কৃষকের তালিকায় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, বিত্তশালী
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহে কৃষকদের তালিকা নিয়ে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যে তালিকা করা হয়েছে তাতে ইউপি চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও প্রবাসী থেকে শুরু করে বিত্তশালীদের নাম থাকলেও বঞ্চিত হয়েছেন খোদ দরিদ্র কৃষকরা।
প্রকৃত কৃষকরা অভিযোগ নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কৃষিকাজে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এনিয়ে প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ মে থেকে রাজনগর উপজেলায় বোরো ধান সংগ্রহ শুরু করে উপজেলা খাদ্য অফিস। এই জেলা থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৪৫৫ টন। এর মধ্যে রাজনগর উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩৫১ টন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলার কার্ডধারী প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কৃষি কর্মকর্তারা নিজেদের পছন্দের লোকের নাম দিয়ে তালিকা তৈরি করেছেন বলেই অভিযোগ।
খাদ্য অফিসে জমাকৃত তালিকায় দেখা যায়, উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত এর নাম। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের তালিকায় আছেন ধান ব্যবসায়ী সজল দেব ও সার ব্যবসায়ী পার্থ দাশসহ অনেকেই। একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে উপজেলার কামারচাক, ফতেহপুর, পাঁচগাও ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের তালিকা নিয়েও।
কামারচাক ইউনিয়নের এক কৃষক বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকৃত কোনো কৃষকের নাম দেওয়া হয়নি। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিত্তশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রকৃত কৃষকের নাম না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট করে নিজের পছন্দের লোকদের নাম দিয়েছেন।
পাঁচগাও ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের একাধিক কৃষকরা বলেন, ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তালিকায় প্রকৃত কৃষকদের নাম পাওয়া যায়নি। কৃষকদের অভিযোগ, ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা অবৈধ সুবিধা নিয়ে কৃষক নয় এমন ব্যক্তিদের নাম দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, ধান বিক্রি করতে আগ্রহী কৃষক না থাকায় আমিসহ অন্যান্যদের নাম দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত কৃষক পেলে আমার নাম কেটে দেওয়ার জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে বলেছি।
এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদুল ইসলাম বলেন, আমি এই উপজেলায় এক মাস আগে যোগদান করেছি। সময় কম থাকার কারণে সব জায়গার কৃষকদের নাম দেওয়া সম্ভব হয়নি। মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বা জন প্রতিনিধিদের নাম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের উচিত ছিল কাদের নাম দেওয়া যায় এটা নির্ধারণ করে দেওয়া। কিন্তু উনারা এটা করে দেননি।
মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত এর নাম তালিকায় আনা হয়েছে সেটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুমোদন করেছেন।
এ ব্যাপারে রাজনগরের ইউএনও ফেরদৌসী আক্তার বলেন, মনসুরনগর ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত নিজেকে কৃষক বলে পরিচয় দেন। তাই উনার নাম থাকতে পারে। তবে আমার জানা নেই। এতো লম্বা লিস্ট চেক করাতো সম্ভব নয়। জেনে ব্যবস্থা নেব।
Comments