উপাচার্য-ছাত্রলীগ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও পক্ষ-বিপক্ষের শিক্ষক ভাবনা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১,৪৪৫ কোটি টাকার অবকাঠামো নির্মাণ কাজকে কেন্দ্র করে মূলত দুটি অভিযোগ দৃশ্যমান হয়েছে। প্রথমত, পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস করে অপরিকল্পিতভাবে হল ভবন নির্মাণ চলছে। দ্বিতীয়ত, বিপুল অঙ্কের অর্থ কমিশন বা ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নিজে জাবি ছাত্রলীগ নেতাদের ২ কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়েছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপাচার্য প্রথমে বলেছিলেন- ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। টাকা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তারপর হঠাৎ করেই বললেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে- উপাচার্য জাবি ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন।
অপরিকল্পিত নির্মাণ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত-বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আবার এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ও উপাচার্যের অবস্থানকে সমর্থন করছেন কিছু সংখ্যক শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের একাংশ। তারা বলছেন, দুর্নীতি বা টাকা ভাগ-বাটোয়ারার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা মানববন্ধন করে বলেছেন, উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রলীগের টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। উপাচার্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন ও দুর্নীতির বিষয়টিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কোনো কোনো শিক্ষক পত্রিকায় লিখেছেন, টকশোতে কথা বলেছেন।
উপাচার্যের পূর্বের অবস্থানের সমর্থনে কথা বলা এমন দুজন শিক্ষক- সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. হানিফ আলী ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান। উপাচার্যের পরিবর্তিত অবস্থানের পরে তারা কী ভাবছেন? তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হলো, না তারা পূর্বের অবস্থানেই আছেন?
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও জাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান শুরু থেকে সম্পৃক্ত রয়েছেন চলমান আন্দোলনের সঙ্গে। তিনি বা আন্দোলনকারীরা কী ভাবছেন বা তাদের বর্তমান অবস্থান কী?
এই তিন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইন তা জানার চেষ্টা করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আপনি আগে যে বক্তব্য রেখেছেন, ভিসির পক্ষে মানববন্ধন করেছেন, এখন কী সেই বক্তব্য বা অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে বা হবে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. হানিফ আলী দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে গতকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) বলেন- “যেটা উপাচার্য মহোদয় বলেছেন- পত্রিকার মাধ্যমে যা জানতে পেরেছি- এখন (দুর্নীতি) প্রমাণের কথাই তো বলা হচ্ছে। সেই প্রমাণটা যে কী তা ক্লিয়ার হচ্ছে না। কেউই কিন্তু ক্লিয়ারিফাই করতে পারছেন না…, ঘটনাটি প্রমাণিত হচ্ছে না।… ১৪ সেপ্টেম্বর উপাচার্য মহোদয় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। এখন আমরা এই অবস্থাতেই আছি। দুই দিকেই কথাবার্তা হচ্ছে। আন্দোলন বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে…।”
ছাত্রলীগ অভিযোগ করছে ভিসির বিরুদ্ধে, ভিসি অভিযোগ করছেন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। কোন অভিযোগটিকে সঠিক মনে করছেন?- “না, না। আপনি তো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কথা বলতে চাচ্ছেন… তারাই তো ১৪ সেপ্টেম্বর বহিষ্কৃত হয়েছে। তাদের কথাটা জাস্টিফাইড কী না তা বুঝবো কেমন করে? তাদের কথা (অভিযোগ) যে সঠিক তা বোঝার কোনো উপায় নেই।”
তাদের সরিয়ে দেওয়ার আগেই তারা এসব অভিযোগ করেছেন- “হ্যাঁ, রাইট। তারা অপসারিত হওয়ায় এখন কোনটা প্রমাণ করছে সেটা তো বুঝতে পারছি না।… যদিও তাদের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ ছিলো… আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কেও কথা ছিলো। উপাচার্য মহোদয় চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, তারা (ছাত্রলীগ নেতারা) অপসারিত হয়েছেন… তাহলে কাদেরটা সঠিক?”
এ সবকিছু অনিয়ম-দুর্নীতিকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন কি?- “আমার মনে করা তো কোনো বিষয় না। রাব্বানীরা বলছেন দুর্নীতি হয়েছে। উপাচার্য মহোদয় বলছেন- হয় নাই। এখন তারা (শোভন-রাব্বানী) অপসারিত হয়ে গেলেন। এখন তাদের কথা কতোটুকু সঠিক? তারা এসব কথা বলার কারণে অপসারিত হলেন কী না তাও প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেলো।”
আপনার দৃষ্টিতে ঘটনাটিকে কী মনে হয়?- “আমার দৃষ্টিতে… আমার এখানে কিছু বলার নেই। আমার কথা হলো- প্রমাণ থাকা উচিত।… আমরা অনেক আগেই বলেছি- প্রমাণ দেখতে চাই। এতো বড় একটা ঘটনার কথা বলছেন কিন্তু, কোনো দিক থেকে কোনো প্রমাণ তো পাচ্ছি না!”
“আমাদের এখানে যারা ছাত্র আন্দোলন করছেন তারা তো কোনো প্রমাণ দিতে পারছেন না।”
দুর্নীতির অভিযোগ ও অপরিকল্পিত নির্মাণের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন, তাকে আপনারা উন্নয়ন-বিরোধী বলেছেন। ভিসি-ছাত্রলীগের অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের পর কী আন্দোলনকারীদের দাবি যৌক্তিক প্রমাণ হলো না?- “কীভাবে? রাব্বানীরা অভিযোগ করে অপসারিত হয়ে গেলেন। তাহলে প্রমাণিত হলো কীভাবে?”
“(আবাসিক হলের) স্থান পরিবর্তনের বিষয়টি তো হয়েছে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমরা আগেও আলাপ-আলোচনার কথা বলেছি। আমরা আলোচনাকে স্বাগত জানাই।”
এই চলমান আন্দোলনে আপনার অবস্থান ছিলো উপাচার্যের পক্ষে। তাই নয় কি?- “না…, হ্যাঁ…, আমি ম্যাডামের পক্ষে বলতে… আমার অবস্থানটা এরকমই আর কী।”
তাহলে এখনকার প্রেক্ষাপটে আপনার অবস্থানটা কী?- “আজকে কি কোনোরকম পরিবর্তন এসেছে? আমি আলাপ-আলোচনায় রাজি। স্বচ্ছতার জন্যে কমিটি হোক। উপাচার্য যা বলেছেন সে বিষয়ে আমি একমত। দুর্নীতির বিষয় হলে আমি এভিডেন্স চাই। এভিডেন্স পেলে তখন আপনি আমার অভিমত নিতে পারেন।”
উপাচার্য নিজেই যখন অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরেছেন তখন আপনার অবস্থান কী?- “একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার নিজস্ব অবস্থান রয়েছে।… আসলে আমরা পরিষ্কার কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ পাচ্ছি না। সমস্যাটা এখানেই।”
এখন কী আপনারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরেকটি মানববন্ধন করবেন? বা আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করবেন?- “আমি কী অবস্থান নিবো সেটা বড় কথা নয়। (আন্দোলনকারীরা) কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ দেখাতে পারেনি।… যারা বলছে দুর্নীতি হয়েছে তাদের কাছ থেকে আমি সাক্ষ্য-প্রমাণ চাই। তা পেলে আমার একধরনের অবস্থান থাকবে।”
অনিয়ম-দুর্নীতি অভিযোগ বিষয়ে উপাচার্যের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এটিএম আতিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমি একই অবস্থানে আছি।… আমরা কেনো উপাচার্যকে সমর্থন করি? কারণ হচ্ছে- তিনি একজন পরিশীলিত মানুষ। এবং রুচি-সংস্কৃতির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। উনি অর্থ লেনদেনের মতো কোনো খারাপ কাজ করতে পারেন সেটা আমরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করি না। এ নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহও নেই। যারা অভিযোগ করছে সে অভিযোগগুলো তথ্য-ভিত্তিক না। এগুলো কল্পিত কাহিনীর মতো। কারো কথায় এমন একজন মানুষকে (উপাচার্য) কলঙ্কিত করা যায় না। উনি নিজেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন- কারো কাছে যদি এমন প্রমাণ থাকে তাহলে প্রমাণ দিক। উনার এই চ্যালেঞ্জটি আমাদের যে অবস্থান সেই অবস্থানে থাকতে সহায়তা করে।”
তাহলে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠছে সে বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?- “যারা এমন অভিযোগ তুলছে তাদের কোনো না কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। শিক্ষার্থীরা একটি অবস্থান থেকে আন্দোলন করছে- পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষার জন্যে। তাদের বিবেচনায় এই আন্দোলনের ন্যায্যতা রয়েছে। এর সঙ্গে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নেই।… কিন্তু দুর্নীতির যে বিষয়টি- এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই আপনি দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন?- “যারা অভিযোগ করছেন স্বাভাবিকভাবেই তারা তদন্তের দাবি করছেন। উপাচার্য তো নিজে নিজের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারেন না।… তার ওপরে যারা রয়েছেন তারা তদন্ত করতে পারেন। আমার দিক থেকে তদন্ত করা নিয়ে কোনো আপত্তিও নেই। উপাচার্য নিজেই ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। যদি কেউ বিষয়টি ক্লিয়ার করেন তাহলে অসুবিধার কিছু নেই।”
তাহলে যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন- “আন্দোলনকারীদের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টিকে আমি সমর্থন করি না। পরিবেশ-প্রকৃতির বিষয়ে তাদের অনেক বিষয় রয়েছে যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু, দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
একজন শিক্ষক হিসেবে নৈতিকতার জায়গা থেকে কি আপনি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আসা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত দাবি করবেন?- “আমরাতো পরিষ্কার যে উনি (উপাচার্য) এ কাজে (দুর্নীতি) যুক্ত নন।”
তাহলে এই যে (উপাচার্য ও ছাত্রলীগের) অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ- “দলমত নির্বিশেষ তিন শতাধিক শিক্ষক স্বাক্ষর দিয়ে (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত) টিআইবি বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি করেছি। উপাচার্য দুর্নীতি করেননি এটি আমরা পরিষ্কারভাবে বিশ্বাস করি। তাহলে আমরা কেনো (দুর্নীতি) তদন্তের দাবি জানাবো? তবে তদন্ত হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
উপাচার্য অভিযোগ করছেন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, আবার ছাত্রলীগ অভিযোগ করছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে। কোন অভিযোগটি সঠিক বলে আপনি মনে করেন?- “আমিতো মনে করি উপাচার্য যা বলেছেন সেটিই ঠিক।”
দুর্নীতি না থাকলে এমন অভিযোগ উঠে কেমন করে?- “সেটাতো আপনি বুঝেন। না বোঝার তো কোনো কারণ নেই। আমি আপনার কাছে একটি জিনিস চাইলাম। তা পেলাম না। তখন আপনার সম্পর্কে আজে-বাজে কথা বলে দিলাম।”
উপাচার্য প্রথমে অস্বীকার করেছিলেন যে ছাত্রলীগের সঙ্গে টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আবার তিনিই টাকা-পয়সা নিয়ে কী ধরনের কথা হয়েছে তা বলেছেন। উপাচার্যের অবস্থান পরিবর্তনের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?- “না, না।… এ বিষয়ে কী কথা হয়েছে তা আমি জানি না।… কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পারসেন্টেজ দাবি করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি বলেছেন।… স্থানীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে উনাকে (উপাচার্যকে) জড়িয়ে যে কথা উঠেছিলো তা তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। আর কেন্দ্রীয় নেতারা তার কাছে পারসেন্টেজ দাবি করেছে- তিনি তা বলেছেন।”
ছাত্রলীগের সঙ্গে আলোচনার কথা উপাচার্য আগে অস্বীকার করলেন এবং পরে তা স্বীকার করে নিলেন। আপনি উনার আগের বক্তব্য সমর্থন করেছেন, পরের বক্তব্যও সমর্থন করছেন। একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার নৈতিক অবস্থান কোথায়?- “আমি পুরোপুরিভাবে নৈতিক অবস্থানে রয়েছি। এ আন্দোলনের বিহাইন্ড দ্য সিন- অর্থাৎ এর পেছনে এমন লোকজন রয়েছেন যারা আগে এমন অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তারা এখন উপাচার্যকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন- এটিই হচ্ছে মূল বিষয়। উনার দল না করেও উনাকে আমরা সমর্থন করি এ জন্যে যে, উনি তুলনামূলকভাবে অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বেশি পরিশীলিত এবং নীতিবান-আদর্শবান।”
উপাচার্য প্রথমে যখন (ছাত্রলীগের সঙ্গে) আলোচনার কথা অস্বীকার করলেন আবার পরে তা স্বীকার করে নিলেন তাহলে নীতির জায়গাটি থাকলো কোথায়?- “প্রথম অভিযোগটি উনার বিরুদ্ধে উঠেছিলো যে উনি ছাত্রলীগকে টাকা দিয়েছেন। যেহেতু তা ঘটেনি তাই তিনি তা অস্বীকার করেছেন। পরের প্রসঙ্গটি হলো পুরোপুরি ভিন্ন।”
যেমন?- “কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে বক্তব্যগুলো এসেছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছাত্রলীগ বাধা দিতে চেয়েছিলো, টাকা দাবি করেছিলো- তিনি তা বলেছেন। তিনি তাদের সঙ্গে কোনো আপস-মীমাংসায় যাননি। তিনি তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ও জাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, “আমরা গত ১২ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের সঙ্গে বসেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন যে কোনো অনিয়ম হয়নি। তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন- তার সঙ্গে ছাত্রলীগের বৈঠকে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা হয়েছিলো। অর্থ লেনদেনের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছিলো- তা তিনি বলেননি। যেহেতু আমরা অভিযোগ পাচ্ছিলাম, পত্রিকার নিউজের মাধ্যমে, তাই তাকে বলেছিলাম- আপনি বলছেন এক কথা, আর গণমাধ্যমে পাচ্ছি অন্য কথা। এটি ফয়সালার জন্যে একটি তদন্ত কমিটি হওয়া উচিত। উনি বললেন- (অনিয়ম) কিছুই হয়নি। তবে (তদন্তের জন্যে) কীভাবে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা যায় সে জন্যে দুই-তিনদিন সময় চাই।”
“কিন্তু, গত দুইদিনের সংবাদে বিষয়টি বদলে যায়। উপাচার্য ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে বললেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি-সম্পাদক তার কাছে চাঁদা দাবি করেছিলেন। উপাচার্যের সেদিনের কথা আর ১৪ সেপ্টেম্বরের কথার মধ্যে কোনো মিল পাওয়া গেলো না। সে কারণে আমরা যারা বলছি- এটি সুরাহা করার জন্যে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দরকার- সেই দাবিটি আরো জোরালো হচ্ছে।”
“আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য- মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে দ্রুত একটি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।”
এই দাবিটি আপনারা কীভাবে তুলে ধরতে চাচ্ছেন?- “যেহেতু উপাচার্য এবং ছাত্রলীগ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে স্বনামে অভিযোগ করছেন, ফলে কোনো অবস্থাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া শুধু মিটিং-মিছিল করে এই সংকট দূর করা যাবে না। তাই আমাদের দাবি আগেও যেটি ছিলো- তা হলো বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি অথবা মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে প্রক্রিয়ায় চান সে প্রক্রিয়ায় একটি তদন্ত কমিটি হতে হবে এবং এর বাইরে যাওয়া যাবে না। এই এক দাবিতেই আমরা থাকবো।”
“যেহেতু আগামী বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত উপাচার্য সময় নিয়েছেন তাই সেদিনের বৈঠকের ওপর নির্ভর করবে কোনদিকে যাবে এই আন্দোলন। যেভাবে (আন্দোলন করলে) দাবি আদায় হবে সেভাবে কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
উপাচার্যের পক্ষের শিক্ষকরা বলছেন যে দুর্নীতির কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। এমন অভিযোগ অমূলক।– “অভিযুক্ত বা অভিযোগকারী সবাই নিজেদের পক্ষে কথা বলবেন এটিই স্বাভাবিক। বিচারক তার রায় দিবেন। বিচার প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকেই তাদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু, কোনটা ঠিক তা বের করে আনার জন্যেই তদন্তের প্রয়োজন।”
আপনাদের পক্ষ থেকে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ চাওয়া হলে সেটি কীভাবে উপস্থাপন করবেন?- “ছাত্রলীগের বিদায়ী সম্পাদক নিজেই বলেছেন (অনিয়মের কথা)। তিনি নিজেইতো সাক্ষী। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য পত্রিকাগুলোতে যখন সংবাদটি আসে তখন আমরা সেটিকে এক ধরনের ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ মনে করি। আমরা মনে করি যে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে।… বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে এ ধরনের অনেক সাক্ষী পাওয়া যাবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর যদি না পাওয়া যায় তাহলে তিনি (উপাচার্য) নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। এতে ভয়ের কিছু নেই।”
উপাচার্য-ছাত্রলীগের এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার অবস্থান কী?- “একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি- ওনাদের (উপাচার্য ও ছাত্রলীগ নেতাদের) বক্তব্যে যেটা পরিষ্কার বোঝা গেছে- এরকম একটি (টাকা লেনদেন বিষয়ে) আলোচনা হয়েছে তাদের মধ্যে। সেই আলোচনায় কে দায়ী বা কে দায়ী নন সেটি বলার আগে আমি বলতে চাই- এই ধরনের আলোচনা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ছাত্র নেতৃত্বের কাছে এটি প্রত্যাশিত নয়।… আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উপাচার্যের নিজেরও (ভাবমূর্তি) ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উনি আমাদেরও উপাচার্য। ফলে আমরা চাই- এই অবস্থায় আমাদের যে উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে সেটি দ্রুত শুরু হোক। তবে (অভিযোগের) এই দায় থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও উপাচার্যকে মুক্ত হতে হবে।”
আরো পড়ুন:
আমরা ‘ন্যায্য পাওনা’ দাবি করেছিলাম: রাব্বানী
মিথ্যা বলেছে ছাত্রলীগ, ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়লেন জাবি উপাচার্য
আন্দোলনকারীদের ২ শর্ত মেনে নিলো জাবি প্রশাসন
শিক্ষা নয়, জাবির আলোচনার বিষয় ‘২ কোটি টাকা’র ভাগ-বাটোয়ারা
‘২ কোটি টাকা ভাগের সংবাদে শিক্ষক হিসেবে খুব বিব্রত বোধ করি’
জাবি উপাচার্যের সঙ্গে ছাত্রলীগের ‘প্রশ্নবিদ্ধ বৈঠক’, টিআইবির উদ্বেগ
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর
জাবি ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দল ও সংঘর্ষের নেপথ্যে ৪৫০ কোটি টাকার নির্মাণ কাজ
Comments