বিপ্লবের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে 'বিপ্লবের' আশা

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্বপ্নিল শুরু টাইগারদের, এরপর হুট করেই পথ হারানো। বিচ্ছিন্ন পথটা এখনও সঠিক পথে আনতে পারেননি তারা। মাঝে শ্রীলঙ্কা সঙ্গের হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর আফগানদের কাছে ঘরের মাঠে করুণ হার যেন ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছে। আর তাতে গেল গেল রব পড়ে গেছে ক্রিকেট পাড়ায়। আর মিরপুরে নানা সংকটে থাকা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যখন ধুঁকতে ধুঁকতে জয় পেতে হয়েছিল তখন চরম আশাবাদী লোকটিও হতাশায় ডুবেছেন।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে স্বপ্নিল শুরু টাইগারদের, এরপর হুট করেই পথ হারানো। বিচ্ছিন্ন পথটা এখনও সঠিক পথে আনতে পারেননি তারা। মাঝে শ্রীলঙ্কা সঙ্গের হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর আফগানদের কাছে ঘরের মাঠে করুণ হার যেন ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছে। আর তাতে গেল গেল রব পড়ে গেছে ক্রিকেট পাড়ায়। আর মিরপুরে নানা সংকটে থাকা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যখন ধুঁকতে ধুঁকতে জয় পেতে হয়েছিল তখন চরম আশাবাদী লোকটিও হতাশায় ডুবেছেন।

ভাগ্য ফেরাতে সাগরিকায় পা রাখে বাংলাদেশ দল। একসময় এ মাঠ পয়া হিসেবেই চিহ্নিত হতো। দুঃসময়েও অনেক বড় বড় জয় এসেছে সে মাঠেই। সঙ্গে একাদশে আনা হলো বড় বড় রদবদল। আনা হলো আনকোরা তরুণ আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে। যাকে কিনা দুদিনও আগেও চিনতেন না জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও। আমিনুল এলেন, দেখলেন এবং জয়ও করলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দাপুটে জয়ই পেল টাইগাররা।

হয়তো জয়ের মূলনায়ক নন আমিনুল। তবে পার্শ্বনায়ক নিঃসন্দেহে। আবার বল হাতেও যে খুব কিছু করে ফেলেছেন তাও নয়। ১৪ রানের খরচায় ২টি উইকেট। অবশ্য একজন লেগ স্পিনারের জন্য এরচেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। কিন্তু আমিনুল এগিয়ে অন্য দিকে। আনকোরা এ তরুণ লেগি মোটেও পেশাদার বোলার নন। দুদিন আগে টুকটাক তাকে যারা চিনত, সেটাও চিনত ব্যাটসম্যান হিসেবে। কিন্তু বোলার হিসেবে ঠিক যা দরকার তাই করেছেন। স্নায়ুচাপ জয় করে ভীষণ সাহসিকতার সঙ্গে বল ফেলেছেন জায়গা মতো। তাতেই মিলেছে সাফল্য।

অর্থাৎ সাফল্যের মন্ত্রটা সতীর্থরা পেতেই পারে এ তরুণের কাছ থেকে। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে যেভাবে স্নায়ুচাপ সামলেছেন সেটা উদাহরণ হতে পারে সবার জন্য। কারণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর সাড়া বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো অধিনায়ক সাকিব আল হাসান খোদ স্বীকার করেছেন স্নায়ুচাপের কথা।

বলে খুব বেশি টার্ন নেই। গুগলিও দিতে পারেননি কিংবা দেননি। কিন্তু টানা চার ওভার বল করেছেন, সেখানে বিন্দুমাত্রও নড়বড়ে মনে হয়নি। এমনকি নিজের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই হাতে ব্যথা পেয়েছেন। যার জন্য পরে সেলাই দিতে হয়েছে তিনটি। সে ব্যথা নিয়ে পরে উইকেট আদায়ও করেছেন। আত্মবিশ্বাসই ছিল তার মূলমন্ত্র। শিল্পের ছোঁয়া না থাকলেও যে সাফল্য পাওয়া যায় তাও দেখিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশ দলে এমন অনেক খেলোয়াড়ই রয়েছেন, যাদের দলে নেওয়ার সময় যুক্তি দেওয়া হয় তারা মেধাবী খেলোয়াড়। কিন্তু বছরের পর বছর খেলেও তার ছিটেফোঁটাও দেখাতে পারেননি।

আর এ আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন দলের সিনিয়র সতীর্থদের কাছ থেকেই। অধিনায়ক সাকিব, মাহমুদউল্লাহ সবাই দিয়েছেন। আমিনুলই জানালেন এ তথ্য, 'ম্যাচের শুরুর দিকে আমি একটু নার্ভাস ছিলাম। যখন এতো অভিজ্ঞ মানুষগুলো সমর্থন করে, বলে যে কিছু হবে না, ঘাবড়িয়ো না... সাকিব ও রিয়াদ ভাইয়ের মতো বড় খেলোয়াড় এগুলো বলে তখন এমনিতেই আত্মবিশ্বাস চলে আসে। আমি শুধু ওটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।'

অথচ বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যে আত্মবিশ্বাসের অভাবেই। প্রতিটি হারের পর অধিনায়ক হতে দলের প্রায় সব খেলোয়াড়রা বলে যাচ্ছেন ওই একটি কথাই। আত্মবিশ্বাসের তলানিতে দল। তরুণ আমিনুল নিজের প্রথম ম্যাচেই যখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে পারেন, সেখানেই দলের বাকী সবাই কেন নয়? প্রশ্ন উঠতে পারে দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় দিয়েই এতো কিছু। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, হারের বৃত্তে থাকা বাংলাদেশ দল বরাবরই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাই এখান থেকেই হয়তো নতুন শুরু করতে পারে টাইগাররা।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago