বালুতে ঢেকে গেছে আবাদি জমি, ঢেকে গেছে কৃষকদের স্বপ্ন

Sands cover farmland
১৪ আগস্ট ২০১৯, বালুতে ঢাকা চাষযোগ্য জমির সামনে বসে লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনগ্রাম এলাকার কৃষক সোলেমান মিয়া। ছবি: স্টার

সোলেমান মিয়া (৫৬) নামের ধরলাপাড়ের একজন কৃষক জানান, বানের পানি নেমে গেছে ঠিকই কিন্তু, ক্ষতিগুলো পুঞ্জিভূত হয়ে হৃদয়ে আঁচড় কাটছে সারাক্ষণ। “বাড়িঘরে ফিরেছি। বাড়িঘর মেরামত করেছি। এর চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে আবাদি জমির,” এমনটি বললেন তিনি।

ধরলা নদী তীরবর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার বনগ্রাম এলাকার এই কৃষকের নয় বিঘা জমির মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমি এখন বালুতে ঢাকা। বানের পানির সাথে বিপুল পরিমাণে বালু এসে আবাদি জমিতে জমাট বেঁধেছে। পানি নেমে গেছে কিন্তু, নামেনি বালুগুলো।

“বালুতে ঢেকে যাওয়া আবাদি জমিগুলোতে আর ফসল হবে না। তবে বালু সরাতে পারলে জমিগুলো আবাদযোগ্য হবে। এ কাজ আদৌ সম্ভব না। তারপরও চেষ্টা করছি প্রতিদিন কোদাল দিয়ে বালুগুলো সরাতে,” জানালেন সোলেমান মিয়া। তার মতো গ্রামের অন্যসব কৃষকের আবাদি জমির অবস্থা এমনই।

“এবার বন্যাটি স্থায়ী হওয়ার কারণে আবাদি জমিতে পানি বেশিদিন ছিলো। তাই জমাট বাধা বালুরস্তর সরতে পারেনি,” উল্লেখ করে একই গ্রামের কৃষক বদিয়ার রহমান (৬৪) বলেন, “আবাদি জমিতে আর আবাদ করতে পারবো না এটা যেনো আমাদের কাছে স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্পের মতো।” সরকারিভাবে আবাদি জমিতে জমাট বাঁধা বালুরস্তর সরিয়ে দিলে তারা উপকৃত হবেন বলেও জানান তিনি।

সদর উপজেলার তিস্তাপাড় নোহালী গ্রামের কৃষক সহিদার রহমান (৬৫) হতাশা নিয়ে বলেন, তার ছয় বিঘা আবাদি জমির মধ্যে দুই বিঘাই এখন বালুতে ঢাকা। জমাট বাঁধা বালুরস্তর না সরানো পর্যন্ত সেই জমিতে ফসল আবাদ করা সম্ভব না। “আবার বন্যা হলে বানের পানিতে এসব বালু চলে গেলে তবেই জমি জেগে উঠবে ফসল ফলানোর জন্য। আর কোদাল দিয়ে ছাপিয়ে এসব বালু অপসরণ করা কঠিন কাজ,” এমনটি জানিয়ে তিনি বলেন, “বন্যায় ফসলের তেমন ক্ষতি না হলেও আবাদি জমির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপকহারে।”

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড় গড্ডিমারী গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম (৬৫) জানান, বছর চারেক আগে তার তিন বিঘা জমিতে বালুরস্তর জমেছিলো। আজো সেগুলো আবাদযোগ্য হয়নি। এবছরও বানের পানিতে বয়ে আসা বালুতে ঢেকে গেছে আরো দুই বিঘা আবাদি জমি। “আবাদি জমির উপর বন্যার পানি স্থায়ী হলেই এ সমস্যাটা হয়” এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গ্রামের অনেক কৃষকই এ সমস্যায় নিমজ্জিত হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।”

পাটগ্রাম উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, “বন্যার সময় আবাদি জমির উপর বালুরস্তর জমা আর পরবর্তীতে জমিগুলো অনাবাদী হওয়া একটি বড় সমস্যা। আমার ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে শতাধিক কৃষকের কয়েকশ বিঘা জমি অনাবাদী হয়েছে আর এগুলো এখনো অনাবাদী রয়ে গেছে।”

“তিস্তা ও ধরলার বুকে বালুমিশ্রিত পলি জমতে জমতে নদীর বুক প্রায় সমতল হয়ে গেছে। এতে নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে তা উপচে গিয়ে তীরবর্তী এলাকার জমিতে চলে যায়। পানির সাথে বিপুল পরিমাণ বালুও চলে আসে,” বললেন লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম।

“নিয়মিত নদী খনন ছাড়া এ সমস্যা থেকেই যাবে। বিশেষ করে তিস্তা নদী খনন ও তীর সংরক্ষণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং চলতি অর্থ বছরে তা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে,” যোগ করেন সেই কর্মকর্তা।

বন্যার পানির সাথে নদীর বালু এসে কী পরিমাণ আবাদি জমিকে অনাবাদী করেছে এর সঠিক কোনো হিসাব নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। তবে এবছরের বন্যা স্থায়ী হওয়ায় নদীর তীরবর্তী বিপুল পরিমাণে আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে বলে জানান লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধুভুষণ রায়।

এস দিলীপ রায়, দ্য ডেইলি স্টারের লালমনিরহাট সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English

Polls could be held in mid-February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has said the next general election could be held in the week before the start of Ramadan in 2026.

2h ago