সাকিবের কৃতিত্ব পাওয়া কোচিং স্টাফরাই তো নেই

Steve Rhodes-Shakib Al Hasan
কোচ স্টিভ রোডস, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

১৭ জুন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ৩২১ রান ৪২ ওভারেই টপকে ফুরফুরে মেজাজে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন সাকিব আল হাসান। এত বড় রান তাড়া, অথচ কি অনায়াসে করলেন কাজটা। কোনো রকমের দুর্ভাবনা ছাড়া এতটা সহজ ব্যাটিংয়ের পেছনের গল্প শুনতে আগ্রহী ছিলেন সবাই। জানাতেও আগ্রহী সাকিব একদম নির্দিষ্টভাবে বললেন, কোচিং স্টাফের কারণেই না-কি এসেছিল এমন নির্ভার আমেজ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় রান তাড়ার আগে আয়ারল্যান্ড সফরে রান তাড়ায় সফলতার প্রসঙ্গ টেনে সাকিব সেদিন বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় কোচিং স্টাফদের অনেক কৃতিত্ব (বড় রান তাড়ার) দেওয়া উচিত। আগে আমরা প্যানিক করে ফেলতাম ড্রেসিং রুমে। এখন সবচেয়ে ভালো জিনিস হচ্ছে কোচিং স্টাফরা এত ঠাণ্ডা থাকে যে আমাদের আসলে আতঙ্কিত হওয়ার সুযোগ আসে না। যখন দেখি যে কেউ রেডিও শুনছে বা গল্প করছে। কোনো পর্যায়ে মনে হয় না যে ওরা টেনশন নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আতঙ্ক ব্যাপারটা ছোঁয়াচে, একজন আক্রান্ত হলে বাকিরাও হয়। তো এই জায়গায় তারা একটা নির্ভার আমেজ দিচ্ছে বলে বড় রান তাড়া করতে পারছি।’

বিশ্বকাপে সে ম্যাচ জিতে সেমির স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে শেষটা হতাশায় হওয়ায় সব কেমন বদলে গেল। ড্রেসিং রুমে নির্ভার হাওয়া ছড়িয়ে দেওয়া কোচিং স্টাফরা হয়ে গেলেন বোঝা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর লর্ডসের ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে রোডস, ওয়ালশদের বিমর্ষ চেহারা বলে দিচ্ছিল খারাপ কিছুর আভাস। বিশ্বকাপ শেষ হতেই সেই আভাসমতোই প্রধান কোচ স্টিভ রোডসের চাকরি গেল। পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশের চুক্তি শেষ ছিল বিশ্বকাপেই। সেই চুক্তি যে নবায়ন হচ্ছে না তা-ও এখন পরিষ্কার। বিশ্বকাপের সময় চোট সংকট দূর করতে না পারায় ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহনের সঙ্গেও সম্পর্ক চুকে যাচ্ছে। স্পিন কোচ সুনীল যোশীরও না-কি বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। 

বাকিদের নিয়ে না হলেও মূলত আলোচনায় স্টিভ রোডসের বিদায়। এই ইংলিশ কোচ মাত্রই এক বছর আগে দলে যোগ দিয়েছিলেন। গ্যারি কারস্টেনকে ধরে-টরে তাকে জোগাড় করেছিল বিসিবি। ইংল্যান্ডের লোক বলে ইংলিশ কন্ডিশনের বিশ্বকাপে তাকে ঘিরে আশা দেখছিল বিসিবি। এই এক বছরে তার অধীনে ৩০ ওয়ানডে খেলে ১৭টিতে জিতেছে বাংলাদেশ, আট টেস্টে জয় তিনটিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম-অ্যাওয়ে দুই সিরিজেই রঙিন পোশাকে মিলেছে ভালো ফল। তবে নিউজিল্যান্ড সফরে দলের দশা হয় বেহাল।

সেটা সামলে আয়ারল্যান্ডে আবার ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু আসল জায়গায় যে ফেল। হ্যাঁ, বিশ্ব ক্রিকেটের নামজাদা অনেকেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বাহবা দিলেও বাংলাদেশ তো ফেলই। যদি শেষ ম্যাচটায় পাকিস্তানকে হারনো যেত তাহলে হয়তো ঠিক অতটা ব্যর্থ বলার উপায় থাকত না। কিন্তু শেষ ম্যাচে বাজে হারের পর ছোটখাটো একটা ঝড়ই যে গেছে।

তার বেশিটাই গেল অবশ্য কোচিং স্টাফদের উপর দিয়ে। আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত রোডসের চুক্তি থাকলেও তা আর বাড়াতে চাইল না বিসিবি। অবশ্য সে ইঙ্গিত বিশ্বকাপের সময়েই মিলেছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে কোচের ভুল পর্যবেক্ষণের কারণে উইকেট পড়তে ভুল করেছিল বলে তখন টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্রে জানা গিয়েছিল। সাকিব কোচিং স্টাফ নিয়ে স্বস্তিতে থাকার কথা বললেও সিনিয়র ক্রিকেটারদের কেউ কেউ প্রধান কোচের দক্ষতা নিয়ে ছিলেন সন্দিহান।

কিন্তু কোচের ঘাটতি নিয়ে কোনো কিছুই খোলাসা করেনি বিসিবি। কেন চুক্তির আগেই রোডসকে বিদায় করা হয়েছে, তার কারণ স্পষ্ট করেনি বোর্ড।

এই সময়ে আচমকা আবার কোচবিহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশ দলের জন্য মোটেও কোনো সুখবর নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের কারণে মন মতো কোচ পাওয়া দুষ্কর। যে দু-একজন ছিলেন তারাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অন্যদলে। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে ফেরানোর আলাপ শুরু হয়েছে এর মধ্যে। সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাথুরুসিংহের তেতো সম্পর্ক থাকায় সেই আলাপ কতটা সফল হবে তা নিয়ে থাকছে প্রশ্ন। চলতি বছরে ভারতে পূর্ণাঙ্গ সফরে যাবে বাংলাদেশ, আগামী বছর আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই সময়ের আগে মন মতো কোচ পাওয়া আর দলের আদল ঠিক করাটা এখন বেশ বড় চ্যালেঞ্জ বিসিবির সামনে।

Comments

The Daily Star  | English

Türk concerned over changes in Bangladesh's legislation banning activities of parties

"This [the changes in legislation] unduly restricts the freedoms of association, expression, and assembly," says the UN high commissioner for human rights

1h ago