‘আড়ং বয়কট’ করে বিদেশমুখী হবো?

‘বয়কট আড়ং’- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চলছে। একেবারে সাধারণ জনমানুষ থেকে পরিচিত চেনা-জানা অনেকেই এই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জরিমানাকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত। অভিযোগ যে পাঞ্জাবির দাম ছিলো ৭৩০ টাকা, পাঁচদিন পর সেই পাঞ্জাবির দাম রাখা হয়েছে ১,৩০৭ টাকা। বেশি রাখা হয়েছে ৫৭৭ টাকা। এ কারণে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আড়ংয়ের উত্তরা আউটলেটকে চার লাখ টাকা জরিমানা ও ২৪ ঘণ্টার জন্য আউটলেটটি বন্ধ করে দেন।
Aarong

‘বয়কট আড়ং’- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চলছে। একেবারে সাধারণ জনমানুষ থেকে পরিচিত চেনা-জানা অনেকেই এই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জরিমানাকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত। অভিযোগ যে পাঞ্জাবির দাম ছিলো ৭৩০ টাকা, পাঁচদিন পর সেই পাঞ্জাবির দাম রাখা হয়েছে ১,৩০৭ টাকা। বেশি রাখা হয়েছে ৫৭৭ টাকা। এ কারণে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার আড়ংয়ের উত্তরা আউটলেটকে চার লাখ টাকা জরিমানা ও ২৪ ঘণ্টার জন্য আউটলেটটি বন্ধ করে দেন।

রাতেই জানা যায় মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে বদলি করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আড়ংকে জরিমানার সঙ্গে এই বদলির যোগসূত্র আছে বলে ধারণা তৈরি হয়। যদিও আড়ং কর্তৃপক্ষ বলেছেন বদলির সঙ্গে তাদের কোনো যোগসূত্র নেই, সরকারও বিষয়টি অস্বীকার করে বদলির সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। তাতে পাবলিক পার্সেপশনে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

আড়ংয়ের প্রতি মানুষের ক্ষোভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেও দৃশ্যমান হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে বোঝা গেছে, আড়ংয়ের প্রতি জনমানুষের একটি অংশের নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলো কতোটা যুক্তিসঙ্গত, কতোটা ভিত্তি আছে, সেটি একটি বিষয়। অভিযোগ যে রয়েছে, সেটিই বড় বাস্তবতা।

২.

জরিমানাকে কেন্দ্র করে ‘বয়কট আড়ং’ প্রচারণার সূত্রপাত, সে প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি। তা বলতে গিয়ে আড়ং কীভাবে গড়ে উঠলো সেই ইতিহাস বলবো না। তবে আড়ং প্রতিষ্ঠার দর্শন নিয়ে কথা বলবো।

আড়ং বিষয়ে সাধারণ মানুষের বা মধ্যবিত্তের অভিযোগ, পণ্যের দাম বেশি। আড়ং অনেক বেশি লাভ করে। লাভ আরও কম করতে পারে। যে পাঞ্জাবি আড়ং ২ হাজার টাকায় বিক্রি করে, লাভ কম করে সেটা ১,৫০০ টাকায় বিক্রি করতে পারে। আড়ং যেহেতু ব্র্যাকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠান নয়। সুতরাং, আড়ং অবশ্য মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের স্বার্থ বিবেচনায় লাভ কম করে, দাম কম রাখতে পারে। জীবনের টানাপড়েনে বিধ্বস্ত মধ্যবিত্তের সহজ-সরল, নিষ্পাপ এই প্রত্যাশা। আড়ংয়ের আউটলেটে গিয়ে যখন প্রত্যাশার সঙ্গে দামের মিল দেখছেন না, তখন তার ভেতরে ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে। দীর্ঘ বছর ধরে হয়ত এই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

আড়ংয়ের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ যারা পণ্য উৎপাদন বা প্রস্তুত করেন, সেই দরিদ্র নারী কর্মীদের কম মজুরি দিয়ে আড়ং অনেক বেশি লাভ করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন শব্দ ব্যবহার করে অনেকে অভিযোগ করেন ‘আড়ং এসব দরিদ্র মানুষদের শোষণ করছে’।

