রেস্টুরেন্ট ব্যবসা লাটে, তারা সবাই মাঠে

রেস্টুরেন্টে কাজ করেন নয়জন। মালিক-ম্যানেজার আরও দুজন। সবাই বাংলাদেশের খেলার টিকেট কেটে বসে আছেন। তাহলে কী করা যায়? ব্যবসার কী হবে! মালিক জাকির হোসেন ক্ষতিটা মাথায় নিয়েই ঘোষণা দিলেন, ‘বন্ধ করো কপাট, চলো সবাই মাঠে।’ কেবল এই ম্যাচেই নয়, একাধিক ম্যাচেই তারা করেছেন এমনটা। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন উন্মাতাল সমর্থকদের দেখা মিলছে প্রচুর। বাংলাদেশের জন্য শারীরিক শ্রম, গাঁটের পয়সা খরচ করায় কোনো পরোয়া নেই। এবারের গ্রীষ্মে তাদের প্রবাস জীবনে যেন লেগেছে উৎসবের ছোঁয়া।

রেস্টুরেন্টে কাজ করেন নয়জন। মালিক-ম্যানেজার আরও দুজন। সবাই বাংলাদেশের খেলার টিকেট কেটে বসে আছেন। তাহলে কী করা যায়? ব্যবসার কী হবে! মালিক জাকির হোসেন ক্ষতিটা মাথায় নিয়েই ঘোষণা দিলেন, ‘বন্ধ করো কপাট, চলো সবাই মাঠে।’ কেবল এই ম্যাচেই নয়, একাধিক ম্যাচেই তারা করেছেন এমনটা। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন উন্মাতাল সমর্থকদের দেখা মিলছে প্রচুর। বাংলাদেশের জন্য শারীরিক শ্রম, গাঁটের পয়সা খরচ করায় কোনো পরোয়া নেই। এবারের গ্রীষ্মে তাদের প্রবাস জীবনে যেন লেগেছে উৎসবের ছোঁয়া।

এবার বিশ্বকাপে এই পর্যন্ত কী কী সেরা ঘটনা ঘটেছে? তার একটা তালিকা ছেপেছে ইন্ডিপেন্ডেন্টের উইকেন্ড ম্যাগাজিন। তাতে সেরা সমর্থকের তালিকায় রাখা হয়েছে বাংলাদেশকে। হ্যাঁ, ভারত থেকেও এগিয়ে। সংখ্যায় হয়তো ভারতের সমর্থকরাই বেশি। কিন্তু উৎসাহ, উদ্দীপনা আর উদযাপনের ধরনে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকছে অনেকটাই। এই জায়গায় বাংলাদেশকে এখনই একটা ট্রফি দিয়ে দেওয়াই যায়!

সাউদাম্পটনের ‘ইন্ডিয়ান সামার’ রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী জাকির হোসেন সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে এসে আস্তানা গেড়েছেন এই বন্দরনগরীতে। খেলার জন্য ব্যবসার এতটা ক্ষতি করছেন? প্রশ্ন করতেই তার জবাব, ‘কী বলছেন ভাই! দেশের জন্য এটা কোনো ব্যাপারই না। হাজার পাউন্ডের এদিক সেদিক হলেও এই সময় তো আর ফিরে পাব না।’

তার সঙ্গে আসা শাওন বলছিলেন, ‘কেবল খেলাই নয়, এটা তো একটা উৎসব। আমার অনেক বন্ধু, স্বজনরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন। সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে দেশকে পাচ্ছি। এ অনেক বড় পাওয়া। এর জন্য বহু কষ্ট করা যায়।'

দেশীয় বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন শামু, শাহান, জহির, গালিবরা। ঢোল, খঞ্জনিসহ নানা রকম বাদ্যযন্ত্র অবশ্য গ্যালারিতে ঢোকাতে না পারায় আক্ষেপ তাদের। তবে সাজপোশাকের বিধিনিষেধ তো নেই। তাই কেউ পরে এসেছেন লুঙ্গি, কেউ গামছা বেঁধেছেন মাথায়। বাংলাদেশের গান গাইছেন, বাঁশিতে বাজাচ্ছেন বাংলাদেশের সুর।

লন্ডনে রাতের শিফটে কাজ করা সাব্বির চৌধুরীর কথাই ধরুন। ভোর রাতে বেরিয়ে এসেছেন সাউদাম্পটন। ভ্রমণের ক্লান্তি নিয়ে খেলা দেখে মধ্যরাতে ফিরেই চলে যাবেন কাজে। নিজ ঘরে ফিরবেন ভোরে। এতটা ঝক্কি কেবল বাংলাদেশের জন্য। 

বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যাওয়ার পথ অনেক কঠিন বাংলাদেশের। তবে এই পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলায় কেউই অখুশি নন। সুমনের কথা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি, ‘খেলায় জয়-পরাজয় আছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে তাতে গর্ব করতেই হয়। বাংলাদেশ অবশ্যই সেরা দলগুলোর একটি।’

সুমন সুপান্ত থাকেন লন্ডনে। বাংলাদেশের সবগুলো খেলারই টিকেট কিনেছেন। ভোরে গাড়ি চালিয়ে পৌঁছান একেকটা ভেন্যুতে। খেলার পর রাতেই ফেরেন নিজ ডেরায়। একই অবস্থা মান্না রায়ের। পরিবারসমেত খেলা দেখতে এলে সন্তানের স্কুল কামাই করাতে হয়। বুদ্ধি করে সেই ব্যবস্থাও করেন তারা। সুমন-মান্না দুজনেই বলছিলেন, বিশ্বকাপটা শেষ হয়ে গেলে বড় ফাঁকা লাগবে তাদের। বিলেতের একঘেয়ে জীবনে লাল-সবুজের রঙ নিয়ে এসেছে বিশ্বকাপ। মাস দেড়েকের জন্য তারা ফিরেছেন শেকড়ে। এই মেলা ভাঙলে বুকটা খাঁ খাঁ তো করতেই পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago