স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সেই স্কেচ

তার দুটি শিল্পকর্ম দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে লাভ করেছে অমরত্ব। একটি শিল্পকর্মে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার হোতা কুখ্যাত ‘কসাই’ ইয়াহিয়া খানের কুৎসিত মুখচ্ছবি ‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’। আর দ্বিতীয় শিল্পকর্মটি করা হয়েছিলো সামরিক শাসক এইচএম এরশাদকে নিয়ে।
Qamrul Hassan Sketch

তার দুটি শিল্পকর্ম দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে লাভ করেছে অমরত্ব। একটি শিল্পকর্মে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার হোতা কুখ্যাত ‘কসাই’ ইয়াহিয়া খানের কুৎসিত মুখচ্ছবি ‘এই জানোয়ারকে হত্যা করতে হবে’। আর দ্বিতীয় শিল্পকর্মটি করা হয়েছিলো সামরিক শাসক এইচএম এরশাদকে নিয়ে।

মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে এরশাদের একটি স্কেচ (রেখাচিত্র) এঁকেছিলেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী পটুয়া কামরুল হাসান যা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভিন্নমাত্রা যুগিয়েছিলো।

‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’ শিরোনামের সেই স্কেচটি শিল্পীর পেশাগত জীবনের পাশাপাশি দেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে চলছিলো ২য় জাতীয় কবিতা উৎসব। পটুয়া কামরুল হাসান সেই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শামসুর রাহমান, ফয়েজ আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক, রফিক আজাদসহ দেশের প্রখ্যাত কবিরা।

কবি মোহন রায়হান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সেদিন অনুষ্ঠান চলাকালে কবি রবীন্দ্র গোপ আচমকা পটুয়ার হাতে তুলে দিলেন একটি স্কেচের খাতা। এরপর, সেই খাতায় আঁকতে শুরু করে তা শেষও করেন তিনি।

তারপর, হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন কামরুল হাসান। পড়ে যান মাটিতে। তক্ষুনি তাকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মোহন আরো জানান, এরপর কামরুল হাসানের মরদেহ চারুকলা ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, মাঝরাতে শোনা যায় লাশ নিয়ে যেতে পারে সরকার।

“তাই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বলি লাশ পাহারা দিতে। সেসময় আমরা শুনতে পাই কামরুল হাসান কিছু এঁকেছেন এবং তা রয়েছে রবীন্দ্র গোপের কাছে। আমরা বেইলি রোডে তার বাসায় যাই। স্কেচটি সংগ্রহ করি।”

সে রাতেই বিকল্প প্রিন্টিং প্রেস থেকে স্কেচটি ছাপানো হয় পাঁচ রিম কাগজে। স্কেচেরে কপিগুলো পরদিন বিতরণ করা হয়। এরপর আরো ১০ হাজার কপি ছাপা হয়েছিলো বলে জানান মোহন রায়হান।

“সেটিই ছিলো কামরুল হাসানের শেষ শিল্পকর্ম। এটিই ইতিহাস। তার সেই শিল্পকর্মটি এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করেছিলো,” যোগ করেন তিনি।

রবীন্দ্র গোপ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমি আমার কবিতার খাতা গুরুকে (কামরুল হাসান) দিয়ে অনুরোধ করেছিলাম কিছু আঁকতে। তিনি তখন সেই স্কেচটি এঁকেছিলেন।”

 

Comments

The Daily Star  | English

Protesters stage sit-in near Bangabhaban demanding president's resignation

They want Shahabuddin to step down because of his contradictory remarks about Hasina's resignation

41m ago