ফাইনালে ইংল্যান্ডকে দেখেই বিশ্বকাপের আঁচ ইংলিশদের

বিশ্বকাপ নিয়ে গ্যালারিতে উত্তাপ থাকলেও রাস্তায় মানুষের মধ্যে তেমন কোন মাতামাতি ছিল না। কেবল উপমহাদেশীয় দলগুলোর খেলা হলে মাঠের বাইরেও দেখা মিলত উন্মাদনা। কিন্তু ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠে যাওয়ায় হাওয়া অনেকটাই বদল হচ্ছে। বিশ্বকাপ নিয়ে বেড়েছে  আগ্রহ। মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে দিতে সম্প্রচার সত্ত্ব পাওয়া স্কাই স্পোর্টস চ্যানেলও ঘোষণা দিয়েছে ফাইনাল ম্যাচটি তারা সম্প্রচার করবে বিনামূল্যে।

স্কাই স্পোর্টসের এই ঘোষণাও যেন বিশ্বকাপ নিয়ে মাতামাতি বাড়িয়েছে খানিকটা। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ব্যাপারটা শুনতে হয়ত অদ্ভুতই লাগবে। বাংলাদেশে যেমন ক্যাবল লাইন সংযোগ করলেই দেখা যায় প্রয়োজনীয় সমস্ত চ্যানেল। ব্রিটেনে তেমনটি নয়। এখানে সব চ্যানেল কেবল লাইনে বিনামূল্যে নেই। তারজন্য করতে হয় সাবস্ক্রিপশন। পছন্দের চ্যানেল দেখতে প্রতি মাসে  গুনতে হয় অতিরিক্ত মোটা অঙ্কের টাকা। যেমন স্কাই স্পোর্টসের পুরো প্যাকেজ পেতে প্রতি মাসে খরচ করতে হবে বাংলাদেশি টাকায় হাজার পাঁচেক টাকা। সেই সাবস্ক্রিপশন আবার কয়েকদিনের জন্য নিয়ে কেটে দিলাম এমনও না। একবার সাবস্ক্রিপশন নিলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে তা।  বেশিরভাগ মানুষ তাই স্কাইয়ের ওই ফাঁদে যান না। এবার যেমন বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি খেলা দেখার জন্য অনলাইনের বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারের করেছেন। তাতে হ্যাপাও পোহাতে হয়েছে অনেক।

টিভিতে সহজে খেলা দেখার সুবিধা না থাকায় বিশ্বকাপও তেমন আবেদন তৈরি করতে পারছিল না। এমনিতে ক্রিকেট এখানে অতটা জনপ্রিয় নয়, তার উপর সহজে চাইলে তা দেখাও যায় না। শুধু শুধু তো আর হাওয়া গরম হয় না।

স্বাগতিকরা ফাইনালে উঠে যাওয়ায় সবার মধ্যে সেই আমেজ ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত স্কাই স্পোর্টসের। এখানকার টেরিস্টারিয়াল চ্যানেল ‘চ্যানেল ফোর’ স্কাই স্পোর্টসের মধ্যমে ১৪ জুলাই ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল খেলা সরাসরি দেখাবে।

এ তো গেল টিভির বিষয়। পত্রিকাগুলোতেও পেছনের পাতা ছেড়ে বিশ্বকাপ উঠে আসছে প্রথম পাতায়। জেসন রয়দের ছবি আগে কেবল স্পোর্টস পাতায় গুরুত্ব পেত। এখান প্রথম পাতাতেও পাচ্ছে ঠাঁই। ট্রেনে, বাসে মানুষজন খুঁটিয়ে বিশ্বকাপের খবর পড়ছেন। ইংল্যান্ড বড় একটা কিছু জিততে চলেছে, এই আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সবার মধ্যে।

ঠিক এক বছর আগে ১১ জুলাই ক্রোয়েশিয়ার কাছে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমিতে হেরে ‘ইটস কামিং হোম’ স্লোগান থেমেছিল ইংলিশদের। এক বছর পর এই দিনেই ফিরে এসেছে সেই স্লোগান। ২৭ বছর পর ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের জন্ম দিয়েও যাদের জেতা হয়নি যে কাপ। এখানকার মানুষজন ভাবছেন এবার সেটাই হতে যাচ্ছে।

লন্ডনের পাতাল রেলের জুবিলি লাইন ধরে লর্ডসের মাঠে আসতে কথা হচ্ছিল লিওর সঙ্গে। ক্রিকেট খেলাটা মোটামুটি বুঝেন। কিন্তু অতটা উন্মাদনা নেই তার। কিন্তু ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠায় পত্রিকার পাতায় ইংল্যান্ড অধিনায়ক মরগ্যানের খবর পড়ছিলেন। ২৭ বছর পর ইংল্যান্ড বড় একটা কিছু জেতার অবস্থায়, এই কারণেই নাকি রোববার ছুটির দিনে খেলা দেখার আগ্রহ তার, ‘যদি টিকেট পাই লর্ডসে যাব। জানেনই তো ইংল্যান্ডের জন্য উল্লাস করতে মজাই লাগবে। তবে টিকেট না পেলে কোন পাবে বসে দেখার ইচ্ছা আছে।’

ফাইনালে উপমহাদেশ নেই। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের বড় অংশের সমর্থকরা বিশ্বকাপ থেকে আগ্রহ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের অভিবাসী হওয়ায় সেই টান থেকে তারা চান ইংল্যান্ডই জিতুক বিশ্বকাপ।

শাহ হোসেন যেমন বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ আউট হওয়ার পর থেকেই মনপ্রাণে চাইছি ইংল্যান্ডই জিতুক। কারণ এটাও তো আমাদের দেশ।’

ফুটবল মৌসুম নেই। অন্য বড় কোন ইভেন্টও নেই। গ্রীষ্মের ছুটির আগে আগে এই সময়টাই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল হুট করেই আগ্রহের তালিকায় এসেছে গেছে এখানকার মানুষদের। যা যতটা ক্রিকেটের জন্য, তারচেয়েও বেশি ইংল্যান্ড আছে বলেই।

Comments

The Daily Star  | English

Public gatherings banned in key Dhaka areas from tomorrow: ISPR

Restrictions imposed to maintain order near Chief Adviser’s Office, military zones

2h ago