দেবে গেলো নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের বিম
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশনের নির্মাণাধীন ভবনের দুটি বিম দেবে গেছে। এরপরও কাজ চালিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং এলাকাবাসী এতে বাধা দেন। পরে তারা বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে অবহিত করেন। এর প্রেক্ষিতে ভবন নির্মাণের কাজ সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেয় জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯২২ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয়’শ। অবকাঠামো সঙ্কটের কারণে বিদ্যালয়টির চারতলাবিশিষ্ট ওই ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় অধিদপ্তর। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ভবন নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হয়।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নে এটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬৭ টাকা। তবে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১৮ ভাগ কমে ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫২২ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভবনের নিচতলার ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়। এরপর দুটি বিম দেবে যায়। পাশাপাশি বিম দুটির ওপরের ছাদের অংশও দেবে যায়। এরপর সিমেন্ট-বালু মিশিয়ে ওই বিম দুটির দেবে যাওয়া অংশ সমান্তরাল করা হয়। দেবে যাওয়া ছাদের অংশেও একইভাবে বালু-সিমেন্ট দিয়ে সমতল করা হয়।
গত ২২ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মিতব্য ভবনটির পশ্চিম পাশের ছাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিমের মাঝামাঝি অংশ দেবে গেছে। বিম সমান্তরাল করতে সিমেন্ট ও বালুর প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। দেবে যাওয়া ছাদের অংশও একইভাবে প্রলেপ দিয়ে সমতল করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য রমজান আলী বলেন, একটি ভবনের মুল কাঠামো যদি দুর্বল হয়, তাহলে ভবনটি ভেঙে কিংবা ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ঢালাই দেওয়ার সময় ছাদের দুটি বিম প্রায় সাত ইঞ্চি নিচের দিকে দেবে গেছে। একই সঙ্গে ছাদের ওই অংশও নিচের দিকে দেবে গেছে। এভাবে ক্রুটিযুক্ত রেখে ভবন নির্মাণ করা হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।
ব্যবস্থাপনা কমিটির অপর সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, দুটি বিম দেবে যাওয়ার পরও ত্রুটিপূর্ণ ওই ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব সামছুন্নাহার বলেন, বিম দেবে যাওয়ায় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কী না, তা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীই নির্ধারণ করতে পারবেন। তবে এই ক্রুটির কারণে ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ছাদ এবং বিমে রড শিডিউল অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা ঢালাইয়ের আগে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। সেন্টারিংয়ের (ঠেকনা) কয়েকটি বাঁশ দেবে যাওয়ায় বিমের সামান্য অংশ দেবে যায়। তবে এতে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকার কথা নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আলতাব হোসেন জানান, বিদ্যালয়টির বিম দেবে যাওয়ার বিষয়টি জানার পর তিনি ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এরপর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আসছে জুলাই মাসে একটি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশল দল সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
Comments