দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে নায়ক উনিশ পেরুনো আফিফ

ব্যাটিংয়ে চরম বিপদে পড়া জিম্বাবুয়েকে ঝড় তুলে চূড়ায় তুলেছিলেন রায়ান বার্ল। বোলিংয়ে উইকেট নেওয়ার পর ফিল্ডিংয়েও দুর্ধর্ষ থাকলেন তিনি। তার অলরাউন্ড মুন্সিয়ানায় ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবতে যাওয়া বাংলাদেশ যখন হারের শঙ্কায়, তখনই মঞ্চে আবির্ভাব তরুণ আফিফ হোসেনের। এরপর থেকে সব আলো কেড়ে নেন তিনিই। উনিশ পেরুনো আফিফের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে হারতে যাওয়া ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
Afif Hossain
ম্যাচ জেতানো আফিফের শট। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ব্যাটিংয়ে চরম বিপদে পড়া জিম্বাবুয়েকে ঝড় তুলে চূড়ায় তুলেছিলেন রায়ান বার্ল। বোলিংয়ে উইকেট নেওয়ার পর ফিল্ডিংয়েও দুর্ধর্ষ থাকলেন তিনি। তার অলরাউন্ড মুন্সিয়ানায় ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবতে যাওয়া বাংলাদেশ যখন হারের শঙ্কায়, তখনই মঞ্চে আবির্ভাব তরুণ আফিফ হোসেনের। এরপর থেকে সব আলো কেড়ে নেন তিনিই। উনিশ পেরুনো আফিফের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে হারতে যাওয়া ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টির বৃষ্টি বিঘ্নিত ১৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বার্লের ঝড়ে ৫ উইকেটে ১৪৪ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। ওই রান তাড়ায় এক পর্যায়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া বাংলাদেশ জিতেছে ৩ উইকেটে। দলকে একদম জেতার কাছে নিয়ে যাওয়া আফিফ ২৬ বলে ৫২ রান বনেছেন নায়ক।

৬০ রানে ৬ উইকেট খোয়ানো বাংলাদেশ মোসাদ্দেক হোসেন আর আফিফের সপ্তম উইকেটে ৮২ রানের অসাধারণ জুটিতে ম্যাচ জেতে ২ বল বাকি থাকতে।

এর আগে বেশ কয়েকদিন থেকে খারাপ সময়ে থাকা বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত কমশক্তির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও পড়েছিল শঙ্কায়। ১৪৫ রান তাড়ায় নেমে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার আর লিটন দাস শুরুটা পেয়েছিলেন ভালোই। কিন্তু ভালো শুরুটা আরও ভালোর দিকে নিয়ে যাওয়ার সময়েই দুজনেই উইকেট ছুঁড়েন পর পর। টেন্ডাই চাতারার বলে জায়গা বের করে শট খেলতে গিয়ে কোন শটই খেলতে পারেননি লিটন। ততক্ষণে ইয়র্কর ভেঙে দেয় তার স্টাম্প।

ওভার শেষ হতে ঠিক পরের বলেই কাইল জার্ভিসকে উঠিয়ে ক্যাচ দিয়ে দুঃসময় লম্বা করেন সৌম্য। কিছু বোঝে উঠার আগেই মুশফিকুর রহিমও বিদায়। জার্ভিসের লাফানো পরের বলে হকচকিয়ে মুশফিকের ক্যাচ যায় স্লিপে।

চাতারা পরের ওভারে ফিরে সাকিবকে ছেঁটে ফেললে ২৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। অনেক বিপদের উদ্ধারকারী অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহও এই বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে টানতে পারেননি। সাব্বিরকে নিয়ে জুটি থিতু করতেই বার্লের লেগ স্পিনে হয়েছেন এলবিডব্লিও।

বার্লের বলেই ১১ রানে জীবন পাওয়া সাব্বির রহমান ছিলেন ভরসা। কিন্তু বোলিংয়ে তাকে আউট করতে না পারলেও দুর্ধর্ষ ফিল্ডিংয়ে সাব্বিরকে ফেরান বার্ল। মাডজিবার বলে উড়িয়ে মেরেছিলেন সাব্বির। ডিপ মিড উইকেটে অনেকখানি দৌড়ে উড়ন্ত অবস্থায় লাফিয়ে চোখ ধাঁধানো ক্যাচ ধরেন এই অলরাউন্ডার।

৬০ রানে নেই ৬ উইকেট। জিম্বাবুয়ের কাছেও তখন হারের শঙ্কাই বেশি। তখনই ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচে নেমে তরুণ আফিফই বদলে দেন ম্যাচের ছবি। পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ম্যাচে ফেরান দলকে।  দারুণ সব বাউন্ডারিতে রান-বলের ব্যবধান আনেন কমিয়ে। ম্যাচ কাছে এগিয়ে আসতে বুদ্ধিদীপ্ত শটে নিরাপদে আনেন দলকে।  সপ্তম উইকেটে মোসাদ্দেক আফিফ মিলে ৪৭ বলে তুলেন ৮২ রান। এরপর আর কোন ভাবনা থাকেনি দলের।

এর আগে বোলিংয়েও বাংলাদেশের শুরুটা ছিল বেশ ভালো। টেস্ট স্পেশালিষ্ট তকমা থাকা তাইজুল ইসলাম অভিষেক ওয়ানডেতে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। অভিষেক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক না হলেও প্রথম বলেই নেন উইকেট। এবং সবচেয়ে দামি উইকেটই। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্লগ সুইপে উড়াতে গিয়ে ব্র্যান্ডন টেইলর ক্যাচ উঠিয়ে দেন আকাশে।

অবশ্য এক ওভার পরই ব্যাপক মার খান। আলগা বল দেওয়ায় তাকে পিটিয়ে ১৮ রান তুলেন মাসকাদজা-আরভিন। তেতে থাকা আরভিন ফেরেন খানিক পরই। মোস্তাফিজের বলে পুল করতে গিয়ে বাউন্ডারি পার করতে পারেননি। ক্যাচ যায় ডিপ মিড উইকেটে মোসাদ্দেকের হাতে।

অধিনায়ক মাসকাদজাই ঝড় জারি রেখে জিম্বাবুয়েকে রেখেছিলেন পথে। আভাস দিচ্ছিলেন বড় কিছুর। কিন্তু সাইফুদ্দিনের বলে মাসকাদজার ইনিংস শেষ হয় সাব্বির রহমানের দারুণ ক্যাচে। পরের ওভারেই মোসাদ্দেককে সহজ ক্যাচ দিয়ে থামেন অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস। দলকে বিপদে রেখে অভুতুড়ে রান আউটে ফেরেন টিমচেন মারুমা।

৬৩ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে ধুঁকতে থাকা দল এরপর ঘুরে দাঁড়ায় দারুণভাবে। রায়ান বার্ল আর টিনোটেন্ডা মুতুম্বুজি মিলে ঘুরিয়ে দেন পাশার দান। ৬ষ্ঠ উইকেটে তাদের ৫১ বলে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শক্ত পূঁজি পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। জুটিতে বাঁহাতি বার্লই এনেছেন অধিকাংশ রান। ৩২ বলে করেছেন ৫৭, যার বড় একটা অংশ করেন এক ওভারে। সাকিবের ১৬তম ওভার থেকে তিনটি করে ছক্কা-চার মেরে ৩০ রান নিয়ে নেন তিনি।

ওই ওভারেই তৈরি হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের চ্যালেঞ্জিং স্কোরের পথ। সেই চ্যালেঞ্জ দিয়ে তারা বাংলাদেশকে হারিয়েই দিচ্ছিল। যা হতে দেননি ১৯ পেরুনো আফিফ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

জিম্বাবুয়ে: ১৮ ওভারে  ১৪৪/৫  (টেইলর ৬, মাসাকাদজা ৩৪ , আরভিন ১১, উইলিয়ামস ২ , মারুমা ১ , বার্ল ৫৭* মুতম্বুজি ২৭*; সাকিব ০/৪৯, তাইজুল ১/২৬, সাইফুদ্দিন ১/২৬, মোস্তাফিজ ১/৩১, মোসাদ্দেক ১/১০ )

বাংলাদেশ: ১৭.৪ ওভারে ১৪৮/৭  (লিটন ১৯, সৌম্য ৪,  সাকিব ১ , মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ১৪, সাব্বির ১৫, মোসাদ্দেক ৩০*, আফিফ ৫২, সাইফুদ্দিন ৬*; উইলিয়ামস ০/৩১, জার্ভিস ২/৩১, চাতারা ২/৩২, বার্ল ১/২৭, মাডজিবা ২/২৫ )

ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আফিফ হোসেন ধ্রুব।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago