স্টোকসের অবিশ্বাস্য ইনিংসে ইংল্যান্ডের ইতিহাস
২৮৬ রানে যখন নবম উইকেট পড়ল, ইংল্যান্ডের জিততে তখনো দরকার ৭৩ রান। অস্ট্রেলিয়ার জয় তখন একদম হাত-ছোঁয়া দূরত্বে। কিন্তু বেন স্টোকস নামের অতি মানবের ভাবনা যে ছিল ভিন্ন। সবাই হাল ছেড়ে দিলেও তার মনে বিশ্বাস ছিল ভরপুর। সেটাই করে দেখালেন। এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান জেক লিচকে নিয়ে অসাধ্য সাধন করে গড়লেন ইতিহাস। লিচ করেছেন কেবল ১ রান, বাকি সব রান একাই তুলে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানো এই তারকা।
রোববার হেডিংলির গ্যালারি ছিল ভরপুর, ছিল উত্তেজনায় ঠাসা, ছিল রোমাঞ্চে মাতোয়ারা। সেই গ্যালারি স্টোকসের স্ট্রোকের পসরায় হয়েছে উন্মাতাল। ৩৫৯ রানের রেকর্ড রান তাড়ায় নেমে ১ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। দলকে জিতিয়ে ২১৯ বলে ১১ চার আর ৮ ছক্কায় ১৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন স্টোকস। টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতায় এটাই ইংল্যান্ডের রেকর্ড। এর আগে ৩৩২ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল ইংল্যান্ডের।
অথচ এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৭ রানে গুটিয়ে বড় হারের শঙ্কাতেই পড়েছিল ইংলিশরা। ঘুরে দাঁড়ানোর এক বিস্ময়কর গল্প লিখিয়ে তাদের এই জয় যেন টেস্ট ক্রিকেটের অতি অকৃত্রিম রোমাঞ্চকেই ফের তুলে ধরল চূড়ায়।
এই অবিশ্বাস্য জয়ের পর অ্যাশেজে ১-১ ব্যবধানে সমতাও ফিরিয়ে এনেছে ইংল্যান্ড।
আগের দিন ৩ উইকেটে ১৫৬ রান নিয়ে শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। অবিশ্বাস্য কিছু করতে হলে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকা জো রুটই ছিলেন বড় ভরসা। কিন্তু দিনের একদম শুরুতে আউট হয়ে যান রুট। জোর ধাক্কা খাওয়া ইংল্যান্ড এরপর ঘুরে দাঁড়ায় স্টোকস আর জনি বেয়ারস্টোর ব্যাটে। আগের দিন ৫০ বল খেলে মাত্র ২ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন স্টোকস, অস্ট্রেলিয় পেসারদের ফণা তোলার মাঝে নিজেকে গুটিয়ে দেখিয়েছিলেন দৃঢ়তা।
রুট আউট হওয়ার পর ডানা মেলতে থাকেন স্টোকস। বেয়ারস্টো শুরু থেকেই ছিলেন ইতিবাচক। দুজনের মধ্যে জুটি জমলে আশায় বাড়তে থাকে ইংলিশদের। কিন্তু ৬৮ বলে ৩৬ করে বেয়ারস্টো আউট হয়ে গেলে ভেঙে যায় ৮৬ রানের জুটি।
বেয়ারস্টোর পর রান আউটে কাটা পড়েন জস বাটলার, দ্রুত ফিরে যান ক্রিস ওকস। জোফরা আর্চারকে নিয়ে ফের ২৫ রানের আরেকটি জুটিতে নিভু নিভু আশা জিইয়ে রাখেন স্টোকস। কিন্তু আর্চার আর স্টুয়ার্ট ব্রড পর পর আউট হলে মহাবিপদে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। তখন অবিশ্বাস্য, অতিমানবীয় কিছুরই দরকার ছিল। স্টোকস যেন ঠিক তাই করলেন। শুরুতে পরিস্থিতি বুঝে যিনি রক্ষণে ছিল দৃঢ়, সেই পরিস্থিতির দাবিতেই উন্মাতাল হয়ে উঠে তার ব্যাট। একই ইনিংসে তাই টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির আমেজ দেখান তিনি।
হাতে শেষ ব্যাটসম্যান থাকায় স্ট্রাইক নিজের কাছে রেখে স্টোকস ঝড় তুলেন ব্যাটে। জস হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্সদের ছক্কা, চারে পিটিয়ে রান বাড়িয়ে আবার ওভারের শেষ দিকে প্রান্ত বদল করে টেল এন্ডারকে রক্ষা করে এগুতে থাকেন এই বাঁহাতি। অবশ্য আউট হওয়ারও সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। কামিন্সের বলে পেটাতে থাকা স্টোকসের ক্যাচ ছেড়ে দেন মার্কাস হ্যারিস। তখন জয় থেকে ১৭ রান দূরে ছিল ইংল্যান্ড। অহেতুক রিভিউ নষ্ট করেও পরে আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে অসিদের।
কামিন্সের বলে ১ রান নিয়ে লিচ স্ট্রাইক দেওয়ার পর চার মেরে খেলা শেষ করে দিয়ে শূণ্যে দুহাত তুলে উল্লাস করতে থাকেন স্টোকস। উল্লাসে মাতয়ারা হয়ে যায় পুরো গ্যালারি, ঠিক যেমন মাস দেড়েক আগে বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেশকে মাত করেছিলেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস: ১৭৯
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৬৭
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস: ২৪৬
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৫৯) ১২৫.৪ ওভারে ৩৬২/৯ (বার্নস ৭, রয় ৮, রুট ৭৫*, ডেনলি ৫০, স্টোকস ১৩৫*, বেয়ারস্টো ৩৬, বাটলার ১, ওকস ১, আর্চার ১৫, ব্রড ০, লিচ ১* ; কামিন্স ১/৮০, হ্যাজেলউড ৪/৮৫, লায়ন ২/১১৪, প্যাটিনসন ১/৪৭, লাবুশেন ০/১৬)
ফল: ইংল্যান্ড ১ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বেন স্টোকস।
সিরিজ: পাঁচ টেস্টের সিরিজ তিন টেস্ট পর ১-১ সমতা।
Comments