‘মেঘের 'পরে মেঘ জমেছে’

ড্রেসিং রুমের জানালা দিয়ে মুশফিকুর রহিমের বিষণ্ণ চেহারা দেখতে পেয়েই তার নাম ধরে সমর্থকদের চিৎকার। মুখে রাজ্যের অন্ধকার নিয়ে তখন ভাবলেশহীন মুশফিক। বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের সামনে সমর্থকদের ভিড় আর ক্ষণে ক্ষণেই স্লোগান। কোন খেলোয়াড়ের চেহারা অল্প একটু দেখতে পেলেই যেন চার-ছক্কা দেখার উদযাপন তাদের। খেলা শেষে নিজেদের চেহারা দেখিয়ে, হাত নেড়ে কিছুটা শুকনো হাসিতে সান্ত্বনা দিয়েছেন ক্রিকেটাররা।
Mashrafe Mortaza
ফাইল ছবি: বিসিবি

ড্রেসিং রুমের জানালা দিয়ে মুশফিকুর রহিমের বিষণ্ণ চেহারা দেখতে পেয়েই তার নাম ধরে সমর্থকদের চিৎকার। মুখে রাজ্যের অন্ধকার নিয়ে তখন ভাবলেশহীন মুশফিক। বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের সামনে সমর্থকদের ভিড় আর ক্ষণে ক্ষণেই স্লোগান। কোন খেলোয়াড়ের চেহারা অল্প একটু দেখতে পেলেই যেন চার-ছক্কা দেখার উদযাপন তাদের। খেলা শেষে নিজেদের চেহারা দেখিয়ে, হাত নেড়ে কিছুটা শুকনো হাসিতে সান্ত্বনা দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আদতে ব্রিস্টলের বৃষ্টি সেমিফাইনাল স্বপ্ন করেছে আড়াল। 

এমনটাই হতে পারে আভাস পেয়ে হতাশার সুর অবশ্য বাংলাদেশ অধিনায়ক আগেই বাজিয়েছিলেন। এদিন বাস্তব পরিস্থিতিতে ব্রিস্টলের কালো আকাশের ছায়া পড়েছিল সবার চেহারায়।

কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারার পরই ব্রিস্টলে বৃষ্টির পূর্বাভাস ভাবাচ্ছিল বাংলাদেশকে। ম্যাচের দিন সকালবেলা বৃষ্টি দেখে খেলোয়াড়রা হোটেল থেকে বের হননি। সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটের দিকে কোচিং স্টাফ আর কয়েকজন ক্রিকেটার মাঠে আসেন। মাঠে এসেই কোচ স্টিভ রোডস ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে ছুটলেন কোথায় যেন। তাকে দেখে পেছনকে থেকে কয়েজন সমর্থক বলে উঠলেন, ‘উই ওয়ান্ট রুবেল হোসেন।’ পাশ থেকেই একজন বলছিলেন, ‘আগে তো খেলা হোক ভাই, খেলা হলেই না তবে রুবেলকে চাইবেন।’ তাকে থামিয়ে দিয়ে ওরাই আবার চিৎকার করে উঠলেন, ‘খেলা হবে, খেলা হবে’। কিন্তু খেলা তো আসলে হয়নি। গাঁটের পয়সা খরচ করে, ঝক্কি পেরিয়ে ঠাণ্ডা হাওয়া সামলে অপেক্ষা করা সমর্থকরা বলছিলেন, সব কষ্ট সইতে রাজী তারা, তবু খেলা হোক। দুই পয়েন্ট যে খুব করে চাই বাংলাদেশের।

সকাল বেলাতেই ব্রিস্টল মাঠের দায়িত্বে থাকা আইসিসির পাকিস্তানি মিডিয়া ম্যানেজার পূর্ব পরিচিত বাংলাদেশি সাংবাদিককে বলছিলেন, ‘ তোমরা হয়ত এক পয়েন্ট পেতে যাচ্ছ।’ জবাবে ওই সাংবাদিক বললেন ‘ আসলে আমরা এক পয়েন্ট হারাচ্ছি’। আগের দিনই বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বুঝিয়ে দিয়েছেন –  ম্যাচ না হলে ধরে রাখা একটা পয়েন্ট হারাবেন তারা। এর যুক্তিও তো পরিষ্কার। 

র‍্যাঙ্কিং, শক্তি, সাম্প্রতিক ফর্ম সবই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে।  এই ম্যাচে তাই পয়েন্ট হারানো মানে সেমিফাইনালের সমীকরণ কঠিন হয়ে যাওয়া। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলন শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক চেনা সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘ভাই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ২৭০ করলেও জিততাম, সেদিন জিতলে আজকে আর এই বৃষ্টি নিয়ে ভাবা লাগত না।’

বৃষ্টি এখন সত্যিই সেমিফাইনালের সমীকরণ বেশ শক্ত করে দিল বাংলাদেশের। চার ম্যাচ থেকে মাশরাফিদের পয়েন্ট এখন তিন। সমান ম্যাচে লঙ্কানরা পেয়ে গেল চার পয়েন্ট। ৭ জুন আগের ম্যাচে ঠিক এই মাঠেই পাকিস্তানের সঙ্গেও এক পয়েন্ট পেয়েছিল লঙ্কানরা।

এদিন বাংলাদেশের মতো লঙ্কান খেলোয়াড়দের সবাইকেও মাঠে আসতে দেখা যায়নি। অধিনায়ক দিমুত করুনারত্নেসহ যাদের দেখা গেছে তাদের চেহারায় ছিল ফুরফুরে ভাব। বৃষ্টিমুখর দিনে আনুষ্ঠানিকতা সারার অপেক্ষায় হাসিঠাট্টা করেই সময় পার করেছেন তারা। ম্যাচ শেষে খেলে পয়েন্ট পাওয়ার ইচ্ছা জানালেও ফাও পয়েন্ট পেয়ে নিজেদের স্বস্তি আড়াল করেননি লঙ্কান অধিনায়ক,  ‘আমার মনে হয় দল হিসেবে আমরা খেলতেই এসেছি। মাঝেমাঝে পয়েন্ট পেলে মনে হয় ঠিকই আছে। কিন্তু না খেলেও আমরা ফাও পয়েন্ট পেতে চাই না। আমরা খেলতে চাই, জিততে চাই এবং পয়েন্ট পেতে চাই। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে বৃষ্টি ছিল। হ্যাঁ পয়েন্ট পেয়ে আমরা খুশি। এখন পরের খেলার জন্য ভাবছি।’

করুনারত্নের একদম বিপরীত জবাব দিলেন বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস, লঙ্কানরা পয়েন্ট ধরলেও রোডস দেখছেন পয়েন্ট হারানোর ম্যাচ, ‘খুবই হতাশার। আমরা এই ম্যাচ থেকে দুই পয়েন্ট টার্গেট করে রেখেছিলাম। আমি জানি শ্রীলঙ্কা ভাল লড়াই করত। কিন্তু আমরা দেখছি আমরা এক পয়েন্ট হারিয়েছি। এটাই হতাশার। কিন্তু বাস্তবে, আমরা কি করতে পারতাম, একদম কিছুই না। এখন বাকি ম্যাচগুলো আমাদের জিততে হবে। পরের খেলায় এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জেতাই লাগবে। এরপর পরের ম্যাচেও জেতার চেষ্টা করতে হবে। এটাই আমরা করতে পারে। এসবই আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আবহাওয়া তো নিয়ন্ত্রণে নেই।’

চার ম্যাচ শেষ। হাতে আছে তিন পয়েন্ট। বাকি পাঁচ ম্যাচ থেকে অন্তত ৮ পয়েন্ট না হলে নিশ্চিত হবে না পরের ধাপে যাওয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা আছে। শক্তিতে অনেক এগিয়ে থাকা ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ম্যাচ বাকি। ওই পাঁচ ম্যাচ থেকে অন্তত চারটি জেতা বাস্তব প্রেক্ষাপটে বেশ শক্ত চ্যালেঞ্জ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago