মালিঙ্গার বিদায়ী ঝাঁজে পুড়ল বাংলাদেশ

কুশল পেরেরা সেঞ্চুরি করে লঙ্কানদের এনে দিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জিং পূঁজি। সেই পূঁজি নিয়েই কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম পুরোটাই মাতোয়ারা লাসিথ মালিঙ্গাকে রাজসিক বিদায় জানাতে। শ্রীলঙ্কা জিতলেই না তবে এই গ্রেটের বিদায়টা হয় আলোয় রাঙা। নিজের জন্য বানানো এমন আবেগময় মঞ্চ কি আর নসাৎ হতে দিতে পারেন মালিঙ্গা! জীবনের শেষ ওয়ানডেতে তিনি জ্বলে উঠলেন আরও দপ করে। তাতে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল তামিম ইকবালের দল।
Lasith Malinga
তামিম ইকবালকে বোল্ড করে মালিঙ্গার উল্লাস। ছবি: এএফপি

কুশল পেরেরা সেঞ্চুরি করে লঙ্কানদের এনে দিয়েছিলেন চ্যালেঞ্জিং পূঁজি। সেই পূঁজি নিয়েই কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম পুরোটাই মাতোয়ারা লাসিথ মালিঙ্গাকে রাজসিক বিদায় জানাতে। শ্রীলঙ্কা জিতলেই না তবে এই গ্রেটের বিদায়টা হয় আলোয় রাঙা। নিজের জন্য বানানো এমন আবেগময় মঞ্চ কি আর নসাৎ হতে দিতে পারেন মালিঙ্গা! জীবনের শেষ ওয়ানডেতে তিনি জ্বলে উঠলেন আরও দপ করে। তাতে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল তামিম ইকবালের দল।

শুক্রবার কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্যে নেমে  ২২৩  রানে থেমেছে বাংলাদেশ, হেরেছে ৯১ রানের বড় ব্যবধানে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি অনায়াসে জিতে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। নিজের শেষ ওয়ানডেতে দারুণ বল করে মালিঙ্গা নিয়েছেন ৩ উইকেট। তছনছ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার।

লক্ষ্যটা বেশ বড়। প্রেমাদাসার মাঠে কখনো তিনশো তাড়া করে কেউ জেতেনি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও এত রান তাড়ায় সাফল্য নেই বাংলাদেশের। তবু উইকেটে ছিল না আহামরি বিষ। নিজেদের মানের ক্রিকেট খেলতে পারলে কাজটা ছিল খুবই সম্ভব। কিন্তু সেই সম্ভব শব্দটা প্রথম ঘণ্টাতেই উধাও করে দেন মালিঙ্গা।

জীবনের শেষ ওয়ানডেতে নেমে, ৩৫ বছরের শরীর নিয়ে একের পর এক ইয়র্কর মেরে টালমাটাল করে দেন বাংলাদেশের টপ অর্ডার।

শুরুটা ইনিংসের প্রথম ওভারেই। পঞ্চম বলে তার ইয়র্কর মাটিতে লুটিয়ে স্টাম্প খোয়ান তামিম। মোহাম্মদ মিঠুন নেমে খাবি খাচ্ছিলেন। মালিঙ্গার হাত থেকে বাঁচলেও সেই চাপে নুয়ান প্রদীপকে উইকেট দিয়ে ফেরত যান তিনি, আড়াআড়ি লাইনে খেলে এলবিডব্লিও হয়ে খোয়ান রিভিউও।

মালিঙ্গার ইয়র্কার সামলে ফেলছিলেন সৌম্য। মালিঙ্গা তাকে কাবু করতে আঁটলেন ভিন্ন বুদ্ধি। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে নিশানা করে মারতে থাকলেন ইয়র্কর। একবার, দুইবার, তৃতীয়বার এতটাই নিখুঁত হলো যে সৌম্য সব দিয়েও যেন ঠেকাতে পারলেন না। ৩১৫ রান তাড়ায় ৩০ রানেই নেই ৩ উইকেটে। মাহমুদউল্লাহ নেমে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ায় খানিক পর সেটা ৩৯ রানে ৪ উইকেটে পরিণত।

