‘এরশাদ ফ্যাক্টর’ কার্যকারিতা হারাবে

জেনারেল এরশাদের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ধরণের ‘নিয়ামক’ এর অবসান ঘটলো! সৈনিক থেকে সামরিক শাসক এরপর রাজনীতিবিদের মর্যাদা পাওয়া এরশাদ এ দেশের রাজনীতিতে ভাগ্যবান ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত হবেন।
ershad sketch

জেনারেল এরশাদের মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ধরণের ‘নিয়ামক’ এর অবসান ঘটলো! সৈনিক থেকে সামরিক শাসক এরপর রাজনীতিবিদের মর্যাদা পাওয়া এরশাদ এ দেশের রাজনীতিতে ভাগ্যবান ব্যক্তি হিসেবেই চিহ্নিত হবেন। যে মানুষটির আমৃত্যু কারাগারে থাকারই কথা ছিলো, অথবা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের দায়ে শাস্তি হতে পারতো, সেই তিনি এখন সমাহিত হবেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার মর্যাদায়। যদিও তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেনাদপ্তরে বসে রাষ্ট্রীয় সমস্ত মেশিনারিজ ব্যবহার করে তারই প্রতিষ্ঠিত ক্ষয় হতে থাকা রাজনৈতিক দলটিও আরো সংকুচিত হয়ে আসবে। সেই সঙ্গে ক্ষমতায় যাওয়ার বা থাকার গুটি হিসেবে দুই যুগ ধরে ব্যবহৃত হওয়া ‘এরশাদ ফ্যাক্টর’ কার্যকারিতা হারাবে।

কেনো এরশাদ ‘ফ্যাক্টর’ হলেন, রাজনীতিতে কীভাবে জায়গা করে নিলেন, বা রাজনীতিতে কীভাবেই বা ঢুকলেন আর মৃত্যুর সময় ভিআইপি মর্যাদায় সমাহিত হচ্ছেন- এসব কিছু বিশ্লেষণ করতে গেলে বাংলাদেশের রাজনীতি, রাজনীতিবিদদের বৈশিষ্ট্যের একটি চিত্র পাওয়া যাবে।

এরশাদ অধ্যায়কে বুঝতে হলে তাকে তিনটি পর্বে ভাগ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর জীবনকাল, দ্বিতীয়ত: ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা আর তৃতীয়ত ১৯৯১ থেকে আমৃত্যু অর্থাৎ ২০১৯ সাল। এই তিনটি পর্ব বিশ্লেষণ করলেই রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেওয়া, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করে ফেলা, প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে ব্যবহার করাসহ বিদ্যমান রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলোর যাত্রাকাল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

এরশাদ রাজনীতিতে আগমনের আগে তিনি যে সুবিধাবাদী ও ক্ষমতালিপ্সু ছিলেন, তার প্রমাণ রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই। এরশাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট বুঝতে হলে তার মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকাও আলোচ্য হতে হবে। লে. কর্নেল মর্যাদার একজন সিনিয়র অফিসার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির কাছে সমাদৃত হওয়ারই কথা ছিলো তার। কিন্তু, ভিতু ও সুবিধাবাদী এরশাদ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েও স্বেচ্ছায় পাকিস্তান চলে যান। আর সে সময় পাকিস্তানে থাকা তারই সহকর্মী মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর বীর উত্তমরা জীবনবাজি রেখে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে যুদ্ধে অংশ নেন। জিয়া হত্যার পর যাকে তার নির্দেশেই হত্যা করা হয় বলে অভিযোগের বিচার চলছে।

বঙ্গবন্ধু, মোশতাক ও জিয়া সরকারের আনুকূল্য পান এরশাদ। বঙ্গবন্ধু সরকার পাকিস্তান ফেরত এরশাদকে প্রশিক্ষণের জন্য ভারত পাঠিয়েছিলো। তখন তিনি কর্নেল মর্যাদার। আর প্রশিক্ষণটি ছিলো ব্রিগেডিয়ার মর্যাদার কর্মকর্তাদের। বঙ্গবন্ধু সরকার এ কারণে তাকে পদোন্নতিও দেয়। সেটা ১৯৭৫ সালের জুন মাস। আর বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তিনি আগ্রা ক্যান্টনমেন্টে জাতীয় প্রতিরক্ষা কোর্সে অংশ গ্রহণরত অবস্থায় গোপনে বাংলাদেশে এসে খুনিচক্রের সাথে বঙ্গভবনে দেখা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দুই সপ্তাহ পার না হতেই ২৪ আগস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ও উপসেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। এটাই এরশাদের ভাগ্য। তিন মাসে কর্নেল থেকে মেজর জেনারেল ও উপসেনাপ্রধান।

এরশাদকে সেনাপ্রধান করেন আরেক সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া। পর-নারীতে আসক্ত হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় জেনারেল জিয়া ভেবেছিলেন এরশাদ রঙ্গ নিয়েই থাকবেন, রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ নিয়ে নাক গলাবেন না। জিয়া তার পথ পরিষ্কার রাখতে অন্য জেনারেলদের চেয়ে এরশাদকেই নিরাপদ ভেবেছিলেন। আর এরশাদ ছিলেন তক্কে তক্কে।  মুক্তিযুদ্ধে না গিয়ে ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে ফেরা এরশাদ সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা আর প্রত্যাবর্তনকারী কর্মকর্তাদের মাঝে বিভেদ তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৮১ সালে ওই বিভেদেরই এক পর্যায়ে জেনারেল জিয়াকে হত্যা করা হলে এরশাদেরই নির্দেশে চট্টগ্রামের জিওসি জেনারেল মঞ্জুর বীর উত্তমকে হত্যা করা হয়। যে মামলা ১৯৯৫ সাল থেকে বিচারাধীন। রায় ঘোষণার আগের দিন ওই মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এখানেও এরশাদ ভাগ্যবান। তিনি ওই মামলার এক নম্বর আসামি।

জিয়া হত্যার পরই এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখেন। জিয়ার জায়গায় রাষ্ট্রপতি হওয়া বিচারপতি আব্দুস সাত্তার যে একজন ব্যর্থ রাষ্ট্রপ্রধান তা প্রমাণ করার জন্য উঠে পরে লাগেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশ দেওয়ার দাবি করে বিষয়টি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। ১৯৮১ সালের নভেম্বরে সব শিষ্টাচার ভেঙ্গে সেনাপ্রধান হিসেবে এরশাদ সংবাদপত্রের সম্পাদকদের ডেকে তাদের হাতে দাবিনামা তুলে দেন। জানান, সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রক্ষমতার সাংবিধানিক অধিকার থাকা প্রয়োজন। তিনি আর অপেক্ষা করতে রাজি ছিলেন না। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। বিনা রক্তপাতে নির্বাচিত সরকারকে নির্বাসিত করেন। এরপরই তিনি ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে প্রথমে দমন-পীড়ন চালান। এরপর তার পূর্বসূরি জেনারেল জিয়ার পথ অনুসরণ করে নিজেই রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এরশাদও জেনারেল জিয়ার মতো নানা দল থেকে রাজনীতিবিদদের ‘কিনে’ এনে তার দলে ভেড়ান। ডান-বাম মধ্যপন্থি অনেককেই তিনি পাশে পান। বিশেষ করে তার দলের মূল অংশটা ছিলো বিএনপি থেকে আসা।

১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে এরশাদ স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিতি পান। এ সময়টায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও বামদলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে এরশাদ তা কঠোর হাতে দমনের চেষ্টা করেন। মূলত ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররা যে প্রতিবাদের সূচনা করে সেটা দমনে তিনি প্রথমেই বন্দুকের নল ব্যবহার করেন। রাজনৈতিক নির্যাতন হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়ায়। আর সেসময়ে প্রতিষ্ঠা পায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি। দুর্নীতি করলে পার পাওয়া যাবে- এই ধারণা এরশাদের সময় থেকেই স্থায়ীরূপ নিতে শুরু করে।

জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় টিকে থাকতে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চূড়ান্ত নজির স্থাপন করেন। আজকের যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে ধর্মীয় মৌলবাদের সরব উপস্থিতি যা শুরু করেছিলেন জেনারেল জিয়া সেটা এরশাদ ‘দক্ষতার’ সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি শুধু একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তই করেননি, ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাও উসকে দিয়েছিলেন। ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় আচার পালনে আগ্রহের ঘাটতি থাকলেও ধর্মকে রাজনৈতিক ব্যবহারে কমতি ছিলো না। সংবিধানকে শুধু বিকৃতই করেননি তিনি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বলও করেছেন।

শত শত নূর হোসেন আর ডা. মিলনের রক্তের বিনিময়েও নয় বছর টিকে গিয়েছিলেন এরশাদ। শেষ রক্ষা হয়নি। তার মিত্র সেনাবাহিনীও আন্দোলন সংগ্রামের এক পর্যায়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ১৯৯০ এর ডিসেম্বরে পদত্যাগে বাধ্য হন স্বৈরশাসক এরশাদ। যাকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা হয়েছিলো ‘বিশ্ববেহায়া’ রূপে।

এরশাদকে হটানোর মাধ্যমে ১৯৯০ সালের পর বাংলাদেশকে উদার, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মর্যাদার দেশ হিসেবে গড়ার আরেকটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এরশাদকে হটিয়ে শাসনব্যবস্থা কী রূপ হবে তা নির্ধারিত হয়েছিলো তিন জোটের রূপরেখায়। ১৯৯১ এর পঞ্চম সংসদ নির্বাচনের পর জেনারেল জিয়ার সহধর্মিণী বেগম জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর হাত ধরে ক্ষমতায় এসে তিনজোটের রূপরেখার কফিনে পেরেক ঠুকে দেন। এরশাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় কয়েক ডজন দুনীতি-মামলা। বিচারে আদালত সাজাও দেন। বেগম জিয়ার পুরো শাসন আমলটাই কাটান কারাগারে। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ কারাগারে বসেই ১৯৯১ এর নির্বাচনে পাঁচটি আসনে নির্বাচিত হন। তার দল সংসদে ৩৫টি আসন পায়। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতিত একনায়ক কারাগারে থেকে পাঁচটি আসনে জয় পেয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পান। ১৯৯৬ এর নির্বাচনেও এরশাদ কারাগারে বসে পাঁচটি আসনে জয়ী হন, সংসদে ৩৩টি আসন পায় তার দল। সেসময় তিনি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে মন্ত্রিসভায় তার দলের মহাসচিবকে স্থান করে দেন। যদিও সেসময় বিএনপি সরকার কারাগারে দূত পাঠিয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন না দিতে অনুরোধ করে। এক পর্যায়ে জাতীয় পার্টির কয়েক নেতাকেও কারাগারে এরশাদের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু, ৬ বছর কারাগারে থেকে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ এরশাদ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিতে অটল থাকেন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের ৬ মাস পরই জানুয়ারিতে তিনি জামিনে কারামুক্ত হন। দুবছরের মাথায় তিনি অবস্থান পাল্টান। শেখ হাসিনার ওপর সমর্থন প্রত্যাহার করে বেগম জিয়াকে সমর্থন দেন। যোগ দেন ৪ দলীয় ঐক্যজোটে। রাজপথে তিনি বিরোধীদল। আর সংসদে সরকারি দল। এই ইস্যুতে এক পর্যায়ে দল ভেঙ্গে যায়।  যদিও এর আগে এরশাদের বান্ধবী ইস্যুতে দল ভেঙে ছিলো।

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে না আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধবেন এরশাদ-এ দোটানায় তার দল তিনভাগে বিভক্ত হয়। খালেদা জিয়ার আমলে আদালতে সাজা পাওয়া দুর্নীতির মামলায় তার চূড়ান্ত সাজা হয় আওয়ামী লীগের আমলে আপিল বিভাগে। তিনি সংসদ সদস্য পদ হারান। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হন। আবার কারারুদ্ধ হন। জেল খেটে আর জরিমানার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে তিনি মুক্ত হন। যে খালেদা জিয়া তাকে ৬ বছর কারাগারে রাখলেন, যিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপসহীন নেত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন, যিনি স্বামী হত্যার জন্য যাকে অভিযুক্ত করেছিলেন সেই খালেদা জিয়া এরশাদের দ্বিতীয় কারামুক্তির রাতে তার বাসায় গিয়ে সহানুভূতি জানিয়ে আসেন। এখানেও এরশাদ ভাগ্যবান। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এরশাদের দল ১৪টি আসন পায়।

এরপর ২০০৭ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ রাজনীতিবিদদের কারাবন্দি করা হয়। এরশাদ থাকেন মুক্ত। এরশাদের ভাগ্য এখানেও সুপ্রসন্ন। ওই সময়ই নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদ আওয়ামী লীগের সাথে মহাজোটে যোগ দেন। ২৭টি আসন পান। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে অংশ নেওয়া না নেওয়ার প্রশ্নে নানা নাটকীয়তায় শেষ পর্যন্ত অংশ নেন। রওশন এরশাদ রাজি হলেও এরশাদ বেঁকে বসেছিলেন। বিএনপির বয়কটের মুখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ দরকার ছিলো। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটি হয়ে গেলে এরশাদকে সংসদে তার স্ত্রীর অধীনেই থাকতে হয়। রওশন হন বিরোধী দলীয় নেতা। সাবেক এই একনায়ক হন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। পান মন্ত্রীর মর্যাদা। ভাগ্যবান এরশাদ একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মহাজোট থেকে অংশ নেন। নির্বাচিত হন বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে। যে এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে জাতির জনককে বঙ্গবন্ধু বলতে নারাজ ছিলেন, যিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন, সংসদে বসার সুযোগ দিয়েছিলেন সেই এরশাদ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটিরও সদস্য। এটাও এরশাদের ভাগ্য।

জেনারেল এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্র ফিরে এলেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রধান এই দুই দলের কাছে ভোটের রাজনীতি প্রাধান্য পায়। সেই সুযোগে জেনারেল এরশাদ এবং তার দল জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে বৈধতা পায়। প্রধান দুই দলের বিভেদের রাজনীতির সুযোগে এরশাদ এর সুবিধা নিতে থাকেন। আর এ দুটি দলও বারবার এরশাদকে সাজার ভয় দেখিয়ে বা কারাগারের ভয় দেখিয়ে ব্যবহার করেছে। আর এজন্যই এরশাদ টিকে গেছেন। ভোটের রাজনীতির কারণেই প্রধান দুই দলের জোটেই এরশাদ ছিলেন, আদর্শের মিল বা নৈতিকতা থেকে গেছে উপেক্ষিত। তাই যারা তাকে খুনি বলে মামলা করেছিলেন, যারা তাকে দুর্নীতির দায়ে জেলে পুরেছিলেন, যারা তার পতনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলেন তারা শুধু ব্যক্তি এরশাদেরই অপসারণ করেছেন, পদ্ধতিটা বহাল রেখেই চলেছেন। তাই প্রথম কয়েক বছর এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এরশাদের পতনের দিনটিকে অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস পালন করলেও এখন তা কেউ আর মনে রাখে না।

জায়েদুল আহসান পিন্টু,

সম্পাদক, ডিবিসি নিউজ

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago