পটুয়াখালী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংঘর্ষে চীনা শ্রমিকের মৃত্যু

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় নির্মিতব্য ‘পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে’ বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে দ্বিতীয় দফার সংঘর্ষে এক চীনা শ্রমিক মারা গেছেন।
patuakhali
আহত বাংলাদেশি শ্রমিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় নির্মিতব্য ‘পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে’ বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে দ্বিতীয় দফার সংঘর্ষে এক চীনা শ্রমিক মারা গেছেন।

আজ (১৯ জুন) সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঝাং ইয়াং ফাং (২৬) নামের ওই চীনা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তিনি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইলেকট্রেশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন।

এছাড়া, গুরুতর আহত আরও পাঁচ চীনা শ্রমিককে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এরা হলেন- লিন কু মু (২৭), ঝ্যাং হুয়া (৩৪), ঝ্যাং সিং থান (২৫), ঝাং হু (২৬) ও জু ঝাং (৫৪)।

আহত বাংলাদেশি দুই শ্রমিক মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৪৭) ও মো. জহুরুল ইসলামকে (৬৫) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা সবাই মঙ্গলবার রাতে দ্বিতীয় দফার সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন।

এর আগে, মঙ্গলবার বিকেলে বয়লারের ওপর থেকে পড়ে সবিন্দ্র দাস (৩২) নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক মারা যান। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার জয়নগর গ্রামে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকির হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার মধ্যরাতে ছয় চীনা নাগরিক ও দুই বাংলাদেশি শ্রমিককে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ঝাং ইয়াং ফাং নামে চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়। বাকি পাঁচ চীনা নাগরিকের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”

বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ধানখালীর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মঙ্গলবার এক বাংলাদেশি শ্রমিক বয়লারের ওপর থেকে পড়ে মারা যান। এ নিয়ে বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।”

এমন পরিস্থিতিতে আজ সকালে হেলিকপ্টারে করে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় সফর করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাকে সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করেন।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে নির্মিতব্য পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সবিন্দ্র দাস নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তিনি পাওয়ার ব্লকের ৭৫ মিটার উচ্চতার বয়লারের ওপর কাজ করছিলেন। নিরাপত্তা বেল্ট ছিঁড়ে তিনি নিচে পড়ে গিয়েছিলেন।

নিহত শ্রমিকের লাশ গুম হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়েকটি স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালায়। এছাড়াও, তারা চীনা শ্রমিকদের আবাসিক এলাকায়ও হামলা করে। মঙ্গলবার রাতেও সেখানে কয়েক দফা হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে সরকারি স্থাপনাটির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব এবং আর্মড পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুলিশ, র‌্যাব এবং আর্মড পুলিশ যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অভ্যন্তরে বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের সঙ্গে সভা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করে। কিন্তু, বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কোনো কথা না শুনে হামলা-ভাঙচুর অব্যাহত রাখলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় সংবাদকর্মী ফরাজী মো. ইমরানের মোটরসাইকেল ও একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম রয়েলের ক্যামেরাও ভাঙচুর করে শ্রমিকরা।

কলাপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুর রহমান বলেন, “সবিন্দ্র দাসের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago