রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে আফগানিস্তানকে হারাল ভারত
স্পিনারদের সৌজন্যে লক্ষ্যটা ছিল সাধ্যের মধ্যেই। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তা করতে পারলো না আফগানিস্তান। উইকেটে সেট হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি কোন ব্যাটসম্যান। মোহাম্মদ নবি ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান দায়িত্ব নিতে না পারায় হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় আফগানিস্তান। ১১ রানের হারে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের।
শেষ দিকে ম্যাচে অবশ্য দারুণ জমে গিয়েছিল ম্যাচে। শেষ তিন ওভারে রান দরকার ছিল ২৪। হাতে ছিল তিন উইকেট। যা সিঙ্গেল নিয়ে করলেও লক্ষ্যে পৌঁছানো ছিল সম্ভব। কিন্তু তা না করে বড় শট খেলতে গিয়ে উল্টো ১১ রান দূরে গুটিয়ে যায় দলটি। শেষ দিকে হ্যাটট্রিকই তুলে নেন মোহাম্মদ শামি। চেতন শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে বিশ্বকাপ হ্যাটট্রিক করলেন এ পেসার।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। দলীয় ২০ রানেই হজরতউল্লাহ জাজাইকে হারায় তারা। এরপর রহমত শাহকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। গড়েন ৪৪ রানের জুটি। গুলবাদিনকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন হার্দিক পান্ডিয়া। এরপর হাসমতউল্লাহ শাহিদির সঙ্গে ৪২ রানের আরও একটি জুটি গড়েন রহমত। তাতে লক্ষ্যের দিকে দারুণভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল দলটি।
কিন্তু ২৯তম ওভারে জাসপ্রিত বুমরাহই বদলে ম্যাচের চিত্র। সে ওভারে দুটি উইকেট নেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা দুই সেট ব্যাটসম্যানকেই বিদায় করেন তিনি। তাতে দারুণ চাপে পড়ে যায় আফগানিস্তান। এরপর সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগানও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তবে এক প্রান্ত আগলে ব্যাটিং করতে থাকেন মোহাম্মদ নবি। তুলে নিয়েছিলেন নিজের হাফসেঞ্চুরিও। কিন্তু কাজের কাজটি করতে পারেননি। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি। এক বল বাকী থাকতে ২১৩ রানে অলআউট হয়ে যায় দলটি।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রানের ইনিংস খেলেন নবি। ৫৫ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। এছাড়া রহমত শাহর ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান। ভারতের পক্ষে ৪০ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নিয়েছেন শামি। এছাড়া বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া ও জুজবেন্দ্র চাহাল ২টি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং স্বর্গে এদিন টস জিতে ব্যাট করতে নামে ভারত। উদ্দেশ্য বড় সংগ্রহ তুলে আফগানিস্তানকে চাপে রাখা। কিন্তু শুরুতেই মুজিব উর রহমানের ঘূর্ণিতে পড়েন তারা। দারুণ ছন্দে থাকা রোহিত শর্মাকে সরাসরি বোল্ড করে দেন তিনি। এরপর অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে ৫৭ রানের ভালো জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা সামলে নেন আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল। এ জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ নবি। তার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়েন রাহুল।
বিজয় শঙ্করকে নিয়ে এরপর দলের হাল ধরেন ধরেন কোহলি। ৫৮ রানের দারুণ একটি জুটিও গড়েন। বিজয়কে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে এ জুটি ভাঙেন রহমত শাহ। তবে ভারতীয় শিবিরে বড় আঘাতটা দেন নবি। দারুণ ছন্দে থাকা কোহলিকে ফিরিয়ে দেন তিনি। তার বলে কাট করতে গিয়ে রহমত শাহরা হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন। এর আগে অবশ্য হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনের পর দ্বিতীয় ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে টানা তিন ম্যাচে ফিফটি তুললেন তিনি।
অধিনায়কের বিদায়ের পর কেদার যাদবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন ধোনি। গড়েন ৫৭ রানের জুটি। তবে রানের গতি বাড়াতে পারেননি তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেদম পিটুনি খাওয়া রশিদ ভাঙেন এ জুটি। ধোনিকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর বাকী ব্যাটসম্যানরা সে অর্থে দায়িত্ব নিতে না পারলে ৮ উইকেটে ২২৪ রান তুলে ইনিংস শেষ করে ভারত।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। ৬৩ বলে ৫টি চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। ৬৮ বলে ৫২ রানের কার্যকরী একটি ইনিংস খেলেন কেদার যাদব। এছাড়া রাহুল ৩০, বিজয় ২৯ ও ধোনি ২৮ রান করেন। আফগানিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন নবি ও অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ২২৪/৮ (রাহুল ৩০, রোহিত ১, কোহলি ৬৭, বিজয় ২৯, ধোনি ২৮, কেদার ৫২, পান্ডিয়া ৭, শামি ১, কুলদিপ ১*, বুমরাহ ১*; মুজিব ১/২৬, আফতাব ১/৫৪, গুলবাদিন ২/৫১, নবি ২/৩৩, রশিদ ১/৩৮, রহমত ১/২২)।
আফগানিস্তান: ৪৯.৫ ওভারে ২১৩ (জাজাই ১০, গুলবাদিন ২৭, রহমত ৩৬, হাসমত ২১, আসগর ৮, নবি ৫২, নজিবুল্লাহ ২১, রশিদ ১৪, ইকরাম ৭*, আফতাব ০, মুজিব ০; শামি ৪/৪০, বুমরাহ ২/৩৯, চাহাল ২/৩৬, পান্ডিয়া ২/৫১, কুলদিপ ০/৩৯)।
ফলাফল: ভারত ১১ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: জাসপ্রিত বুমরাহ (ভারত)।
Comments