রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘকে বাংলাদেশ

‘রোহিঙ্গা স্থানান্তর সমর্থন করো, নইলে দেশ ছাড়ো’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ পাশাপাশি, তিনি চান, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা, তাতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সমর্থন দিক, নইতো (সংস্থাগুলো) দেশ ছেড়ে চলে যাক৷
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন৷ ছবি: ডয়চে ভেলের সৌজন্যে

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন৷ পাশাপাশি, তিনি চান, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে স্থানান্তরের বাংলাদেশের যে পরিকল্পনা, তাতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সমর্থন দিক, নইতো (সংস্থাগুলো) দেশ ছেড়ে চলে যাক৷

ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আব্দুল মোমেন এমন মত প্রকাশ করেন।

গতকাল (৪ সেপ্টেম্বর) জার্মান সংবাদমাধ্যমটিতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয়, রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠানোর এখনই সময়৷ তবে ঐ দ্বীপে সব রোহিঙ্গাকে পাঠানো সম্ভব নয়৷ আমরা মাত্র এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠাতে পারি৷ আমরা তাদের জোর করে পাঠাতে চাই না৷ আমরা আশা করেছিলাম, তারা স্বেচ্ছায় সেখানে যাবে।”

তার মতে, “ভাসান চর দ্বীপে শরণার্থীরা অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারবে৷ কিন্তু, কক্সবাজারে কাজ করা ত্রাণ সংস্থাগুলো ভাসান চরে যেতে চায় না৷ কক্সবাজারে তারা পাঁচতারা হোটেলে থাকতে পারেন, তাই তারা অন্য জায়গায় যেতে চান না৷”

এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে সরানোর বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে আব্দুল মোমেন বলেন, “জাতিসংঘকে এই পরিকল্পনা মেনে নিতে হবে, নয়তো তারা রোহিঙ্গাদের তাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে৷ এই মানুষদের অনেকেই ইতিমধ্যে অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েছে৷”

“ঐ এলাকায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা স্থানীয়দের প্রায় দ্বিগুণ৷ স্থানীয়রা নিয়মিত অপরাধমূলক কার্যক্রমের অভিযোগ করছে৷ আমরা তা হতে দিতে পারি না৷ সে কারণে আমরা তাদের ভাসান চরে যেতে বাধ্য করতে পারি৷ এটা একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা৷ আমরা তাদের চিরদিন রাখতে পারি না৷”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র নয়৷ আমরা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাষ্ট্র৷ এরপরও আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করেছি৷ এখন অন্যদের এগিয়ে আসতে হবে কারণ এটা শুধু আমাদের সমস্যা নয়৷ এটা একটা আন্তর্জাতিক ইস্যু৷ আমরা যদি তাদের নিরাপত্তা না দিতাম, তাহলে তারা গণহত্যার শিকার হতে পারতো৷ এটা হুমকির মতো শোনাচ্ছে৷ আমরা তাদের যে কোনো জায়গায় পাঠাতে রাজি, যে কারো কাছে, যারা তাদের নিতে চায়৷ তাদের অনেক বছর রাখার সামর্থ্য আমাদের নেই।”

জাতিসংঘের বিরোধিতা করার সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে কি?- এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ আমাদের বেশি সাহায্য করছে না৷ তারা মিয়ানমারের রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারছে না৷ জাতিসংঘের এই সংস্থাগুলো কেন মিয়ানমারে কাজ করছে না? তাদের মিয়ানমারে যাওয়া উচিত, বিশেষ করে রাখাইনে৷ সেখানে এমন পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যা রোহিঙ্গারা ফিরতে সহায়তা করতে পারে৷ জাতিসংঘের কাছ থেকে আমরা যে কাজ প্রত্যাশা করি, তা জাতিসংঘ করছে না৷”

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো যদি বাংলাদেশের পরিকল্পনা সমর্থন না করে তাহলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে কী না?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যদি প্রয়োজন হয়, আমরা তা-ই করবো৷”

ভাসান চর দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ৷ সেটি মানুষের বসবাসের উপযোগী কী না- তা জানতে চাওয়া হলে আব্দুল মোমেন বলেন, “এটা নিরাপদ৷ আমরা সেখানে সুন্দর বাড়ি ও বাঁধ নির্মাণ করেছি৷ আমরা যদি বাংলাদেশিদের সেখানে যেতে বলি তাহলে তারা নিশ্চয় যাবে৷” তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গারা যদি ভাসান চরে গিয়ে ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার মধ্যে যারা রোহিঙ্গা ইস্যুকে রাজনীতিকরণ করতে চাইছে আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি,” উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা অনেক লিফলেট, সিডি ও ভিডিও জব্দ করেছি, যেগুলোতে রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট কিছু দাবি না মানলে মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কিছু দাবি মানতে রাজি হয়েছে, যেমন নিরাপত্তা দেওয়া ও চলাফেরার অনুমতি৷ তবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়া, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া, রোহিঙ্গাদের এথনিক গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ঘরবাড়িতে ফেরার অনুমতি দেওয়ার মতো দাবি মানা হয়নি৷”

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

6h ago