বিশ্বকাপ রোমাঞ্চকর করতে সেরা চারে উলটপালট চাইব: অ্যামব্রোস

বাংলাদেশের বিপক্ষে তখন ব্যাট করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের ওই সময়টায় সমান পাল্লায় লড়ছে দুদলই। টন্টন কাউন্টি গ্রাউন্ডের প্রেসবক্স থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতেই দেখা মিলল এমন একজনের, সেরা সময়ের যার দেখা পেলে আতঙ্কে কাঁপতেন ব্যাটসম্যানরা। ৯০ দশকের বিধ্বংসী পেস বোলিংয়ে কার্টলি অ্যামব্রোস মাত করেছেন দুনিয়া। বাংলাদেশের বর্তমান পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে তার পেস বোলিং জুটি ছিল দুর্ধর্ষ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে তখন ব্যাট করছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের ওই সময়টায় সমান পাল্লায় লড়ছে দুদলই। টন্টন কাউন্টি গ্রাউন্ডের প্রেসবক্স থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতেই দেখা মিলল এমন একজনের, সেরা সময়ে যার দেখা পেলে আতঙ্কে কাঁপতেন ব্যাটসম্যানরা। ৯০ দশকে বিধ্বংসী পেস বোলিংয়ে কার্টলি অ্যামব্রোস মাত করেছেন দুনিয়া। বাংলাদেশের বর্তমান পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে তার পেস বোলিং জুটি ছিল দুর্ধর্ষ।

৯৮ টেস্টে মাত্র ২০.৯৯ গড়ে অ্যামব্রোস নেন ৪০৫ উইকেট। ওয়ানডেতেও ছিলেন বিস্ময়কর সফল। ১৭৬ ওয়ানডেতে ২৪.১২ গড়ে ২২৫ উইকেট। ক্যারিয়ারজুড়ে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৩.৪৮ করে। শরীর তাক করা বাউন্সার, তীব্র গতির ইয়র্কার কিংবা সুইংয়ে কাবু করে ব্যাটসম্যানদের নাচানো। অ্যামব্রোসের বোলিং দেখা ছিল যেন অতুলনীয় কিছু।

মিনিট দশেকের আলাপে পেস বোলিং, টেস্ট ক্রিকেট, হালের টি-টোয়েন্টি, নিজের সঙ্গীত জীবন আর বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন 'নাইট' উপাধী পাওয়া এই ক্রিকেটার।

প্রশ্ন: কিংবদন্তি পেসার হিসেবে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটকে কেমন দেখছেন?

অ্যামব্রোস: ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেট এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট। দুই দলেরই আরও অনেক কাজ করতে হবে। উপরের দলকে তাদের নিয়মিত হারিয়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে এগুতে হবে । অনেক অনেক শ্রম দিতে হবে দুদলকেই।

প্রশ্ন: ওয়ালশের কাজ কেমন দেখছেন?

অ্যামব্রোস: ওয়ালশ লিজেন্ড। পেস বোলিং নিয়ে তার জ্ঞান অগাধ। এখন সে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেবা করছে। ওখানে কাজ করার পর তার আরও অফার এসেছে। আমি আশা করছি বাংলাদেশের পেসাররা তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখবে।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই অবস্থায় কষ্ট পান?

অ্যামব্রোস: অবশ্যই পাই। যখন দেখবেন আপনি একটা সময় বিশ্বের এক নম্বর ছিলেন অনেক বছর। আর এখন সংগ্রাম করছেন। প্রতিভা এখনো আছে। কেবল উন্নত কাঠামো দরকার। কাঠামো পেলে আশা করছি কয়েক বছরের মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার ফিরে আসবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের উন্নতি কেমন দেখছেন?

অ্যামব্রোস: তাদের ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে। যখন তারা খেলতে এসেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, সবাই তাদের হারাত। এখন অনেক অনেক ভালো দল। কম্প্যাক্ট দল। বিশেষ করে ওয়ানডেতে। যেটা কথা হচ্ছিল, তাদের বিপক্ষে নেমেই আর জেতা যায় না। গত নয় ম্যাচে তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাতবারই হারিয়েছে। এতে বোঝা যায়, তারা কতটা এগিয়ে গেছে।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টির কারণে কি গতিময় পেসাররা হারিয়ে যাচ্ছে?

অ্যামব্রোস: না, আমি তা মনে করি না। আপনি যদি সবগুলো দল দেখেন, তাহলে দেখবেন সব দলেই অন্তত দুজন ভালো পেসার থাকে। সমস্যা হলো উইকেট আগে মন্থর ছিল, স্পিনাররা সহায়তা  পেত। এখন উইকেট ভালো হচ্ছে। অনেকে বলছিলেন এটা হাইস্কোরিং বিশ্বকাপ হবে। কিন্তু তা হয়নি। উইকেট পেসারদের কিছুটা সহায়তা করছে। মাঝে মাঝে আবার বিশাল রানও হচ্ছে। ব্যাট-বলের এই লড়াই আমি উপভোগ করছি। পেসাররা আছে, উইকেট ভালো হলে আরও পেসার আমরা দেখব।

প্রশ্ন: এখনকার ক্রিকেটে প্রচুর স্লোয়ার দেওয়া হয়, সেটা কীভাবে দেখেন?

অ্যামব্রোস: বিষয়টা হচ্ছে, গ্রেট ফাস্ট বোলার হতে গেলে কেবল ৯০ মাইল গতিতে বল করতে হবে, এমন না। কারণ আপনি যদি ৯০ মাইল গতিতে বল করেন কিন্তু জায়গায় ফেলতে না পারেন, তাহলে তো কোনো লাভ হলো না। আপনি ৮৫ মাইলে বল করেন, জায়গায় ফেলেন, সুইং করাতে পারেন, উইকেট পেতে পারেন। গ্রেট পেসার হতে গেলে কেবল গতি থাকলেই চলবে না। হ্যাঁ, অবশ্যই গতি আপনাকে বাড়তি সুবিধা দেবে। মৌলিক ব্যাপার হলো, ঠিক লাইন ও লেন্থে বল করা। ধারাবাহিকভাবে।

প্রশ্ন: অনেকেই বলেন টেস্ট ক্রিকেট মরে যাচ্ছে... 

অ্যামব্রোস: আমার মনে হয় না। মানুষ যেভাবে বলাবলি করে, সেভাবে টেস্ট ক্রিকেটের আবেদন মরছে না। টি-টোয়েন্টি উত্তেজনাময় খেলা, মানুষ পছন্দ করে, ঠিক আছে। কিন্তু আমি রোমাঞ্চকর সব টেস্টও তো সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি। টেস্ট ক্রিকেটকে বরং আরও আকর্ষণীয় করা যায়। দুইদিন ব্যাট করে কোনো দল ৫০০ করল। তারপর ড্রয়ের জন্য খেলল। কোনো নিয়ম করে যদি এসব অ্যাপ্রোচ বদলানো যায়। রান, ওভারের কোন বিধি-নিষেধ যদি বেঁধে দেওয়া যায়, তাহলে আরও আকর্ষণীয় হবে।

প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেকেই তো টেস্ট খেলতে চায় না।

অ্যামব্রোস: ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটটাই ভালো অবস্থায় নেই। আমি অবশ্য তুলনা করার মানুষ না। একটা সময় দুর্দান্ত সব ক্রিকেটার সেখানে তৈরি হয়েছে। আমার মনে হয়, কিছু একটা কাঠামো বদলালে সময়টা ফিরে আসবে।

প্রশ্ন: বর্তমান সময়ে খেললে টি-টোয়েন্টি পছন্দ করতেন?

অ্যামব্রোস: অবশ্যই, আমি পছন্দ করতাম। কারণ মাত্র ৪ ওভার বল করতে হতো (হাসি)। আমার মনে হয়, এটা চ্যালেঞ্জ হতো। কারণ টি-টোয়েন্টি আসলে ব্যাটসম্যানদের খেলা। ছোট বাউন্ডারি। সবাই ছক্কা দেখতে চায়। চ্যালেঞ্জ হতো, আমি চ্যালেঞ্জ নিতেও ভালবাসতাম। হয়ত ভালোও করতাম।

প্রশ্ন: যাই হোক, আপনার সঙ্গীত জীবনের খবর কী?

অ্যামব্রোস: গানবাজনা ভালোই চলছে। 'স্পিরিটেড' ব্যান্ডের সঙ্গেই আছি। কে জানে বিশ্বখ্যাতও হয়ে যেতে পারি আমরা (হাসি)।

প্রশ্ন: শুনেছি, খেলোয়াড়ি জীবনে আপনার সাক্ষাৎকার নেওয়া ছিল ভীষণ হ্যাপা!

অ্যামব্রোস: না, মনে হয় না। আসলে খেলোয়াড়ি জীবনে আমি নিজেকে নিয়ে বলতে চাইতাম না। এখন আমি খেলি না। তবু এখনো বেশি সাক্ষাৎকার দিতে চাই না এই কারণে যে, আমি নিজেকে নিয়ে বলতে চাই না। যদি বর্তমান ক্রিকেট প্রসঙ্গ হয়, তখন কথা বলি।

প্রশ্ন: বিশ্বকাপের প্রসঙ্গে আসি, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাদ দিলে কাদের সেরা চারে আশা করেন?

অ্যামব্রোস: এই মুহূর্তে তাদের (ওয়েস্ট ইন্ডিজের) সেমিফাইনালে যাওয়ার পথ কঠিন। বাংলাদেশের বিপক্ষে আজ তাদের জিততেই হবে বড় ব্যবধানে (পরে বাংলাদেশই জিতেছে বড় ব্যবধানে)। এরপর পরের ম্যাচগুলোও জিততে হবে। (খানিকটা থেমে) ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন সেরা চার দল হবে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এদেরই সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু আমি এই গৎবাধা ব্যাপার দেখতে চাই না।  বিশ্বকাপ রোমাঞ্চকর হতে আমি কিছুটা অঘটন চাইব এখানে, কিছুটা উলট পালট হোক। হয়ত আবহাওয়া একটা ভূমিকা রাখতে পারে। কে জানে নিচের দিকের কোন দল সেরা চারে যেতে পারে। সেটা হলে দারুণ হয়। আমার আশা ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাক, কিন্তু সেটা এখন কঠিন।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন, কে সেরা আপনি না ওয়ালশ?

অ্যামব্রোস: কে সেরা বোলার, আমি না ওয়ালশ? তোমার কী মনে হয়?

প্রশ্ন: আপনি নিজেকে নিয়ে বলতে না চাইলে ওয়ালশকে নিয়ে বলেন।

অ্যামব্রোস: ওয়ালশ নিয়ে? ওকে। ওয়ালশ আর আমি ভীষণ ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সবাই জানে আমরা দারুণ বোলিং জুটি ছিলাম। আমরা অনেকটা ভাইয়ের মতো। তাকে নিয়েও বলতে চাই না। সবাই জানে সে কোন মাপের বোলার ছিল, আমিই বা কেমন ছিলাম। কাজেই এই নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago