শোকার্ত মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন জাতির পিতা

জাতীয় শোকদিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে জাতির ফুলেল শ্রদ্ধা। ছবি: প্রবীর দাশ

হাজারো শোকার্ত মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা ও হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার পাশাপাশি ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত তার প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করেন।

রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোক দিবস পালন করে।

শোক দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালো ব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

শোক দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ভোরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।

শোক দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। সেদিন বিদেশে থাকায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।

সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালোরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ত্যাগ করার পরপরই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়ক থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান। যেখানে ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে নিহত তার মা, ভাই, পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়দের দাফন করা হয়। তিনি কবরস্থানে সকাল সাড়ে ৭টায় তার পরিবারের সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও বনানী কবরস্থানে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখানে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী এ মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন।

এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুস্থ ও গরীব মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণের ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর থানা ও ওয়ার্ড ইউনিটগুলো।

এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

এছাড়াও আওয়ামী যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করে।

Comments

The Daily Star  | English
agent banking role in remittance growth

Agent banking drives rural remittance boom

Bangladesh’s agent banking network is continuing to play a transformative role in the country’s financial system, especially through the channelling of remittances through agent outlets.

15h ago