‘শামীম ওসমানের সমাবেশ, গাড়ি যাবে না’

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লা চাঁদমারী এলাকায় নারায়ণগঞ্জ আদালতের প্রধান ফটকের সামনে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পদক শাহ নিজামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিআরটিসির এই বাসটি চাষাঢ়া যাওয়ার আগেই আটকে দেন। ছবি: স্টার

“কেন গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিস। জানিস না, আজ শামীম ওসমানের সমাবেশ। গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যা, গাড়ি আর যাবে না। যাত্রীরা হেঁটে যাবে।” ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নারায়ণগঞ্জ আদালতের সামনে বিআরটিসির বাস চালককে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম। সঙ্গে তার অনুগামী নেতাকর্মীরা বাসে একের পর এক থাপ্পড় দিয়ে গেছেন গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার জন্য। তাই গন্তব্যের দেড় কিলোমিটার আগেই বাধ্য হয়ে চালকও বাস ঘুরিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেন।

শনিবার দুপুর ২টা থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লা এলাকার আদালতের প্রধান ফটকের সামনে এভাবেই ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ার উদ্দশ্যে আসা গাড়িগুলো একের পর এক ঘুরিয়ে দেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু সমাবেশে আসা লোকজনের গাড়িগুলো আটকানো হয়নি। আর বেলা সাড়ে ৩টায় সেখান থেকে শাহ নিজামের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু বিআরটিসি বাস নয় ঢাকা থেকে আসা সকল পরিবহনের বাসই আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আটকে দেওয়া হয়েছে। ফলে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নারায়ণগঞ্জমুখী রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যা আদালতের ফটকের সামনে থেকে শিবুমার্কেট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হয়। আর আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। গন্তব্যের আগে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় নিরুপায় হয়ে ওই এক কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে রওনা দেন যাত্রীরা। এতে করে সব থেকে বেশি দুর্ভোগে পড়েন বৃদ্ধ, রোগী, শিশু ও নারীরা।

সাইনবোর্ড থেকে আসেন হামিদ মিয়া। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। তাই তারিখ অনুযায়ী চাষাঢ়ায় ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু এসে বিপদে পড়ে গেছি। শিবু মার্কেট থেকে যানজট শুরু হয়েছে। পাঁচ মিনিটের রাস্তা এক ঘণ্টা যানজটে বসে থেকে নতুন কোর্ট এসেছে বাস। আবার এখানে এসে বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। এখন কোনো রিকশাও পাচ্ছি না।

বিকেলে শহরের মিশনপাড়ায় সলিমুল্লাহ সড়কে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে সমাবেশ করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। ছবি: স্টার

খোরশেদ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “এভাবে রাস্তা বন্ধ করে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে এর বিচার আল্লাহ করবো।”

এভাবে যানবাহনের গতিরোধ করার কারণ জানতে চাইলে টেলিফোনে শাহ  নিজাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “চাষাঢ়া এলাকায় যেন জানজট না হয় সে কারণে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমরা কোনো গাড়ি থামিয়ে রাখিনি। মিছিলে দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়িগুলো ঘুরিয়ে দিয়েছি।”

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা এ কে এম শামীম ওসমান শনিবার বিকেল ৪টায় শহরের মিশনপাড়ায় সলিমুল্লাহ সড়কে সমাবেশের আয়োজন করেছেন। এজন্য ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চ করে সলিমুল্লাহ সড়কের এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচলে দুপুর ১টা থেকেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু যানজট সৃষ্টি না হয়ে ধীরে ধীরে শহর ফাঁকা হয়ে যায়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, শিমরাইল-আদমজী-চাষাঢ়া ও সাইনবোর্ড-চাষাঢ়া ও ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যানবাহন সংকট দেখা দেয়। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে ভীড় থাকলেও গাড়ি না থাকায় অসহায় অবস্থায় পড়েন যাত্রীরা। পরে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা কিংবা ভ্যানে যাতায়াত করেন অনেকই।

হিমাচল পরিবহনের হেলপার ফরহাদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শামীম ওসমানের সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে সমাবেশে আসার জন্য নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রুটের বাস রিজার্ভ করে নেয়। বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা ও শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার প্রায় কয়েকশ’ যানবাহন ভাড়া করা হয়। ফলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, শিমরাইল-আদমজী-চাষাঢ়া ও সাইনবোর্ড-চাষাঢ়া ও ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যানবাহন সংকট তৈরি হয়।

দুপুর ২টা থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লা চাঁদমারী এলাকায় নারায়ণগঞ্জ আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যানবাহন থামিয়ে দেওয়ায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। ছবি: স্টার

৪টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকালেও দুপুর আড়াইটা থেকে সমাবেশের উদ্দেশে আসা একের পর এক মিছিলের কারণে সড়কগুলো শামীম ওসমানের অনুসারী নেতাকর্মীদের দখলে চলে যায়। এতে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়াও দুরুহ হয়ে পড়ে পথচারীদের। তার ওপর ভুভুজেলা, বাদ্যযন্ত্র ও শতাধিক মাইকের উচ্চ শব্দে নাজেহাল হন পথচারীরা ও এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের গেইটম্যান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বেলা ১টা থেকে সম্মান (অনার্স) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সমাজকর্ম পরীক্ষা শুরু হয়। আর কলেজের গেটের সামনে মাইক লাগানো হয়েছে তিনটি। মাইকের শব্দে ভালোভাবে লিখতেও পারছেন না পরীক্ষার্থীরা। শামীম ওসমানের সমাবেশ তাই কেউ কিছু বলেনি।

মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থী আয়েশা আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমাদের পরীক্ষা হলের ৫০ গজ দূরে মাইক লাগিয়েছে। মাইকের শব্দে এমনিতেই মাথা ধরে যায়। এর মধ্যে পরীক্ষা আর কেমন হবে। তারপরও ফাইনাল পরীক্ষা তাই কষ্ট করে দিতে হয়েছে।

সন্ধ্যা ৬টায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যানবাহন শহরে প্রবেশ করতে দেয়নি সেটা আমার জানা নেই। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে যানবাহন চলাচলে বাধা দেওয়া হয়নি। মূলত শামীম ওসমানের সভা ও মিছিলের জন্য যান চলাচলে ব্যহত হয়েছে। আর এক ঘণ্টার মধ্যে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, সভা ও মিছিল করার জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোন অনুমতি নেননি। যার জন্য এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শামীম ওসমানের সমাবেশ শেষ হয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে যানবাহন চলাচল।

আরও পড়ুন: 

প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে শামীম ওসমান: আগুন নিয়ে খেলবেন না

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago