ঢাবির গবেষণা

দুধে ডিটারজেন্ট-এন্টিবায়োটিক-ফরমালিন, মশলায় টেক্সটাইল রঙ, তেল মানহীন

স্টার ফাইল ছবি

বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বেশ কয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মান নিয়ে যৌথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদ।

তাদের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে, পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধে ডিটারজেন্ট, এন্টিবায়োটিক ও ফরমালিন, গুঁড়া মশলায় (হলুদ) টেক্সটাইল রঙের উপস্থিতি এবং তেল (পামওয়েল, সরিষা, সয়াবিন), ঘি ও ফ্রুট ড্রিংকস বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নির্ধারিত মান উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

আজ (২৫ জুন) সকালে ঢাবির ফার্মেসি লেকচার থিয়েটারে (পিএলটি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক এবং বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে তিনি বলেন, “যদি খাদ্যপণ্যে যত্রতত্রভাবে এসব ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহৃত হয়, তাহলে আমরা বাঁচবো না, মরে যাবো।”

তিনি আরও বলেন, “মানুষ ও পশুর জন্য ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক সম্পূর্ণ আলাদা। গরুকে মানুষের এন্টিবায়োটিক দিলে, দুধ ও মাংসের মাধ্যমে তা আবার মানুষের শরীরেই প্রবেশ করে। যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বিষয়।”

গবেষকরা জানান, জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলিতেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক ‘লেভোফ্লক্সাসিন’ ও ‘সিপ্রোফ্লক্সাসিন’ এবং ছয়টিতে ‘এজিথ্রোমাইসিন’ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত মিলিয়ে ১০টি নমুনার মধ্যে অপাস্তুরিত দুধের একটি নমুনায় ফরমালিন সনাক্ত হয়েছে।

পাস্তুরিত দুধের নমুনাগুলোর মধ্যে তিনটিতে এবং অপাস্তুরিত দুধের নমুনার একটিতে ডিটারজেন্ট সনাক্ত করা হয়েছে।

পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনায় ‘ফ্যাট ইন মিল্ক’ এর বিবেচনায় ছয়টি নমুনা; ‘সলিড নট ফ্যাট’ বিবেচনায় পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের ১০টি নমুনার সবগুলো; ‘এসিডিটি এনালাইসিস’ বিবেচনায় পাস্তুরিত দুধের একটি নমুনা ও অপাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা; ‘টোটাল ব্যাকটেরিয়া কাউন্ট’-এ পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার সবগুলো, ‘কলিফর্ম কাউন্ট’-এ পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার দুইটি, ‘স্টেফাইলোকক্কাস স্পেসিজ কাউন্ট’ হারে পাস্তুরিত দুধের পাঁচটি নমুনার পাঁচটি মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

গবেষকরা আরও জানান, বাজার থেকে সংগৃহীত আটটি ব্র্যান্ডের শুকনা মরিচের গুঁড়া মশলার নমুনায় ‘জলীয় উপাদান’ বিবেচনায় দুইটি নমুনা এবং ‘এসিড ইনসল্যুবল অ্যাশ’ বিবেচনায় আটটি নমুনার সবগুলোই বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

এছাড়াও, আটটি ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া মশলার নমুনায় ‘জলীয় উপাদান’ এর হারে ছয়টি নমুনা বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

সংগৃহীত গুঁড়া হলুদের নমুনাগুলোর বেশ কয়েকটিতে ‘মেটানিল ইয়েলো’ নামের টেক্সটাইল রঙের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে, গবেষকরা জানিয়েছেন যে তারা এই পরীক্ষাটি পুনরায় পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হওয়ার পর প্রকাশ করবেন।

গবেষকরা জানান, খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া পাম অয়েলের ১০টি নমুনায় ‘স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু’, ‘পারক্সাইড ভ্যালু’, ‘ইনসল্যুবল ইমপিউরিটিজ’ থাকার হারে সবগুলোই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

সরিষার তেলের আটটি নমুনায় ‘স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু’ থাকার হারে তিনটি নমুনা, ‘পারক্সাইড ভ্যালু’ থাকার হারে চারটি নমুনা, ‘রিলেটিভ ডেনসিটি’ থাকার হারে চারটি নমুনা, ‘জলীয় উপাদান’ থাকার হারে সবগুলো নমুনাই মান উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত সয়াবিন তেলের আটটি নমুনায় ‘এসিড ভ্যালু’ থাকার হারে দুইটি নমুনা, ‘স্যাপনিফিকেশন ভ্যালু’ থাকার হারে সাতটি নমুনা, ‘পারক্সাইড ভ্যালু’ থাকার হারে পাঁচটি নমুনা, ‘আয়োডিন ভ্যালু’ থাকার হারে পাঁচটি নমুনা, ‘রিলেটিভ ডেনসিটি’ থাকার হারে তিনটি নমুনা, ‘মেটাল কনটেন্ট’ থাকার হারে ছয়টি নমুনা, এবং ‘জলীয় উপাদান’ থাকার হারে সবগুলো নমুনাই মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

গবেষকরা জানান, ঘি’য়ের সংগৃহীত আটটি নমুনায় ‘জলীয় উপাদান’ ও ‘আয়োডিন ভ্যালু’ ও ‘তিলের তেলের উপস্থিতি’ থাকার হারে সবগুলো নমুনা বিএসটিআইয়ের নির্ধারিত মান উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ফ্রুট ড্রিংকসের ১১টি নমুনায় ‘টোটাল প্লেট কাউন্ট’ বিবেচনায় সাতটি নমুনা, ‘কলিফর্ম কাউন্ট’ বিবেচনায় তিনটি নমুনা মানোত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া, সবগুলো নমুনাতেই বিএসটিআই কর্তৃক নিষিদ্ধ কৃত্রিম মিষ্টিকারক ‘সাইক্লোমেট’ এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আরো পড়ুন:

‘যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়াবো সেই সরিষার মধ্যেই ভূত’

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago