পায়রায় জাহাজডুবি: ছয়দিনেও শুরু হয়নি উদ্ধার কার্যক্রম

পায়রা বন্দরের প্রবেশমুখে ১৫২ কনটেইনার ভর্তি পণ্য নিয়ে ডুবে যাওয়ার ছয়দিন পরেও ‘এমভি গালফ আরগো’ জাহাজটির উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। জাহাজটিতে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ঢাকার মেট্রোরেলের সরঞ্জাম ছাড়াও ২৫টি শিল্পগ্রুপের পণ্য ছিল। কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে উদ্দেশে যাত্রা করা এ জাহাজটিতে ইস্পাত পণ্য তৈরির কাঁচামাল, স্ক্র্যাপ, যন্ত্রপাতি, চা, প্রসাধনী, কাপড়, তার সহ বিভিন্ন শিল্প পণ্যের কাঁচামাল ছিল।

জাহাজটির মালিক গালফ ওরিয়েন্ট সি ওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাহফুজ হামিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, জাহাজটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রান্তিক বেঙ্গল স্যালভেজ অ্যান্ড ডাইভিং কোম্পানিসহ দেশি-বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সার্ভেয়ার হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে জাহাজটিতে থাকা পণ্যের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, জাহাজটি থাকা পণ্যের ক্ষতিপূরণের জন্য লন্ডন ভিত্তিক বীমা প্রতিষ্ঠান পিএন্ডআই ক্লাব এর একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। তাদের নিয়ে আজ বুধবার হেলিকপ্টারে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরিদর্শন শেষে বলা যাবে কবে থেকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে ৮৩ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫.৫ মিটার প্রস্থের জাহাজটি পায়রা বন্দরের প্রবেশমুখে ডুবে যায়। সেখানকার গভীরতা কম হওয়ায় জাহাজটি পুরোপুরি ডুবেনি। জাহাজের ওপরের দিকে থাকা কম ওজনের কনটেইনারগুলে ঢেউয়ে ভেসে গেলেও অধিকাংশ কনটেইনার এখনো জাহাজে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জাহাজটি থাকা পণ্যের আমদানিকারকদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। জাহাজ ও জাহাজে থাকা পণ্যের উভয়ের বীমা থাকায় নির্ধারিত প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই ক্ষতিপূরণ পাবেন।

জানা গেছে, জাহাজটিতে ঢাকা মেট্রোরেলের জন্য ছয় কনটেইনার ‘ব্যালাস্টলেস ট্র্যাক’ হিসেবে ১৪২ টন রেল লাইনের নির্মাণ সরঞ্জাম এবং রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আনা দুই কনটেইনার যন্ত্রপাতি ছিল।

এছাড়া বিএসআরএম এর ৫২ কনটেইনার স্ক্র্যাপ ও  নির্মাণ সামগ্রী, আবুল খায়ের গ্রুপের ১০ কনটেইনার স্ক্র্যাপ, পিএইচপি গ্রুপের সাত কনটেইনার ঢেউটিন তৈরির যন্ত্রপাতি, কেমসআরএম এর চার কনটেইনার স্ক্র্যাপ ছাড়াও ইউনিলিভার, স্কয়ার, ইস্টার্ন ক্যাবলস লিমিটেড, জাবের ও জুবায়ের ফেব্রিক্স, সিরাজ ইস্পাত ও ইভানা ক্যাবলস প্রতিষ্ঠানের পণ্য ছিল।

এ বিষয়ে পিএইচপি গ্রুপের মুখপাত্র দিলশাদ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ফেনীতে ৩০ একর জায়গায় আমাদের ঢেউটিন তৈরির একটি নতুন কারখানা হচ্ছে। এ কারখানার জন্যই ভারত থেকে প্রায় দুই লাখ ডলার মূল্যের যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারখানায় চালু করতে না পারলে উৎপাদনে যেতেও আমাদের দেরি হবে।

বিএসআরএম লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন কর বলেন, পণ্যের যেহেতু বীমা করা আছে তাই আর্থিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে পণ্য যথাসময়ে না পেলে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

এদিকে জাহাজ থেকে সাগরে পড়ে যাওয়া পণ্য ঢেউয়ে ভেসে উপকূলসহ আশপাশের নদীতেও ছড়িয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত ১৪ কার্টুন প্রসাধনী সামগ্রী ও ৬০ ড্রাম কালার প্রিন্ট উদ্ধার করেছে কালাপাড়া ও মহিপুর থানা পুলিশ। এছাড়া স্থানীয় জেলেদের জালেও বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর আটকা পড়ছে।

এ বিষয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সুহেল আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে আশপাশের প্রায় ছয় সাত কিলোমিটার দূর পর্যন্ত জাহাজটির পণ্য স্থানীয় জেলেদের জালে আটকা পড়ছে। কিছু কিছু পণ্য নদী থেকেও উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে উদ্ধার হওয়া এসব পণ্য থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

1h ago