আড়ংয়ের কার্যক্রম, পণ্য কীভাবে প্রস্তুত হয়, দরিদ্র মানুষের সম্পৃক্ততা, তাদের মজুরি প্রভৃতি বিষয়গুলো নিয়ে জানার সুযোগ হয়েছিলো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আড়ংয়ের কার্যক্রম দেখেছি-জেনেছি। তাদের মজুরি, সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো জেনেছি। মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের যে অভিযোগ, তা জানা-বোঝার চেষ্টা করেছি। সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধান করেছি।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ব্র্যাক তথা আড়ংয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে। একাধিকবার আলোচনা করেছি। তিনি যা বলেছেন, তা বোঝার জন্যে সরেজমিনে গিয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। মানিকগঞ্জসহ আড়ংয়ের অনেকগুলো ফ্যাক্টরিতে গিয়েছি ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে। আলাদাভাবে একাও গিয়েছি অনেক জায়গায়।

মূল সমস্যা হিসেবে যেটা চিহ্নিত করতে পেরেছি সেটা হলো, আড়ং গড়ে তোলার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, ভোক্তা মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে পরিষ্কার করে উপস্থাপন করা যায়নি বা করা হয়নি। হয়ত প্রয়োজনও মনে করা হয়নি। ব্র্যাক যেহেতু গরীব মানুষদের নিয়ে কাজ করে, অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আড়ংও তাই করছে বা করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। এটা আলাদা করে তো বলার কিছু নেই। হয়ত ভাবা হয়েছে এভাবে।

আড়ং প্রতিষ্ঠার দর্শন ও দাম বেশির অভিযোগ নিয়ে ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিলো তার মূল অংশটি এমন-

‘‘মধ্যবিত্ত সস্তায় পণ্য কিনতে পারবেন আমরা সেজন্য আড়ং গড়ে তুলিনি। আড়ংয়ের প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো উৎপাদকরা যাতে কাজ পান সেজন্য। মধ্যবিত্তের স্বার্থ নয়, উৎপাদকের স্বার্থটাই এখানে বড়। দরিদ্র সেই মানুষগুলোর কথাই আমরা ভেবেছি, যাঁরা ভেরেণ্ডা গাছ থেকে গুটি সংগ্রহ করে সুতা বানিয়েছেন। সেই সুতা দিয়ে তৈরি করেছেন এনডি সিল্ক। গ্রামের দরিদ্র মহিলারা তাতে ব্লকপ্রিন্ট করেছেন। তাঁদের জন্যই তো তৈরি হয়েছিল আড়ং। সুতরাং আড়ং সবসময় তাঁদের স্বার্থই দেখেছে। তাঁদেরকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক আমরা দিচ্ছি। প্রস্তুতকারককে যোগ্য সম্মানী দেওয়া হলে পণ্যের মূল্য এরকমই হবে। যে কাজের জন্য একজন উৎপাদকের ত্রিশ টাকা পাওয়ার কথা, সেখানে তাঁকে যদি পনের বা বিশ টাকা দেওয়া হয়, একমাত্র তখনই পণ্যের মূল্য কম রাখা যেতে পারে। একজন দরিদ্র মানুষকে কম মজুরি দিয়ে, মধ্যবিত্তের সুবিধা করে দিতে হবে- এরকম চিন্তা আমাদের মাথায় কখনো ছিল না, এখনও নেই। অনেকেই আছেন যাঁরা প্রস্তুতকারকদের কম মজুরি দিয়ে কাজ করান। আমরা এটা কখনো করি না। যে কোনো কাজের জন্য উপযুক্ত মজুরি দিয়ে থাকি। তাতে পণ্যের মূল্য কিছু বাড়লেও আমরা পিছপা হইনি। মধ্যবিত্ত ক্রেতার কাছে হয়তো মূল্য একটু বেশি মনে হবে। কিন্তু, অতদরিদ্র প্রস্তুতকারকের স্বার্থরক্ষাই বড় কথা। আমরা তো এটাই চাই। মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনই তো আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ভর্তুকি দিয়ে আড়ংয়ের পণ্যের মূল্য কম রাখার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না।’’

৩.

ফজলে হাসান আবেদের বক্তব্য থেকে আড়ং গড়ে তোলার দর্শন সম্পর্কে মোটামুটি পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।

প্রতিষ্ঠার প্রথম চারবছর আড়ং লাভ করেনি। লাভ করতে শুরু করেছে তারপর থেকে। গত বছর আড়ংয়ের মোট বিক্রির পরিমাণ ছিলো প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। প্রশ্ন আসবে আড়ং যে লাভ করে সেই অর্থ যায় কোথায়?

আড়ংয়ের লাভের একটি টাকাও ফজলে হাসান আবেদ বা কোনো ব্যক্তি নেন না, নিতে পারেন না। লাভের বড় অংশ আড়ংয়ের আরও সম্প্রসারণের কাজে ব্যয় হয়। তার মানে প্রতি বছর আরও বেশি সংখ্যক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়। লাভের কিছু অংশ ব্র্যাকের নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে যায়।

গ্রামীণ দরিদ্র উৎপাদকদের মজুরি আরো বেশি দেওয়া এবং লাভ কম করে দাম কম রাখার প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা হয় ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, একজন উৎপাদকের মজুরি যা হওয়া প্রয়োজন আমরা তাই দিয়ে থাকি। একটি এলাকার শ্রমের মজুরি যদি হয় ১০ টাকা, আমরা যদি ১৫ বা ২০ টাকা দেই, তবে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। পোশাক বা এ ধরনের পণ্য তো আড়ংই তৈরি করছে না। অন্য আরও অনেক ছোট ব্যবসায়ী আছেন, তখন তারা বিপদে পড়ে যাবেন। ব্যবসা করতে পারবেন না। আবার যে পণ্যের বাজার মূল্য ১০ টাকা, তা আমরা ৮ টাকায় বিক্রি করতে পারি না। এক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমাদের তো সামাজিক দায়িত্ববোধ, অন্যের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় রেখে কাজ করতে হয়। আড়ংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের নীতি, বাজার অনুযায়ী মূল্য নির্ধারিত হবে এবং মানের সঙ্গে কোনো আপোষ করা হবে না।

তবে আড়ংয়ের পণ্য যারা প্রস্তুত করেন, তারা ব্র্যাকের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি থেকে নানা রকমের সহায়তা পেয়ে থাকেন। ক্ষুদ্রঋণ, চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা প্রভৃতি সুবিধা পেয়ে থাকেন।

৪.

বিদেশি কাপড় এবং ডিজাইনে তৈরি পোশাক প্রস্তুত করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে বাংলাদেশ। আর নিজস্ব কাপড় এবং নিজস্ব ডিজাইনে মানসম্পন্ন পোশাক তৈরি করে আড়ং বাংলাদেশের একমাত্র ফ্যাশন ব্রান্ডে পরিণত হয়েছে। দেশে তো বটেই, বিদেশেও পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশে যত বিদেশি থাকেন এবং আসেন, তাদের কাছেও নির্ভরতার নাম আড়ং।

বাংলাদেশে পোশাকের বাজার বিশেষ করে মেয়েদের পোশাকের বাজার প্রায় পুরোটাই ছিলো বিদেশ নির্ভর। বাংলাদেশে যে বুটিক শিল্প গড়ে উঠেছে, তার পেছনে রয়েছে আড়ংয়ের অবদান। আড়ং দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দিয়ে ডিজাইনার তৈরি করেছে। পর্যায়ক্রমে তাদের অনেকে নিজেরা ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। ফলে দেশীয় বুটিক শিল্প সমৃদ্ধ হয়েছে।

এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মূল্য ট্যাগের ভুল মানে ব্যক্তির ভুল, প্রতিষ্ঠানের নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আড়ং এমন কিছু করে বা কখনো করেছে, নজির নেই। ম্যানুয়ালি মূল্য ট্যাগ লাগানোর কাজে ভুল হওয়াটা প্রত্যাশিত না হলেও, অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং ব্যক্তির ভুলের কারণে, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়ার আগে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিলো।

৫.

এবার আসি ‘আড়ং বয়কট’ ও জরিমানা প্রসঙ্গে। পাঁচদিনের ব্যবধানে মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গে আড়ংয়ের ব্যাখ্যা, মূল্য ট্যাগ লাগানো হয় ম্যানুয়ালি। একই পাঞ্জাবি দেশের দুটি অঞ্চলে প্রস্তুত হয়েছিলো। একটি অংশের পাঞ্জাবিতে মূল্য ট্যাগ ভুলবশত ৭৩০ টাকা লাগানো হয়। প্রকৃত মূল্য মূল্য ১,৩০৭ টাকা- যা অন্য অঞ্চল থেকে আসা পোশাকে লাগানো হয়েছিলো। পাঁচদিন আগে-পরে দামের পার্থক্যের বিষয়টি একারণেই সামনে এসেছে। আড়ংয়ের ব্যাখ্যাটি যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। কারণ তথ্য বলছে, আড়ংয়ে ৭৩০ টাকা দামের কোনো পাঞ্জাবি নেই।

আর ‘আড়ং বয়কট’ করার প্রচারণা যারা করছেন, তারা আসলে কী চাইছেন? আড়ং একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান। লাখ লাখ দরিদ্র মানুষ আড়ংয়ের কর্মী।

দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, থাকতে পারে ক্ষোভ। কিন্তু বর্জন করতে হবে কেনো? বহুবিধ ক্ষেত্রে অবদান রাখা আড়ং বিষয়ে একটি তথ্য জানাই।

আপনি আড়ংয়ের আউটলেটে গিয়ে যে জামদানি বা নকশিকাঁথাটি কিনছেন, তা আমাদের গৌরব। কিন্তু, শিল্পটি যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে ছিলো, তা আমরা জানি না। আমাদের গৌরবের অনেক কিছুই আমাদের সংগ্রহে ছিলো না। ছিলো শিকাগো, বোস্টন, এলাহাবাদ, আশুতোষ মিউজিয়ামে। আজকের যে দৃষ্টিনন্দন জামদানি বা নকশিকাঁথা, তার মোটিফগুলোর ছবি তুলে আনা হয়েছে সেসব মিউজিয়াম থেকে। তারপর শিল্পীদের দিয়ে ছবি আঁকিয়ে, কারিগরদের দিয়ে জামদানি ও নকশিকাঁথা তৈরি করা হয়েছে। বিশাল ও দায়িত্বশীল এই কর্মযজ্ঞের পুরোটাই সম্পন্ন করেছে আড়ং।

দেশীয় প্রতিষ্ঠান আড়ং বর্জন প্রচারণায় সামিল হওয়ার আগে, অনেককিছু বিবেচনায় নেওয়াটা কী জরুরি ছিলো না? দেশীয় আড়ং বর্জন করে আমরা কী আবার বিদেশমুখী হবো? ‘বয়কট আড়ং’ প্রচারণায় যারা অংশ নিচ্ছেন, তারাও নিশ্চয়ই তা চান না।

পণ্যের মূল্য নির্ধারণের কোনো নিয়ম-নীতি আছে বাংলাদেশে? নেই। কতো শতাংশ লাভ করা যাবে তার কোনো নীতি আছে? নেই। তাহলে দাম বেশি- এই যুক্তিতে জরিমানা করছেন কীভাবে?

কলকাতায় যে পাঞ্জাবির দাম ৮০০ টাকা, ঢাকায় যে প্রতিষ্ঠান তা ৫ হাজার বা ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করছে- তার ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? আছে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম? নেই।

তাহলে অভিযানের নামে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ইমেজ ক্ষুণ্ণ কেনো?

নানা টানাপড়েনে জীবন কাটানো মানুষের মনে ক্ষোভ থাকে।

খাদ্য থেকে শুরু করে প্রতি ক্ষেত্রে ভেজাল-দূষণ। মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার। মানুষের বিক্ষুব্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

অভিযানে বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা-জরিমানাকে বিক্ষুব্ধ মানুষ স্বাগত জানায়। কিন্তু, এ ধরণের অভিযান যে সমস্যার সমাধান নয়, তা তো অজানা নয়। ২৭ তারিখে মেয়াদ শেষ হওয়া পণ্য, ফেলে দেওয়ার জন্যে রেখে দেওয়া হয়েছে। এটা কর্তৃপক্ষের দাবি।

২৮ তারিখ সকালে গিয়ে যদি তাদের জরিমানা করা হয়, তা বিবেচনা সম্মত?

১২৪ পৃষ্ঠার খাতায় সাদা পৃষ্ঠা ১২০। কভারসহ ১২৪। সাদা কাগজ কেনো ১২০, কেনো ১২৪ নয়-এই যুক্তিতে জরিমানা কী বিবেচনা সম্মত? সাদা কাগজের মান, কাগজের তুলনায় খাতার দাম বেশি কী না- সেই বিবেচনায় জরিমানা হলে তাও হয়ত একটা যুক্তি থাকত। অভিযানে সব ক্ষেত্রেই এমন ঘটছে, তা নয়। সঠিক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, যৌক্তিক বা বিবেচনা সম্মত নয়, এমন শাস্তি-জরিমানায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আড়ংয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের একটি ভুলের কারণে জরিমানা বা ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তাদের অবদান-রেপুটেশন বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না।

প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে সামগ্রিক অভিযান। মূলে নজর না দিয়ে, এ ধরণের অভিযানে কিছু বাহবা পাওয়া গেলেও, সমাধান মিলবে না। কমবে না জনভোগান্তি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago