একজন ভারতীয় হিসেবে গর্বিত নই: অমর্ত্য সেন

Amartya Sen
অমর্ত্য সেন। ফাইল ফটো

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ে কথা বলেছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তার মতে, গণতন্ত্র ছাড়া কোনোভাবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এছাড়াও, একজন ভারতীয় হিসেবে গর্বিত নন বলেও মন্তব্য করেছেন বিশ্বখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

অমর্ত্য সেনের কাছে প্রশ্ন ছিলো, আপনি এমন এক সময়ে ভারতে এলেন যখন দেশটি কঠিন সময় পার করছে। কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আপনি সারাজীবন সাম্যের কথা বলেছেন, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সাম্যের কথা। কিন্তু, সাম্য বলতে আমরা সবক্ষেত্রেই সাম্যকে বুঝে থাকি। আপনি কি মনে করেন- কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা সেই অঞ্চলে শান্তি এবং সেখানকার মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবে?

উত্তরে অমর্ত্য বলেন, “না, আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি, কাশ্মীর একটি বিশেষ সমস্যাপ্রবণ অঞ্চল। কাশ্মীরের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমি মনে করি না যে, কাশ্মীরের জননেতাদের কথা না শুনেই আপনি সেখানে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। সেখানে হাজার হাজার জননেতাকে আটকে রাখা হয়েছে। এমনকী, বড় বড় নেতারাও কারাগারে রয়েছেন।”

তিনি আরো বলেন, “কাশ্মীরে যেভাবে যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের সাফল্য আসতে পারে না। গণতান্ত্রিক সরকার সবসময়ই আলোচনার মাধ্যমে এগোয়। এখন সরকার যখন বলে তারা শুধু পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করবে তখন আমি মনে করি না যে সরকার সত্যিই গণতন্ত্রের জন্যে কোনো অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে চায়। আমি মনে করি না যে, গণতন্ত্র ছাড়া কাশ্মীর সমস্যার কোনো সমাধান হতে পারে। এ নিয়ে তো অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করা হচ্ছে।”

সরকার বলছে তারা কাশ্মীরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্যে অভিযান চালাচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?

অমর্ত্য সেন বলেন, “এটি হচ্ছে পুরনো উপনিবেশিক মানসিকতার অজুহাতমূলক বক্তব্য। ব্রিটিশরা যখন এখানে শাসন করেছে… আমি আমার শৈশবের কথা বলছি, আমি মাঝে মাঝেই আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যেতাম। তিনি কারাবন্দি হয়েছিলেন। তখন ব্রিটিশরা বলতো তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্যে তাকে কারাগারে রেখেছে। এসব ধরপাকড়ের মাধ্যমে সেই উপনিবেশিক যুগে ফিরে যাওয়া হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলে আমার অনেক আত্মীয়স্বজনকে জেলে পোড়া হয়েছিলো।”

“এটি বলা সহজ যে আমরা এই মানুষগুলোকে কারাবন্দি করেছি, কারণ তারা সমস্যা তৈরি করছে। এই যে সেদিন মানুষের অধিকার আন্দোলন নিয়ে কাজ করা কানাইয়া কুমারকে জেলে পাঠানো হলো। যুক্তি কী ছিলো? যুক্তি ছিলো যে সে রাষ্ট্রদ্রোহী। সরকারের সঙ্গে মতের বিরোধিতা হলেই তা হয়ে যায় রাষ্ট্রদ্রোহিতা।”

সরকার বলছে সাধারণ কাশ্মীরিরা ৩৭০ ধারা থেকে কোনো উপকার পাচ্ছিলো না।… আর দিল্লিতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার বিপুল ভোটের মাধ্যমে সেই ধারাটি বিলোপ করেছে। এ বিষয়টি নিয়ে আপনি কী বলবেন?

এমন প্রশ্নের উত্তরে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য, “ব্রিটিশরা যখন ভারত শাসন করছিলো তখন আমি মনে করি, বিষয়টি ব্রিটেনে অনেক জনপ্রিয় ছিলো। একই বিষয় ভারতের ক্ষেত্রেও হতে পারে। তারা কাশ্মীরে কতোটুকু জনপ্রিয়? বলা হচ্ছে কাশ্মীর ভারতের অংশ। কিন্তু, এ বিষয়ে কাশ্মীরের জনগণ কী ভাবছেন? এ বিষয়ে কাশ্মীরের জনগণের মত নিতে হবে তো। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করে যাচ্ছে। এই সে বিপুল জনসমর্থন আসলে তা কী, আমাদের ভাবতে হবে। এই জনসমর্থন এবং মানুষের অধিকারের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে।”

সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য সেন কাশ্মীর নিয়ে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা সম্বলিত ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি যে শুধুমাত্র সব মানুষের অধিকার বজায় রাখার বিরোধিতা করেছে তা নয়, এই পদক্ষেপে সংখ্যাগরিষ্ঠের কথাও ভাবা হয়নি।”

৮৫ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “গোটা বিশ্বে গণতান্ত্রিক আদর্শ অর্জনের জন্য এতো কিছু করেছে ভারত। তবে এখন আর আমি একজন ভারতীয় হিসেবে এই সত্য নিয়ে গর্বিত নই যে ভারতই গণতন্ত্রের পক্ষে প্রথম প্রাচ্যের দেশ ছিলো। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে যা করা হচ্ছে, তাতে আমরা সেই খ্যাতি হারিয়ে ফেলেছি।”

Comments

The Daily Star  | English

Doubts growing about interim govt’s capability to govern: Tarique

"If we observe recent developments, doubts are gradually growing among various sections of people and professionals for various reasons about the interim government's ability to carry out its duties."

18m ago