চা শ্রমিকদের রেশনে মেয়াদোত্তীর্ণ আটা সরবরাহের অভিযোগ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা বাগানে বেশ কিছুদিন ধরে শ্রমিকদের রেশনে মেয়াদোত্তীর্ণসহ আটা সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই আটা খেলে পেটের পীড়াসহ নানা ধরণের রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চা শ্রমিকরা যদি অভিযোগ করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা হবে এবং জরিমানাকৃত অর্থের ২৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে।
কালিটি চা বাগান সূত্রে জানা গেছে, এখানে মোট শ্রমিক রয়েছেন ৫৪০ জন। প্রত্যেকে রেশন হিসেবে প্রতি সপ্তাহে সাড়ে তিন কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১০ কেজি পর্যন্ত আটা পান। তিন-চার সপ্তাহ ধরে বাগান কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিষ্ঠানের তৈরি দুই কেজির প্যাকেটের আটা সরবরাহ করেছে। মোড়কের গায়ে আটা উৎপাদনের তারিখ চলতি বছরের (২০১৯) ২৩ এপ্রিল দেওয়া। মেয়াদ শেষের তারিখ রয়েছে ১৬ জুন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চা শ্রমিক বলেন, প্রথমে খোলা-পচা আটা দেওয়া হতো। তা খেয়ে অনেকের পীড়া দেখা দিতো। অনেকদিন প্রতিবাদ করার পরেও কোনো কাজ হয়নি। প্রতিবাদের পর প্যাকেট আটা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু বেশির ভাগ শ্রমিক অশিক্ষিত থাকায় পণ্যের মেয়াদ নিয়ে কোনো রকম প্রতিবাদ করা হয়নি। শিক্ষিত দু-একজন চা শ্রমিকের নজরে পড়লে তারা প্রতিবাদ শুরু করেন।
বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শম্ভু দাস বলেন, “বিষয়টি নজরে পড়ার পর তারা বাগানের ব্যবস্থাপককে জানিয়েছেন। এর জবাবে ব্যবস্থাপক এই আটা খেলে সমস্যা হবে না বলে তাদের ফিরিয়ে দেন।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল হক বলেন, “গরিব চা শ্রমিকরা এমনিতেই তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পান না। এজন্য নানা স্বাস্থ্য সমস্যা লেগেই রয়েছে। আমাদের হাসপাতালে চা শ্রমিক রোগীর সংখ্যা বেশি। এখন যদি মেয়াদোত্তীর্ণ বা খোলা-পচা আটা সরবরাহ করা হয় তাহলে তাদের পেটের পীড়াসহ নানা ধরণের রোগের সৃষ্টি হতে পারে।”
বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দাস বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ আটার বিষয়টি জানা ছিলো না। এ ব্যাপারে আগে তাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। তবে ভবিষ্যতে এই আটা শ্রমিকদের দেওয়া হবে না।”
চা বাগানের কাজ থেকে যদি বাদ দিয়ে দেওয়া হয় সেই ভয়ে বেশিরভাগ শ্রমিক প্রতিবাদ করেন না বলেও জানা যায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ আটা সরবরাহ বেআইনি। এ ধরনের আটা সরবরাহ করলে আইনে জরিমানার বিধান রয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “চা শ্রমিকরা যদি অভিযোগ করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা হবে এবং জরিমানাকৃত অর্থের ২৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে।”
চা শ্রমিকদের নানাবিধ সমস্যা ও জীবনমান নিয়ে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আফম জাকারিয়া বলেন, “চা শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। তাদের জীবনমান অত্যন্ত নিম্নমানের। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থাসহ সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়ন খুবই জরুরি। যদি তা না করা হয় তাহলে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্য ফলপ্রসূ হবে না।”
Comments