বন্যার পর ভাঙন, গৃহহীন হচ্ছেন মানুষ

Dharala river erosion
১৩ আগস্ট ২০১৮, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধরলাপাড়ের শিবেরকুটি গ্রামে নদীভাঙনের শিকার গ্রামবাসীরা। ছবি: স্টার

ধরলাপাড়ের শিবেরকুটি গ্রামের কৃষি শ্রমিক কোবাদ আলী (৪৮) অনেকটাই বাকরুদ্ধ। কোনো রকমে বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছেন তিনি আর এরই মধ্যে নদীভাঙন তাকে ভাসিয়ে দিয়েছে নিরাশার সাগরে।

আবাদি জমি, ফলের বাগান- সবকিছু হারিয়ে কৃষক কোবাদ আলী হয়েছেন কৃষিশ্রমিক। শেষ সম্বল ছয় শতাংশের বসতভিটা ঈদের দিন (১২ আগস্ট) রাতে চলে যায় ধরলার পেটে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলাপাড়ের এই কৃষিশ্রমিক স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘর দুটি রক্ষা করে নিয়ে এসেছেন পানি উন্নয়ন বাঁধের উপর।

আজ (১৩ আগস্ট) সকালে কোবাদের সাথে কথা হলে অনেকটা অশ্রুসিক্ত হয়ে তিনি বললেন, “আর বেঁচে থাকা! শেষ সম্বলটুকুও নদী খেয়ে নিলো। পাঁচসদস্যের পরিবার নিয়ে এখন থেকে ভুমিহীন নিঃস্ব মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে হবে।”

“জানি না জীবনের আর কোনোদিন আপন বসতভিটায় বসবাসের সুযোগ আসবে কী না। না আসার সম্ভবনাই বেশি। কারণ, সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আর এই আয়ে জমি কেনা স্বপ্নের মতো,” যোগ করেন তিনি।

Dharala river erosion
১৩ আগস্ট ২০১৮, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ধরলাপাড়ের শিবেরকুটি গ্রামে নদীভাঙনের দৃশ্য। ছবি: স্টার

কোবাদের মতোই একই গ্রামের প্রান্তিক চাষি মহির উদ্দিন (৬২) জানান, “ধরলা ভাঙছে। বসতভিটার কাছেই ধরলার ভাঙনের হুঙ্কার। তাই বসতভিটা ছেড়ে বাড়িঘর সরিয়ে রাস্তার উপর আশ্রয় নিয়েছি।”

“সতের বিঘা জমির সবটুকুই এখন ধরলার পেটে” উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, “এমনিতেই বানের ধকল এখনো কাটেনি তার মধ্যে গৃহহীন হওয়ার কষ্ট সীমাহীন। আমার মতো অনেকেই কয়েকদিন ধরে বসতভিটা সরিয়ে নিরাপদে আশ্রয় নিচ্ছেন।”

ধরলাপাড়ের বনগ্রাম এলাকার বানভাসি জুলেখা বেওয়া (৫৬) জানালেন, “বানভাসি ছিলাম। ঘরে ফিরেছি। কিন্তু, নদীর ভাঙন গৃহহীন করে দিলো। ঈদের দুদিন আগে বসতভিটা খেয়েছে ধরলা। দুটা ঘর সরিয়ে নিয়েছি রাস্তার উপর।”

“একসময় সবকিছু ছিলো এখন আর নাই কিছুই। গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর ভিটার চারদিকে নানা ফলের গাছ- এসবই এখন শুধু স্বপ্ন,” অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন সেই নারী।

তিস্তাপাড়ের আদিতমারী উপহেলার কুটিরপাড় গ্রামের হযরত আলী (৪৮) জানান, ঈদের দিন রাতে তার বসতভিটা চলে গেছে তিস্তা গর্ভে। তারা আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়র বাড়িতে। শেষ সম্বল ৮ শতাংশের বসতভিটা নদী-গর্ভে চলে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে হযরত আলী বলেন, “তিস্তা তার জীবনের সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। দিয়েছে শুধু বেদনা।”

Dharala river erosion
১৩ আগস্ট ২০১৮, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় বনগ্রাম এলাকায় ভাঙছে ধরলা নদী। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফজলে করিম জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তিস্তা ও ধরলা পাড়ের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন-হুমকিতে থাকায় অনেকে বসতভিটা ছেড়ে বাড়ি-ঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন কবলিত গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে অস্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকাতে বাঁশ-কাঠ দিয়ে পাইলিং ও বালুভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার জানান, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তিস্তা ও ধরলা পাড়ে চার শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। এসব গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুর্নবাসন করতে সরকার ইতোমধ্যে ত্রিশ লাখ টাকা ও এক হাজার বান্ডেল ঢেউটিন বরাদ্দ দিয়েছেন। খুব শিঘ্রই তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু করবেন জেলা প্রশাসন- এমনটিও উল্লেন করেন সেই কর্মকর্তা।

এস দিলীপ রায়, দ্য ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

12m ago