চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ

ডেঙ্গু জ্বরে ভেঙে গেলো মাহফুজের প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন

Pabna Dengue death
পাবনায় ডেঙ্গু জ্বরে প্রাণ হারিয়েছে মোসাব্বির হোসেন মাহফুজ। ছবি: সংগৃহীত

মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় জন্মের সাতদিন আগে বাবা মারা যায় মাহফুজের। যক্ষের ধনের মতো একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বাঁচার সংগ্রাম করে চলেছিলেন মা জাহানারা বেগম (৩৮)। মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাতে চেষ্টার অন্ত ছিলো না মাহফুজেরও।

পাবনা জিলা স্কুল থেকে ২০১৭ সালে জিপিএ ফাইভ পেয়ে এসএসসি পাশের পর চলতি বছর সরকারী শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে এইচএসসি। গত রোজার ঈদের পর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ফার্মগেটের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে সেখানেই একটি ছাত্রাবাসে ওঠে সে।

আজ (১৪ আগস্ট) ভোররাতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাহফুজ মারা যাওয়ায় ভেঙে গেলো মা-ছেলের স্বপ্নযাত্রা। থেমে গেল জীবন সংগ্রামের এক সম্ভাবনার গল্প।

সদর উপজেলার বালিয়াহালট চক রামানন্দপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন জাহানারা বেগম। স্বজনরা তাকে পানি খাওয়াতে চেষ্টা করছেন, নানা কথা বলে চেষ্টা করছেন তাকে কথা বলানোর। কিন্তু, বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো নিজের বেঁচে থাকার অবলম্বন সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।

ঢাকা থেকে একসঙ্গে পাবনায় আসা মাহফুজের বন্ধু সাব্বির বলেন, “আমরা ঢাকা থেকে আসার সময়েও মাহফুজকে খুব বেশি অসুস্থ দেখিনি। হঠাৎ এতো অল্প সময়ে তার মৃত্যু হবে তা কল্পনাও করিনি কখনো।”

মাহফুজের মামা নাহিদ হোসেন জানান, মাহফুজের পুরো নাম মোসাব্বির হোসেন মাহফুজ (১৮)। জন্মের আগেই মাহফুজের বাবা গোলাম মোস্তফার মারা গেলে, বোন ও ভাগ্নেকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তারপর থেকে তাদের বাড়িতেই বড় হয় সে।

নাহিদ বলেন, গত ৮ আগস্ট ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে মাহফুজ। গতকাল অবস্থার অবনতি হলে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ ভোররাত দেড়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

তবে, হাসপাতালে ভর্তির পর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সময়ক্ষেপণ ও সুচিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ করে নাহিদ হোসেন বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর দ্রুত অবস্থা খারাপ হলেও বার বার ডাকার পর চিকিৎসক আসেননি। নার্সদের বার বার বলার পরও তারা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তার অবস্থার আরো অবনতি হয়।

পাবনা সিভিল সার্জন ডাঃ মেহেদী ইকবাল জানান, গতকাল সন্ধ্যায় হাসপাতালে পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ার সাথে সাথেই মাহফুজকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে খুবই জটিল অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। রাতে তার খিঁচুনি শুরু হয়। চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেননি।

চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি ছিলো না দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, “রোগীকে হাসপাতালে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আনা হয়েছিলো। দেরিতে চিকিৎসা শুরু করাতেই মাহফুজের মৃত্যু হয়েছে।”

আজ সকালে বালিয়াহালট গোরস্থানে নামাজে জানাজা শেষে তাকে সেখানেই দাফন করা হয়। মাহফুজের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রঞ্জন কুমার বলেন, “আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।” পাবনায় আজ পর্যন্ত ২৪৫ জন ডেঙ্গুরোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

1h ago