ম্যাচের এপিটাফ হয়ত সেখানেই লিখে ফেলেছিলেন অনেকে। সাব্বির রহমান ভাবলেন ভিন্ন। অনেকদিন থেকে একাদশে জুতসই জায়গা মিলছে না। নিয়মিত কয়েকজনের অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগাতেই বোধহয় নেমেছিলেন। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে জুটি জমিয়ে চালালেন পালটা আক্রমণ। ২০, ৩০, ৪০, ৫০ করে জুটি পেরিয়ে গেল শতরান। ৪২ বলে ফিফটি করে সাব্বির দেখালেন আলো। কিন্তু সেই আলো ঝলমলে হয়ে জ্বলতেই নিভে গেল। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ছক্কা পেটাতে গিয়ে ৫৬ বলে ৬০ করে থামলেন সাব্বির।

মুশফিক ছিলেন বলে তবু আশা। কিন্তু তাকে তো সঙ্গ দেওয়া চাই। মোসাদ্দেক হোসেন রান আউটে নিজেকে সপে দিলে সেই আশায় গুড়েবালি। মুশফিক একাই লড়লেন আরও কয়েক ওভার। তবে টেল এন্ডারদের নিয়ে অতদূর পথ পাড়ি দেওয়া হত অসম্ভবের কাছাকাছি। সেটা পারেননি। প্রদীপকে স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে তিনি যখন ফেরত যান দলের রান ১৯৯, তার ৬৭। বাংলাদেশের হয়ে বাজি ধরার জন্য ততক্ষণে কেউই নেই আর।  এরপর বাংলাদেশের ইনিংস টিকে থাকার বাস্তবতা ছিল না। আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে মালিঙ্গার হাত দিয়েই। জীবনের শেষ ওভারে মোস্তাফিজকে আউট করে সেরেছেন জেতার কাজ।

এর আগে টস হেরে ফিল্ডিং পেয়ে বড়ই ম্রিয়মাণ দেখালো বাংলাদেশের বোলিং-ফিল্ডিং। বিশেষ করে কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিস প্রথম ৩০ ওভারে যেমন ব্যাট করছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল লঙ্কানরা ছাড়িয়ে যাবে সাড়ে তিনশো রানও। প্রথম ৩০ ওভারে ২ উইকেটে ১৯৮ থেকে সেই পাহাড়ে চড়ার ভিতই তো ছিল। ১১১ রান করে পেরেরা আর ৪৩ রান করে মেন্ডিস ফিরতেই লঙ্কান ইনিংসে ভাটার টান। শেষের ২০ ওভারে দারুণ বল করে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। লঙ্কানরা নিতে পারে আর ১১৬ রান। তবু সব যোগ করে স্কোর ছাড়িয়ে যায় তিনশো।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসের রিপোর্ট- শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর পরও সামনে বড় লক্ষ্য

মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে ওই রান নেওয়ার মতো তাগদ  দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩১৪/৮ (ফার্নেন্দো ৭, করুনারত্নে ৩৬, পেরেরা ১১১, মেন্ডিস ৪৩, ম্যাথুউস ৪৮ , লাহিরু ২৫, থিসারা ২, ধনঞ্জয়া ১৮, মালিঙ্গা ৬*  , প্রদীপ ০* ; শফিউল  ৩/৬২ , মিরাজ ১/৫৬,  রুবেল ১/৫৪ , মোসাদ্দেক ০/৪৫, মোস্তাফিজ ২/৭৫, সৌম্য ১/১৭, মাহমুদউল্লাহ ০/৪ )

বাংলাদেশ: ৪১.৪ ওভারে ২২৩  (তামিম ০, সৌম্য ১৫, মিঠুন ১০, মুশফিক ৬৭,  মাহমুদউল্লাহ ৩, সাব্বির ৬০, মোসাদ্দেক ১২, মিরাজ ২, শফিউল ২, রুবেল ৬*, মোস্তাফিজ ১৮ ; মালিঙ্গা ৩/৩৮ , প্রদীপ ৩/৫১, থিসারা ০/৩৬, কুমারা ১/৪৫, ধনঞ্জয়া ২/৪৯ )

টস: শ্রীলঙ্কা

ফল: শ্রীলঙ্কা ৯১ রানে জয়ী।

সিরিজ: শ্রীলঙ্কা ১-০ তে এগিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago