চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের কারণে কেউ খেলাপি হয়েছেন, তা মনে করি না: খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
জাতীয় সংসদে গত ১৩ জুন পেশ করা ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের কথা বলেছেন। তবে, কী সংস্কার করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্ণর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সঙ্গে।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের কথা বলেছেন। তবে, কী সংস্কার করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাননি। অর্থমন্ত্রী ব্যাংকগুলোর একীভূত বা মার্জারের কথা বলেছেন। দুটি ব্যাংক যদি ইচ্ছে করেই একীভূত হয়, তাহলে সেই বিধান এখনও রয়েছে, আর তা করা যায়। কিন্তু, জোর করে ব্যাংক একীভূত করানোর কোনো বিধান নেই। সেটি বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়। কাজেই, অর্থমন্ত্রী কীভাবে এই কাজটি করবেন তা আমি বুঝতে পারছি না।
ঋণখেলাপিদের পুনর্বাসিত করার কথাও বাজেটে বলা হয়েছে- হ্যাঁ, ঋণখেলাপিদের পুনর্বাসিত করার জন্যে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে তা যদি অর্থমন্ত্রীর কাছে সংস্কার বলে মনে হয় তাহলে আমি বলবো যে- না, ওটা সংস্কার নয়, বরং ওটি সংস্কারের বিপরীতে কাজ হবে। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা ১৫ বছর আগের সংজ্ঞায় ফিরে গেছি। এখন নয় মাসের মধ্যে একটি ঋণের কোনো কিস্তি দেওয়া না হলে, তাহলে তা খেলাপি হবে। অর্থাৎ, আগে যেটি তিন মাস ছিলো, এখন তা নয় মাসে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি এটিকে একটি পশ্চাৎপদ পদক্ষেপ হিসেবে দেখি। যারা বর্তমানে খেলাপি রয়েছেন তাদেরকে নিয়মের মাধ্যমে খেলাপি মুক্ত করার চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু, প্রকৃত মানের বিচারে সেগুলো খেলাপিই থেকে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোতে এক ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আরেকটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে এবং সেটির ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে। তা হলো: যারা দেশের স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঋণ খেলাপি ছিলেন বা রয়ে গেছেন তাদের সবাই এই সুযোগ নিতে পারবেন। তারা খেলাপি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যে মাত্র ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্যে শ্রেণিকৃত ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। এ নিয়ে যেহেতু উচ্চ আদালতের আদেশ রয়েছে তাই কোনো মন্তব্য করবো না। এটুকু বলা যেতে পারে যে- এ ধরণের ব্যবস্থাতে ব্যাংকিং খাতে বড় গোলযোগ ঘটবে। শুধুমাত্র যদি তাদেরকে এই সুবিধাটি দেওয়া হয় তাহলে এক কথা। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে তারা যখনই খেলাপিমুক্ত হবেন তখনই তারা নতুন ঋণ পাবেন। আমাদের শঙ্কাটি এখানেই। ঋণ খেলাপিরা যেহেতু খুব বেশি শক্তিশালী, তারা শক্তিশালী না হলে এতোদিন তো খেলাপি থাকতে পারেন না। ফলে, তাদের অনেকেই নতুন ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করবেন। তারপর ১০ বছর পরে গিয়ে তারা বর্তমানে যে পরিমাণ ঋণের খেলাপি, তার চেয়ে বেশি অংকের ঋণ নিয়ে খেলাপি হবেন। তাই এতে আমার আপত্তি রয়েছে। সংস্কার বলতে অর্থমন্ত্রী যদি এসব বুঝিয়ে থাকেন তাহলে ব্যাংকের ক্ষতি হবে।
চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ তো শুধু তো খেলাপি ঋণের জন্যে প্রযোজ্য নয়। যারা নিয়মিত ঋণ গ্রহীতা তারাও চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ দিচ্ছেন। নিয়মিত ঋণ গ্রহীতাদের মোট ঋণের পরিমাণ হলো ৯ লাখ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ হলো ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের কারণে কেউ খেলাপি হয়েছেন তা আমি মনে করি না।
খেলাপি ঋণের প্রকৃত অংক নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে। বলা হচ্ছে খেলাপি ঋণের যে পরিমাণের কথা বলা হচ্ছে, প্রকৃত পরিমাণ তার থেকে বেশি?
হ্যাঁ, ব্যাংকগুলো অনেক সময় খেলাপি ঋণের তথ্য লুকিয়ে রাখে। ডিসেম্বর মাসে অনেকে বুক ক্লিন রাখার জন্যে খেলাপি ঋণের কথা লুকিয়ে রাখলেও তা মার্চ মাসে এসে প্রকাশিত হয়ে গেছে। এটি আসলে বেশি দিন লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয় নয় বলে খেলাপি ঋণের নতুন রেকর্ডের কথা আমরা জানতে পারি।
Comments