এভারেস্ট জয় অথবা মৃত্যু!

এ বছরের এভারেস্ট আরোহণের দ্বিতীয় মৌসুম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে নেপাল পর্যটন বিভাগের মতে চলতি বছরটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে চতুর্থ সর্বাধিক বিপদজনক মৌসুম।
Everest
এভারেস্ট পর্বত চূড়ায় আরোহীদের জট। ছবি: সিএনএন থেকে নেওয়া

এ বছরের এভারেস্ট আরোহণের দ্বিতীয় মৌসুম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে নেপাল পর্যটন বিভাগের মতে চলতি বছরটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে চতুর্থ সর্বাধিক বিপদজনক মৌসুম।

এভারেস্ট চূড়ায় ওঠার জন্য সাধারণত বছরে দুটি সময়কে সুবিধাজনক মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এপ্রিল থেকে মে এবং জুন এর মাঝামাঝি থেকে আগস্ট পর্যন্ত। তবে এবছর ২৩ মে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং অতিরিক্ত আরোহী হওয়ায় এভারেস্ট আরোহীদের জট দেখা দেয়। এ ঘটনায় নিহত হন ১১ জন পর্বত আরোহী।

আড্রিয়ান বালিংগার, একজন পর্বত আরোহী ও মাউন্টেন গাইড। তিনি ২৩ মে-তে এভারেস্টে এই জটের একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠান অ্যালপেনগ্লো এক্সপেডিশনের হয়ে শতাধিক আরোহীকে নিয়ে সেদিন তিনি এভারেস্ট চূড়ায় যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিলেন।

“সেদিন ক্যাম্পে আমরা দেখলাম শতাধিক আরোহী চূড়ায় উঠার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। একজন গাইড হিসেবে সেই ভিড়ের মধ্যে আমার টিমের আরো ১০০ আরোহীকে নিয়ে ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার ‘মৃত্যুপুরী’-তে পাঠানোর প্রশ্নই আসে না”, বলেন বালিংগার।

‘মৃত্যুপুরী’ বলতে পর্বতারোহীরা আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতাকে বোঝান যেখানে বাতাসে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন থাকে না।

ভিড়ে ঝুঁকি এড়াতে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও বালিংগার তার দলসহ ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেদিনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে এক সাক্ষাৎকারে এসব জানান তিনি।

তার মতে, ১০০ আরোহীর সঙ্গে নিজের দলকে পাঠানোর চেয়ে পরেরদিন খারাপ আবহাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া একজন মাউন্টেন গাইডের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।

এভারেস্টে একসাথে এতোজনের মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ নিয়েও কথা বলেন বালিংগার। কম খরচের প্যাকেজগুলোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শেরপাদের ছাড়াই এভারেস্ট ওঠার ঝুঁকি নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা আরোহীদের ক্যাম্প বানাতে ও সঠিকভাবে ভার বিন্যস্ত করতে সাহায্য করেন। আবার এসব কম খরচের প্যাকেজগুলোতে আরোহীদের প্রশিক্ষণ আর অভিজ্ঞতারও ঘাটতি থাকে।

সারাবিশ্বে বাণিজ্যিককরণের বর্তমান বাস্তবতার ভিত্তিতেই এই বাজেটগুলো তৈরি করা হয়। ফলে ভিড়ের সময় পর্বতারোহীদের ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।

তবে পর্বতে ওঠার সময় শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি ওই প্রতিকূল পরিবেশে মানসিক শক্তি ধরে রাখতে পারাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নেপালের পর্যটন বিভাগের মহাপরিচালক দানদুরাজ ঘিমাইরে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে আবহাওয়ার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে দাবি করেন।

তিনি বলেন, এই পরিমাণ উচ্চতায় ভালো আবহাওয়া আসে খুব অল্প সময়ের জন্য। ওই অল্প সময়ে এতো বেশি আরোহীর চূড়ায় উঠতে আর নেমে আসতে তাড়া দেওয়ার ফলে এই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

বালিংগার তার পৃথক সাক্ষাৎকারে জানান যে, তার প্রতিষ্ঠান পাঁচ বছর আগেই নেপাল থেকে এভারেস্টে উঠার পথ বাদ দিয়ে তিব্বতের দিক দিয়ে এভারেস্টে উঠার রাস্তা বেছে নিয়েছে। আর এবছর এভারেস্টে ১১টি মৃত্যুর মধ্যে নয়টিই ঘটেছে নেপালের দিকে।

তবে নেপালের ট্যুরিজম বিভাগের মহাপরিচালক আরো বলেন, পর্বতে দায়িত্বরত সহযোগীদের অভিজ্ঞতার অভাবটি এখানে মূল সমস্যা না। মূল সমস্যা হলো আরোহীদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাব।

অনভিজ্ঞ আরোহীদের থামাতে কর্তৃপক্ষের বিশেষ কিছু করার থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরোহীদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে: আমি কি যথেষ্ট অভিজ্ঞ আর আত্মবিশ্বাসী?

তিনি মনে করেন, এভারেস্ট বিজয় কোনো রসিকতা বা বিলাসিতা নয়। পর্বতের আবহাওয়া ও উচ্চতায় এটি হয় জয় না হয় মৃত্যু।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago