ব্যাংকিং খাত থেকে জনগণের করের টাকা হরিলুট হয়েছে: টিআইবি

শীর্ষ ঋণখেলাপির ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতির খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
tib
ছবি: সংগৃহীত

শীর্ষ ঋণখেলাপির ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতির খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ (১৩ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, “শাসক গোষ্ঠী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে খেলাপি হয়ে যাওয়া বা অন্যায্য সুবিধার মাধ্যমে পুনঃতফসিলিকরণের সুবিধা পাওয়া ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে দেশে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিকিকরণ হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতকে ব্যবহার করে জনগণের করের টাকার হরিলুট হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই লুটেরাদের একাংশই আবার ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের অন্যায্য সুবিধা নিয়ে আইন প্রণেতা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। লক্ষাধিক কোটি টাকার খেলাপি ঋণ, ভয়াবহ তারল্য সংকটের আশংকাজনক বাস্তবতার মাঝে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালনে বারংবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এরই মধ্যে সরকার বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অলস অর্থ ব্যাংকিং খাত থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এখন আমরা শঙ্কিত একথা বলাটাও কম বলা হবে।”

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিজেদের নীতিমালাকেই পাশ কাটিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় চারশো ত্রিশ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ দিতে সম্মত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের হাতে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছে এবং সংকটে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিবর্তে তা ব্যাংকিং খাতকে আরও বেহাল অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সেখানে আরও বলা হয়, যেভাবে বেক্সিমকো লিমিটেডকে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তা নজিরবিহীন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যে ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছে তারই প্রমাণ।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বেক্সিমকো লিমিটেডের যে ঋণ পুনঃতফরিণিকরণের খবর বেরিয়েছে তা চাহিদা ঋণ, সংজ্ঞাগতভাবেই যা পরিশোধের মেয়াদ এক বছরের বেশি হওয়ার নিয়ম নেই। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৃহৎ ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ নীতিমালায় তারা এক দফা অন্যায্য সুবিধা পেয়েছে। এখন আবার সেই নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে তাদের ছয় বছরের জায়গায় ১২ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যেনো প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারে। সংবাদমাধ্যম থেকে আমরা আরও জানতে পেরেছি যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি গোপন রাখতে কোনো সার্কুলারও দেয়নি। এভাবে জনগণকে অন্ধকারে রেখে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার ঘটনায় আমরা রীতিমতো আতঙ্কিত বোধ করছি।”

দেশের অর্থনীতি এমন এক উল্টো পথে হাঁটছে যে, এখনই এর রাশ টেনে ধরা না গেলে ফিরে আসার আর কোনো পথ থাকবে না- মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “কাগজে কলমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, তীব্র তারল্য সংকট আর ব্যাংকিং খাতের এই দুরবস্থার মধ্যে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে একধরণের বুদবুদ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা যায়, যা যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাংকিং খাতের সংস্কার আর শুধু কাগুজে প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই যে, ক্ষমতাসীন মহল পরিস্থিতির গুরুত্ব যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারবেন এবং কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের জন্য খাত সংশ্লিষ্ট নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দ্রুত একটি কমিশন গঠন করবেন; যারা বাস্তবতার নিরিখে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা পেশ করবেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তা বাস্তবায়ন করবেন।”

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago