এজবাস্টনের সেই সেমিফাইনালকেও ছাপিয়ে অনেক উপরে

ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা ম্যাচ কোনটি? এত দিন যে কেউ এক নিমিষে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা সেমিফাইনাল বেছে নিতেন। ক্রিকেটপ্রেমী যে কারোরই চোখ বন্ধ করলে এখনও সেই ম্যাচের ছবি ভেসে ওঠার কথা। তবে বিশ বছর পর কাল লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালে যা হলো, তার সঙ্গে আর কোনো কিছুরই যে তুলনা চলছে না। রোমহর্ষক, অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় কিংবা যেন কল্পলোকের কোনো ক্রিকেট ম্যাচ। ঘটনার পর ঘটনায়, নাটকীয়তায় নিরানব্বইয়ের এজবাস্টনকে ছাপিয়ে দুহাজার উনিশের লর্ডস হয়ে থাকল অলৌকিক, অমর।

সেবার বারবার রঙ বদলানোর পর ল্যান্স ক্লুজনারের বীরত্ব এবং শেষটায় অবিশ্বাস্য নাটকীয়তায় অ্যালান ডোনাল্ডের রানআউট। ম্যাচ টাই। কিন্তু সুপার সিক্সে রান রেটে সুতো পরিমাণ এগিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া। আর এবার বাউন্ডারি বেশি মেরে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।

নিরপেক্ষ দর্শক সেবারও মানতে পারেননি, এবারও পারছেন না এরকম নিয়ম। সেবার যেমন শেষটা রানআউটে, এবারও তাই। কিন্তু তার আগে আরও এক রান আউটের মহাঘটনা। তারও আগে ওভারথ্রোর বিতর্ক, আক্ষেপ। পরতে পরতে উত্তেজনা। কেউ কোনো দিন কোনো ক্রিকেট ম্যাচে এতটা উথাল-পাথাল সময় কি দেখেছে? নিউজিল্যান্ড ২৪১, ইংল্যান্ড ২৪১। সুপার ওভারে দুদলই ১৫। তবু না-কি নিয়মের খাতিরে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড! কেউ হারবেই না এমন ম্যাচে একটা নিষ্ঠুর সমাধানে আসতে হলো।   

কেউ ফেসবুকে-কেউ টুইটারে, সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা এক নিমিষে রায় দিলেন এই ম্যাচের শ্রেষ্ঠত্বের। প্রথম দুবারের বিশ্বকাপ জেতা ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডসের মতে, ‘ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ম্যাচ এটি।’

উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনালের সময় এসেক্সে-নটিংহ্যামশায়ার কাউন্টি ম্যাচের ফাঁকে ট্রেন্টব্রিজের ড্রেসিংরুমে জড়ো হয়েছিলেন স্টুয়ার্ড ব্রড, রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা। নিজেদের খেলা ফেলে এক চোট নাচতে হয়েছে, উত্তেজনায় কাঁপতে হয়েছে। ব্রড টুইটারে কোনো রাখঢাক না রেখেই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘হ্যাঁ, এটিই ক্রিকেট ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ম্যাচ।’

বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা থেকে কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন, কে বাদ গেলেন এই ম্যাচকে শ্রেষ্ঠ বলতে? পরিস্থিতি, বড় মঞ্চ, চাপ সব মিলিয়ে যেমন ব্যাটিং হলো, যেমন বোলিং হলো, যে ক্ষিপ্রতায় সমান তালে ফিল্ডিং হলো, সবই এই ম্যাচকে রাখবে সবার উপরে। এই ম্যাচের পর আপনি বলতে পারেন, 'চূড়ান্ত মানের ক্রিকেট ইহাকেই বলা হয়।'

আর যারা মাঠে খেলেছেন। আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন, ডুবেছেন হতাশায়, পুড়েছেন আক্ষেপে। তারা কি বলছেন? বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান তো চিমটি কেটেও ঘোর কাটাতে পারছেন না, ‘এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখছি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না কি হলো। আমরা পেরে গেছি। সবাই দেখেছেন কী অবিশ্বাস্য ক্রিকেট ম্যাচ ছিল, যেখানে দুই দলকে আলাদা করার উপায় ছিল না।’

‘আমার মনে হয় ব্যবধান খুব সূক্ষ্ম ছিল। যে কোনো দিকে যেতে পারত। ভাগ্য সহায় আমাদের দিকে এসেছে।’

আবেগে, উত্তেজনায় আর আনন্দে ভাসারই কথা মরগ্যানের। আর উইলিয়ামসন? যার অধিনায়কত্বের মুন্সিয়ানা এখন ক্রিকেট ক্লাসের পাঠ্য হওয়ার মতো। এত ঘণ্টা খেলে এসেও তার কাছে বোধগম্য হচ্ছে না কি করে যেন ফলটা হয়ে গেল, বুকে কষ্ট আর মুখে হাসি নিয়ে জবাব, ‘ব্যাপারটা এমন অবস্থায় গিয়েছে, আমি বুঝতে পারছি না, তারা কীভাবে জিতল? বাউন্ডারি বা এমন কিছু (হাসি)...একটা দলকে শিরোপা পেতেই হতো। আমরা সেই দল নই, এটাই কষ্টের।’

আজ থেকে ২০ বছর আগে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটাও যেমন এত বছর মাতিয়ে রেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের, এখনও আলাপ উঠলে ওই ম্যাচের প্রতি মুহূর্তের ঘটনা নিয়ে যেমন তর্ক জমে, রবিবারের (১৪ জুলাই) লর্ডসের এই ফাইনাল নিয়ে আলাপ আরও বেশি হওয়ার কথা। হয়তো যুগ যুগ ধরে মানুষ বলবে- ‘ইস, স্টোকসের ব্যাটে লেগে ওই ওভারথ্রোটা’, ‘ইস, বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করে বোল্টের ওই ক্যাচটা!’

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

4h ago