কেবল সাকিবেই প্রাপ্তি যা কিছু
এক ইনিংস পরই ম্যাচের ফায়সালা অনেকটা পরিষ্কার। এই ম্যাচে তাই দল হিসেবে তেমন কিছু পাওয়ার পরিস্থিতি ছিল না বাংলাদেশের। অন্তত ক্রিকেটীয় বাস্তবতা তাই বলে। তবে টুর্নামেন্টের পরের ম্যাচগুলোর জ্বালানি যোগানে দরকার ছিল কিছু একটা করার। সেই কিছু একটা অবশেষে এনে দিয়েছেন তিনি, যার কাছে প্রত্যাশাও আসলে সবচেয়ে বেশি। ইংল্যান্ডের বিশাল রানের পিছু ছুটে বাংলাদেশের হার বড় ব্যবধানেই। তবে দারুণ সেঞ্চুরিতে একা লড়াই করে সাকিব অন্তত একটা ইতিবাচক বার্তা পাইয়ে দিলেন দলকে।
কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে নিজেদের পয়া ভেন্যুর তকমা ভেঙে বাংলাদেশ হেরেছে ১০৬ রানে। ইংলিশদের আগে ব্যাট করতে দিয়ে ৩৮৬ রান সহ্য করার পর নিজেরা তুলতে পেরেছে ২৮০ রান।
এমন ম্যাচ একপেশে ম্যাচে ক্ষতির দিক হলো কিছু একটা ইতিবাচক বার্তা না পেলে এগুনোর পথ দুর্গম হয়ে যায়। বাংলাদেশ অন্তত সান্ত্বনা পেতে পেরে সেই একটা কিছু ইতিবাচক অন্তত এসেছে। এনেছেন সাকিবই। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতার পর ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছিলেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দলের সব কিছুতেই ভীষণ সম্পৃক্ত সাকিব। তার নিবেদন, বাড়তি খাটুনি আর শরীরী ভাষার ক্ষিদে দেখেই বড় কিছুর আভাস পাচ্ছিলেন মাহমুদ। তার আশা ছিল টুর্নামেন্টে সেরা হতেও পারেন ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার। সে পথেই তিনি আছেন, এ কথা পরিসংখ্যানই বলছে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ২৬০ রান সাকিবের, বল হাতেও আছে তিন উইকেট।
দলের হারার দিনে সাকিব বন্দনা হয়ত সবার ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু বোলিং-ফিল্ডিং দিয়ে খুইয়ে আসা ম্যাচে ব্যাটিংয়েও একদম কিছু না হলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত দল। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ১০৬ রানের জুটিতে অন্তত সেটা ঠেকানো গেছে। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করে ব্যক্তিগত অর্জন এসেছে সাকিবের। টুর্নামেন্টের পরের ধাপের কথা মাথায় নিলে, এই ম্যাচ থেকে তো জেতার আশা নেই। রানরেটটা যেন একদম ডুবে না যায় সেদিকটাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অলআউট হয়ে যাওয়ায় সেই কাজ পুরোপুরি করা গেল না।
আগের দিন অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা বলেছিলেন, আগ্রাসী ইংলিশদের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক কৌশলে নামবেন তারা। ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ আসলে আক্রমণ না রক্ষণ করেছে কিছুই বোধগম্য হয়নি। প্রথম আধঘণ্টা বাদ দিলে এলোমেলো আলগা বোলিং চলেছে পুরো ইনিংস জুড়ে। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিল ফিল্ডিংয়ের দশা। কমপক্ষে ১০-১২ বার ফিল্ডাররা এক সুযোগে বল ধরতে পারেননি। দুই ফিল্ডারের মাঝখান দিয়ে বার কয়েক বেরিয়েছে বাউন্ডারি। কে ডাইভ দিবেন দ্বিধাদ্বন্দ্বের সুরাহা হয়নি বলে। যথেষ্ট ক্ষিপ্রতার ছিল বড়ই অভাব।
সাদামাটা শরীরী ভাষায় ছিল হাল ছেড়ে দেওয়ার আভাস। ইংল্যান্ড এই সুযোগে পিটিয়ে তাই চলে যায় চারশোর কাছাকাছি। জেসন রয় আর জস বাটলার যে তাগদ নিয়ে ব্যাট করেছেন তার জবাব ছিল না বাংলাদেশের। পাহাড় ডিঙানোর সামর্থ্যও আসলে ছিল না।
তবু সাড়ে তিনশোর দিকে ছুটে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের প্রমাণ করতে পারতেন। শুরুতে জোফরা আর্চারের গতিতে বেসামাল হয়ে সৌম্য সরকারের বেল উড়িয়ে বল বাউন্ডারি লাইন পার হলে লাগে বড় ধাক্কা। এসব উইকেটে বড় রান তাড়ায় যিনি আনতে পারতেন মাননসইও শুরু, তিনিই নেই। এরপর থেকেই দায়িত্ব নিয়ে সাকিবের ঝলক শুরু। তবে টানা তৃতীয় ম্যাচে হতাশ করেছেন তামিম ইকবাল। আগের ম্যাচেও শর্ট বলে পুল করতে ব্যর্থ হয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন। এবারও তাই। মার্ক উডের বাউন্সার ডাউন দ্য উইকেটে এসে পুলের মতোন কিছু করতে গেলেন। হলো না কিছুই।
মুশফিকুর রহিম অবশ্য নিজের ছন্দটা দেখিয়ে দিয়ে ফিরেছেন। তবে মোহাম্মদ মিঠুন একাদশে তার জায়গা করেছেন প্রশ্নবিদ্ধ। মাহমুদউল্লাহকে ব্যাট করতে নামার পর বেশখানিক্ষণ মনে হয়েছে জড়োসড়ো। বুঝতে পারছেন না উইকেটের ভাষা। নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচের চাপহীন পরিস্থিতি পরে কিছু রান পেয়েছেন অবশ্য। তাতে হয়ত তিনি নিজেও খুব তৃপ্ত হবেন না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৮৬/৬ (রয় ১৫৩, বেয়ারস্টো ৫১, রুট ২১, বাটলার ৬৪, মরগান ৩৫ , স্টোকস ৬, ওকস ১৮*, প্লাঙ্কেট ২৭*; সাকিব ০/৭১, মাশরাফি ১/৬৮ , সাইফউদ্দিন ২/৭৮, মোস্তাফিজ ১/৭৫, মিরাজ ২/৬৭, মোসাদ্দেক ০/২৪)
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভাড়ে ২৮০ (তামিম ১৯, সৌম্য ২ , সাকিব ১২১, মুশফিক ৪৪, মিঠুন ০, মাহমুদউল্লাহ ২৮, মোসাদ্দেক ২৬, সাইফুদ্দিন ৫, মিরাজ ১২, মাশরাফি ৪*, মোস্তাফিজ ০ , মোস্তাফিজ ; ওকস ০/৬৭, আর্চার ৩/২৯, প্লাঙ্কেট ১/৩৬, ওড ২/৫২, রশিদ ১/৬৪, স্টোকস ৩/২৩ )
ফল: ইংল্যান্ড ১০৬ রানে জয়ী।
Comments