আমরা তাদের বিনা পয়সায় ভালোমানের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

“এজন্য প্রথমে ঢাকার প্রখ্যাত শিক্ষকদের কাছ থেকে পাঠ রেকর্ড করে আনা হয়। তারপর সেসব রেকর্ড ভিডিও প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাসে দেখানো হয়,” যোগ করেন তিনি।

বর্তমানে দেশজুড়ে ৭৯টি স্কুলের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে এ পদ্ধতিতে পাঠদান করাচ্ছেন তারা।

মো. ফয়সাল আহাম্মেদ, ট্রেইনি রিপোর্টার, দ্য ডেইলি স্টার

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

7h ago