নারায়ণগঞ্জে পুলিশি নির্যাতনে ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় পুলিশের মারধরে আব্দুল বাদশা (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। গতকাল বিকেলে উপজেলার নানাখি এলাকার এ ঘটনায় রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) মারা যান তিনি।
Body Recov
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় পুলিশের মারধরে আব্দুল বাদশা (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। গতকাল বিকেলে উপজেলার নানাখি এলাকার এ ঘটনায় রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) মারা যান তিনি।

এ ঘটনায় রাতেই নয়াপুর-পঞ্চমীঘাট এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।

নিহত আব্দুল বাদশা মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। তিনি নানাখি বাজারের সয়াবিন তেল ব্যবসায়ী।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকেলে সোনারগাঁও থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ আলম দোকানে গিয়ে ব্যবসায়িক কাগজপত্র দেখার নাম করে আব্দুল বাদশার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে যান। পরবর্তীতে গতকাল বিকেলে সাদা পোশাকে এএসআই মাসুদ কনস্টেবল তুষারকে নিয়ে আবার দোকানে যান। ওইসময় আব্দুল বাদশার ছেলে মিঠু দোকানে বসা ছিলেন। মিঠুর কাছে এএসআই মাসুদ ও কনস্টেবল তুষার ব্যবসার বৈধ কাগজপত্র দেখতে চান। মিঠু তার বাবাকে ফোন দেন। কিন্তু আব্দুল বাদশা দোকানে আসতে দেরি করেন। এতে ক্ষোভে আব্দুল বাদশার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এএসআই মাসুদ ও কনস্টেবল তুষার। পরে তারা আব্দুল বাদশার কাছে টাকা দাবি করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে দুই পুলিশ সদস্য আব্দুল বাদশা ও ছেলে মিঠুকে মারধর করেন। এতে আব্দুল বাদশা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানে সেখানে মারা যান আব্দুল বাদশা।

নিহতের ছেলে মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, “এএসআই মাসুদ সাদা পোশাকে আর কনস্টেবল তুষার পুলিশের ড্রেসে আমাদের দোকানে আসেন। এসময় দোকানের কাগজপত্র দেখতে চাইলে আমি বলি বাবার কাছে আছে। এ কথা শুনে তারা আমার কাছে টাকা চান। পরে আমি বাবাকে ফোন দেই। বাবা আসতে দেরি হওয়ায় ও টাকা চাইলে না দেওয়ায় গলাগালি করেন। এক পর্যায়ে আমাদের মারধর শুরু করেন। মারধরের কারণেই আমার বাবা মারা গেছে।”

এ বিষয়ে এএসআই মাসুদ আলম বলেন, “সন্দেহ হওয়ায় তেলের দোকানের মালিক বাদশাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনি অসুস্থতা বোধ করেন। পরে তাকে তার স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার সঙ্গে কোনো মারামারি হয়নি। তাছাড়া দোকান থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা।”

সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে তাকে মারধর করা হয়নি। তিনি মূলত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আব্দুল বাদশা এর আগেও দুই বার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে তার ছেলে জানিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য কেনো দিয়েছে সেটা জানি না।”

সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ঈদকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুদ করা হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে ওই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে তার ছেলেও উপস্থিত ছিলো। তবে তাকে মারধর করা হয়নি। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।”

এদিকে গতরাত সাড়ে ১২টায় নিহতের ছেলে মিঠু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাবাকে মারধর করা হয়নি। তবে একটা সাধারণ তেলের দোকানে এমন কী কাগজ থাকে? আর সেই কাগজের জন্য এমনভাবে পুলিশ চাপ সৃষ্টি করেছে যে বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ দিবো না।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীরা জানান, ঘটনার পর এলাকাবাসী পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু মারা যাওয়ার পর থেকে পুলিশ নিহতের পরিবার ও ছেলেকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায়। যার ফলে ছেলে থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি।”

ওসি মনিরুজ্জামান আরও বলেন, “পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। তারা নিজেরাই সেখান থেকে থানায় এসে আমাকে সব কিছু জানিয়েছে। কোনো চাপ বা ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। নিহতের ছেলে আমাদের জানিয়েছেন যে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনায় মৃতের পরিবার কোনো অভিযোগ দেয়নি, সেহেতু কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।”

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now