ডিবি বলছে বাচ্চু হত্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, আদালত বলছে হয়নি
ব্লগার শাহজাহান বাচ্চু (৬৫) হত্যার এক বছর আজ। বাচ্চু হত্যা মামলার তিন আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
২০১৮ সালের ১১ জুন মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কাকালদি তিন রাস্তার মোড়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো শাহজাহান বাচ্চুকে। এই মামলার এক আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের পরদিন বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রী আফসানা বেগম বাদি হয়ে সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রথম স্ত্রী লুৎফা আক্তার কানন জানান, যতোটুকু শুনেছি তিনজন আসামি নিহত হওয়ার পর মামলাটি ক্লোজড করে দেওয়া হয়েছে। ১১ জুন এক বছর উপলক্ষে যেখানে হত্যা করা হয়েছিলো, সেখানে নীরবতা ও শোক সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এস এম আলমগির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শাহজাহান বাচ্চু হত্যা মামলায় তিন আসাসি ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। বাকি এক আসামির নাম, পরিচয় কিংবা কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। দুই মাস আগে এই মামলাটির ‘ফাইনাল রিপোর্ট’ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
সিরাজদিখান থানার ওসি (তদন্ত) মো. হেলাল ও শ্রীনগর থানার ওসি ইউনুচ আলি এই মামলার তদন্ত করেছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে মামলাটি ডিবিতে আসে।
আদালত পরিদর্শক হেদায়েত ইসলাম ভূঁইয়া এই প্রতিবেদককে জানান, শাহজাহান বাচ্চু হত্যার ফাইনাল রিপোর্ট কিংবা চার্জশিট কোনোটিই জমা দেওয়া হয়নি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানান, শাহজাহান বাচ্চু হত্যার ঘটনায় তিনজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। আর বাকি একজন পলাতক আছে। দুই মাস আগে মামলাটির চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গেলো বছরের ২৮ জুন এই মামলার প্রধান আসামি আব্দুর রহমান সিরাজদিখান উপজেলার খাসমহল বালুরচর এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তিনি ঢাকা বিভাগের জেএমবির সামরিক কমান্ডার ছিলেন।
একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর জেএমবির বোমা কারিগর শামীম ওরফে কাকা (৪০) ও এখলাস (৩২) শ্রীনগর এলাকায় চেকপোস্টে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একটি দোকানে চা খেয়ে সামনেই আরেকটি দোকানে যাচ্ছিলেন শাহজাহান বাচ্চু। ওই দোকানের সামনেই চারজন দুটি মোটর সাইকেলে হেলমেট পড়ে আসে। আশেপাশের স্থানীয়রা ভিড় করতে থাকলে তাদেরকে হুমকি দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর পিস্তল বের করে শাহজাহান বাচ্চুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাটিতে পরে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। কাছাকাছি থেকে বুকের ডান পাশে তাকে এক রাউন্ড গুলি করা হয়। চারজনের হাতেই পিস্তল ছিলো।
উল্লেখ্য শাহজাহান বাচ্চু বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশাখা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ‘আমাদের বিক্রমপুর’ নামের একটি অনিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত স¤পাদক ছিলেন। শাহজাহান বাচ্চু বিভিন্ন ব্লগ ও ফেসবুক গ্রুপে লেখালেখি করতেন।
নিহত শাহজাহান বাচ্চু সিরাজদিখান উপজেলার পশ্চিম কাকালদি গ্রামের মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে। নিহত বাচ্চুর দুই স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে। প্রথম স্ত্রী লুৎফা আক্তার কাননী নারায়ণগঞ্জে সমাজসেবা অফিসে কর্মরত। তার দুই মেয়ের মধ্যে বিপাশা বিবাহিত ও আরেক মেয়ে দূর্বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী। দ্বিতীয় স্ত্রী আফসানা বেগমের মেয়ে শাম্মী জাহান আঁচল ও ছেলে বিশাল জাহান। আফসানা গ্রামে থাকেন।
Comments