চার সেমিফাইনালিস্টের কার শক্তি কি, কে ভুগছে কোথায়

১০ দলের রাউন্ড রবিন লিগ শেষ। সেরা চার দল আছে সেমিফাইনালের সামনে। মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে টেবিলের এক নম্বরে থাকা ভারত খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
Morgan-Kohli-Fince-Williamson
ছবি: আইসিসি, Courtesy: ICC

১০ দলের রাউন্ড রবিন লিগ শেষ। সেরা চার দল আছে সেমিফাইনালের সামনে। মঙ্গলবার প্রথম সেমিফাইনালে টেবিলের এক নম্বরে থাকা ভারত খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড।

ফাইনালের ওঠার লড়াইয়ের আগে টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্সের বিচারে দেখে নেওয়া দলগুলোর হালচাল:

ভারত

দুর্দান্ত পেস আক্রমণ

এবার বিশ্বকাপে স্পিনাররা সেভাবে বাজিমাত করতে পারেননি। কোনো দলের স্পিনাররাই উইকেট প্রতি ন্যূনতম ৪০ রানের নিচে দিতে পারেননি। সবচেয়ে ভালো করা আফগান স্পিনাররা ৪১.৫৯ গড়ে নিয়েছেন ২৭ উইকেট। কিন্তু আফগানিস্তান রাউন্ড রবিন লিগ শেষ করেছে একদম তলানিতে থেকে।

এদিক থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে ভারত। তাদের পেসাররাই এখন পর্যন্ত কাঁপিয়ে চলেছেন বিশ্বকাপ। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামিরা ২৩.৫০ গড়ে নিয়ে ফেলেছেন ৫১ উইকেট।

ভারতকে সেমিফাইনালে তোলার পেছনেও কাজ করেছে দলটির পেস শক্তি।

টপ অর্ডারের দুরন্ত শুরু

পুরো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়েছে বিরাট কোহলির দল। প্রথম পাওয়ার প্লেতে অবশ্য বেশ দেখেশুনে খেলেন ভারতের ওপেনাররা। এই সময় ওভারপ্রতি ৪.৬৫ করে রান নিয়েছেন তারা, যা টুর্নামেন্টের প্রথম পাওয়ার প্লে গড় রান রেট ৪.৯৩ এর চেয়ে কম।

শুরুতে মন্থর হলেও ক্ষণে ক্ষণে পাখনা মেলা রোহিত শর্মার কারণেই মূলত এই ধারা ভারতের। প্রতি ম্যাচেই ভারতকে শক্ত ভিত পাইয়ে দেওয়া রোহিতের কারণে প্রতি ৯৩ রান পর পর একটি উইকেট খুইয়েছে ভারত।

লেজের দিকে নড়বড়ে

টপ অর্ডার যেমন ভারতের বড় ভরসা, লোয়ার অর্ডার তেমনি উদ্বেগের কারণ। এবার বিশ্বকাপে ভারতের টপ অর্ডারকে কাবু করতে পারলেই ভুগছে দলটি। ডেথ ওভারে আসছে না বড় কোনো ঝড়।

এবার অংশ নেওয়া ১০ দলের কোনোটিরই টেল এন্ডাররা ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ভারতের চেয়ে মন্থর খেলেনি। এই সময়ে ভারতের টেল এন্ডারদের এনে দেওয়া সম্মিলিত রান রেট ৪.৭১।

এবার বাকি সব দলের লোয়ার অর্ডাররা ২৮ বার ১২০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট নিয়ে রান করেছেন। ভারতের কেবল হার্দিক পান্ডিয়া ৪৬ রানের এক ইনিংসে সেটা করেছিলেন।

অস্ট্রেলিয়া

ওপেনাররা ‘ভাইটাল’

দারুণ ফর্মে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার আর অ্যারন ফিঞ্চ প্রায় প্রতি ম্যাচেই পাইয়ে দিচ্ছেন দুরন্ত শুরু। তাতে ভর করে ছুটছে অস্ট্রেলিয়া। এবার বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটির গড় ৫৫। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান আর বাংলাদেশকে তারা হারিয়েছে ওপেনিং জুটির ওপর ভর করেই।

ওয়ার্নার আর ফিঞ্চ দুজনেই আছেন সেরা পাঁচ রান সংগ্রাহকের তালিকায়।

ম্যাক্সি অন ফায়ার

অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার মিডল অর্ডারে বিস্ফোরক গ্লেন ম্যাক্সওয়েল রাখছেন পার্থক্য গড়ে দেওয়ার মতো ভূমিকা। ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান লিগ পর্বের ম্যাচগুলোতে প্রথম ১৫ বলেই স্ট্রাইক রেট রাখছেন ১৯৫.৪৫ করে। কেবল পান্ডিয়া তার কাছাকাছি আছেন। ম্যাক্সওয়েলের কম বলের ব্যাটিং বিস্ফোরণ সহ্য করেছে বাংলাদেশও।

সবচেয়ে বড় কথা ডট বল একদমই কম খেলছেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে তার চেয়ে কম ডট বলের হার কেবল ইংল্যান্ডের জস বাটলারের (২৭.৮৪%)।

বোলিংয়ে গভীরতা নেই

মিচেল স্টার্ক ৯ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত আসরের সেরা বোলার। প্যাট কামিন্স পেয়েছেন ১৩ উইকেট। জেসন বেহরেনডর্ফের রয়েছে ৯ উইকেট। মার্কাস স্টয়নিস চোটে পড়ায় এরপর আর তেমন কেউ রাখতে পারছেন না ছাপ। ম্যাক্সওয়েল পুরো আসরে ৩২ ওভার বল করেও উইকেট পাননি। ফলে অনিয়মিত বোলার হয়েও ফিঞ্চ আর স্টিভেন স্মিথকেও হাত ঘোরাতে হচ্ছে, কিন্তু পুষিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না ঘাটতি।

ইংল্যান্ড

প্রথম পাওয়ার প্লে 

ইংল্যান্ডের মতো দুর্দান্ত কায়দায় প্রথম পাওয়ার প্লে আর কেউ ব্যবহার করতে পারছে না। প্রথম উইকেটে তাদের গড় ৫৪.২২। আবার এই সময়ে রান রেট ৫.৪৩। গড় আর রান রেট দুটোই ঠিক রাখায় ইংল্যান্ডের কাছে কেউ নেই। জনি বেয়ারস্টো আর জেসন রয়ের জুটিই গড়ে দিচ্ছে ইংল্যান্ডের জেতার পথ।

মাঝের ওভারেও থাকছে গতি

কেবল শুরুতে নয়, বাউন্ডারি পিটিয়ে ইংলিশরা মাঝের ওভারেও রাখছে একই তাল। ১১ থেকে ৪০ ওভারে বাউন্ডারির হারে কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে (১০.৭০%) থেকে পিছিয়ে আছে তারা (১০.৩০%)।

আর তাদের ব্যাটিংয়ের লোয়ার অর্ডার! সে তো তাণ্ডব তোলার জন্য যথেষ্ট। ওভার প্রতি গড়ে ৬.১৯ রান নিয়ে তাদের লেজের দিকের ব্যাটসম্যানরা দুনিয়ার সেরা।

ঘাটতি বোলিংয়ে

প্রথম বিশ্বকাপ জেতার পথে কেবল বোলিংয়েই ঘাটতি আছে ইংল্যান্ডের। অন্য তিন সেমিফাইনালিস্টের চেয়ে প্রতিপক্ষকে আউট করতে বেশি খাটুনি গেছে ইংলিশ বোলারদের।

নিউজিল্যান্ড

টানছেন উইলিয়ামসন

অন্যরা যেখানে সফল নিউজিল্যান্ড সেখানেই ভুগছে। এবার বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে মোট ১৩ উইকেট হারিয়েছে তারা। শুরুর ধাক্কা অবশ্য প্রতিবারই সামলাচ্ছেন কেন উইলিয়ামসন।

টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে ৪৮১ রান করে দলকে টানছেন কিউই অধিনায়ক।

মাঝের ওভারের বোলিং

মাঝের ওভারে ব্যাটসম্যানরা জুটি বাঁধায় পারদর্শিতা দেখানোর ফলে অন্য দলের বোলাররা যেখানে ভুগছে, ঠিক সেখানে আবার সফল নিউজিল্যান্ড। ১১ থেকে ৪০ ওভারের মধ্যে টুর্নামেন্টে সবচেয়ে কম খরুচে কিউই বোলাররা। এই সময়ে মাত্র ৪.৭৪ গড়ে রান করে দিয়েছে তারা। প্রতি ২৮.৬৩ রান পর পর পেয়েছে উইকেট।

এই সময়ে কলিন গ্র্যান্ডহোমের স্লো মিডিয়াম আর লোকি ফার্গুসনের গতিময় বোলিং কিউইদের দিচ্ছে বৈচিত্র্য।

স্পিনররা সাদামাটা

লিগ পর্বে মাত্র ৭ উইকেট নিতে পেরেছেন কিউই স্পিনাররা। সেমিফাইনালে এই জায়গা হতে পারে উদ্বেগের। মিচেল স্যান্টনার পাকিস্তানের বিপক্ষে কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে ভালো করেছিলেন। কিন্তু তার বোলিং থেকেও বাদ বাকি ম্যাচে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ধন্দে ফেলার মতো কার্যকারিতা দেখা যায়নি।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বোলারদের কীভাবে ম্যানেজ করেন উইলিয়ামসন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago