‘প্রথম’ দেখায় এই প্রথম ‘ফেভারিট’ বাংলাদেশ

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর লম্বা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ফরম্যাটের নবীনতম সদস্য। সে চিত্রটা পাল্টে গেছে বছর দুই আগে। আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান পেয়েছে টেস্ট স্ট্যাটাস, যথাক্রমে একাদশ ও দ্বাদশ সদস্য হিসেবে। নিজেদের আগে থেকে সাদা পোশাকে খেলার মর্যাদা পাওয়া সবগুলো দলের বিপক্ষেই মাঠে নামার স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ, এবার পালা নতুনদের বিপক্ষে পাঁচদিনের ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা নেওয়ার। তার শুরুটা হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানকে দিয়ে।
shakib and domingo
অনুশীলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব (বামে) ও কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর লম্বা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজাত ফরম্যাটের নবীনতম সদস্য। সে চিত্রটা পাল্টে গেছে বছর দুই আগে। আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান পেয়েছে টেস্ট স্ট্যাটাস, যথাক্রমে একাদশ ও দ্বাদশ সদস্য হিসেবে। নিজেদের আগে থেকে সাদা পোশাকে খেলার মর্যাদা পাওয়া সবগুলো দলের বিপক্ষেই মাঠে নামার স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ, এবার পালা নতুনদের বিপক্ষে পাঁচদিনের ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা নেওয়ার। তার শুরুটা হতে যাচ্ছে আফগানিস্তানকে দিয়ে।

চট্টগ্রামে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) শুরু হচ্ছে সিরিজের একমাত্র টেস্ট। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বেশ কয়েকবার মুখোমুখি হলেও দুদলের মধ্যে এটিই প্রথম টেস্ট। আগে যে নয়টি দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছে, তার প্রতিটি ‘প্রথম’ দেখায় বাংলাদেশ ছিল নবিশ। প্রতিপক্ষ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশ শক্তিশালী এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দুদলের মধ্যকার ‘প্রথম’ টেস্টে আফগানরা নবিশ, তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ নামছে অভিজ্ঞতার ঝুলি সঙ্গে নিয়ে, গায়ে জড়িয়ে ‘ফেভারিট’ তকমা।

ফেরা যাক পেছনে। কেমন ছিল সেই দিনগুলো যখন টেস্ট আঙিনায় আনকোরা একটি দল ছিল বাংলাদেশ? বিস্তর ব্যবধানে এগিয়ে থাকা পূর্বসূরি নয়টি টেস্ট খেলুড়ে দলের সঙ্গে ‘প্রথম’ দেখায় কী ঘটেছিল?

২০০০ সালে আইসিসির পূর্ণাঙ্গ সদস্যপদ লাভ। এরপর ওই বছরের নভেম্বরে ঢাকায় ঘরের মাঠে অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ইতিহাসে ঢুকে যাওয়ার দিনে টস নামক ভাগ্য পরীক্ষায় জিতেছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। বেছে নিয়েছিলেন ব্যাটিং।

শুরুর ইনিংসে বাংলাদেশ খেলেছিলও বেশ। টেস্ট মেজাজের সঙ্গে মেলে এমন ধৈর্যশীল ব্যাটিং উপহার দিয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম-হাবিবুল বাশার-আকরাম খানরা। দলের সংগ্রহ ছুঁয়েছিল ৪০০। তবে ভারতের বোলিং লাইনআপের সঙ্গে দ্বিতীয়বারে পেরে ওঠেননি তারা। অলআউট হয়ে গিয়েছিলেন মাত্র ৯১ রানে। সহজ লক্ষ্য তাড়া করে অনায়াসে জয় পেয়েছিল ভারত। ফলে ৯ উইকেটের বড় হার দিয়ে শুরু হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের যাত্রা।

langavelt

পরের বছর চারটি দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে শেষ হয় বিদেশের মাটিতে টেস্ট খেলার অপেক্ষাও। কিন্তু উপলক্ষটা রাঙানো তো দূরে থাক, একরাশ হতাশায় রূপান্তরিত হয়েছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে প্রথমবার বাংলাদেশের সঙ্গী হয়েছিল ইনিংস পরাজয়। স্বাগতিকরা এক ইনিংসে খেলেই পেয়েছিল ৪৫৭ রানের পুঁজি, বাংলাদেশ দুই ইনিংস মিলিয়েও করেছিল ৩২ রান কম।

এরপর পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাদা পোশাকে মাঠে নেমে একই ফল হজম করতে হয়। তিনটি দলই ‘প্রথম’ দেখায় বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জেতে এক ইনিংস হাতে রেখে। এর মধ্যে পাকিস্তানের কাছে হারের ব্যবধানটা ছিল বিশাল, ইনিংস ও ২৬৪ রানের।

২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশ। তবে পুরনো নাটক নতুন করে মঞ্চায়নের মতো ম্যাচের ফলের কোনো হেরফের হয়নি। অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হারটা ছিল ইনিংস ও ১০৭ রানের। এরপর ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে উইন্ডিজের কাছে রীতিমতো লজ্জায় পড়তে হয়েছিল। পাকিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার দুঃসহ স্মৃতিকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ৩১০ রানে।

ক্রিকেট দুনিয়ার দুই প্রাচীনতম সদস্য অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট খেলার স্বাদ নেয় ২০০৩ সালে। অসিরাও জেতে ইনিংস ব্যবধানে। তবে একপেশে হারের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। ক্রিকেটের জনকরা জয় পেয়েছিল ৭ উইকেটে। ওই ম্যাচ দিয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া সবকটি দলের বিপক্ষে মাঠে নামার বৃত্ত পূরণ হয়ে যায় টাইগারদের।

bnagladesh cricket team

অর্থাৎ, ‘প্রথম’ দেখায় বাংলাদেশ নয়টি দলের কাছেই টেস্ট হেরেছে, তার মধ্যে সাতটি আবার ইনিংস হার। তাহলে আফগানিস্তানের সঙ্গে ‘প্রথম’ ম্যাচটা কেমন হতে যাচ্ছে?

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলেছে মোট ১১৪ টেস্ট। ১৩ জয় ও ১৬ ড্রয়ের পাশে ৮৫ হারের পাল্লাই ভারী। তবে ১৯ বছর ধরে খেলে আসায় এই ফরম্যাটের ধরনটা ভালোভাবেই জানা হয়ে গেছে তাদের। অন্যদিকে, আফগানরা খেলেছে মোটে দুটি টেস্ট। ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে বড় হারের পর খেলা দ্বিতীয় টেস্টে রশিদ খানরা হারিয়েছেন আরেক নবাগত আয়ারল্যান্ডকে।

এরই মধ্যে টেস্ট জেতার স্বাদ নিয়ে ফেললেও শক্তি, সামর্থ্য, অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশ পিছিয়ে আফগানিস্তান। তাছাড়া সাকিবদের রয়েছে ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা। ফলে নিঃসন্দেহে ‘ফেভারিট’ তারাই। আফগান কোচ অ্যান্ডি মোলসও সেটা মেনে নিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ দলকে আমরা ব্যাপকভাবে সমীহ করছি। লম্বা সময় ধরে ঘরের মাঠে তারা দারুণ ক্রিকেট খেলছে। আমরা এখানে আন্ডারডগ।’

তবে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথাও জানিয়ে রেখেছেন তিনি, ‘আমরা বাংলাদেশ দলকে ভয় পাচ্ছি না। তাদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আমরা তাদেরকে ভয় পাচ্ছি না। আমরা জানি আমাদেরকে কীভাবে খেলতে হবে।’

mushfiq

ফলে প্রশ্ন থাকছে, আফগান কোচের এই ইতিবাচক মানসিকতার উ কি? আর বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিটি অভিজ্ঞ টেস্ট খেলুড়ে দলই ‘প্রথম’ দেখায় ছিল বেজায় নির্ভার, রশিদদের বিপক্ষে ঠিক তেমনটাই কি থাকতে পারবেন সাকিবরা?

দুটি প্রশ্নের উত্তর নিহিত একবিন্দুতে- আফগানদের স্পিন আক্রমণ। টেস্ট ক্রিকেটে নতুন সদস্য হলেও তাদের ভাণ্ডারে রয়েছে বিশ্বমানের স্পিনার। তারাও আবার একেকজন একেক ধাঁচের। অধিনায়ক ও তারকা লেগি রশিদ যে কোনো দলের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। আছেন অফ স্পিনার মোহাম্মদ নবী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্রই পা রাখা চায়নাম্যান বোলার জহির খানও দারুণ সম্ভাবনাময়।

পার্থক্যটা এখানেই। টেস্ট ক্রিকেটে হাঁটি হাঁটি পা পা চলার দিনগুলোতে বাংলাদেশের এমন কোনো শক্তিশালী দিক ছিল না। ব্যাটিং-বোলিং দুই ক্ষেত্রই ছিল সাদামাটা। ফলে এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষকে বিপাকে ফেলার সক্ষমতার অভাব ছিল। ওই আমলের নবিশ বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা টানলে তাই এই সময়ের নবিশ আফগানরা থাকছে এগিয়ে।

টেস্টের ভেন্যু জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে অতীতে দেখা গেছে স্পিনারদের দাপট। ঘূর্ণিজাল বিছিয়েই সবশেষ সিরিজে এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কুপোকাত করেছিল বাংলাদেশ। এবারও পরিকল্পনা তেমন কিছুর। তাতে সুবিধা পাবে দুদলই। ফলে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুলদের নিয়ে ব্যাটিং বিভাগে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে থাকলেও স্পিন বিভাগে আফগানরা প্রায় সমমানের হওয়ায় ‘ফেভারিট’ বাংলাদেশের জন্য কিছুটা শঙ্কা থাকছেই।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago