পুলিশ বললেন- ‘জানতেন না’, স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘তারা সবই জানেন’

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে পুলিশের অভিযান। ছবি: শাহীন মোল্লা/ স্টার

মতিঝিল থানা থেকে সর্বোচ্চ ২০০ গজের মধ্যে অবস্থিত এই চারটি ক্লাব। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সর্বমহলে সমালোচনার প্রেক্ষিতে ক্লাবগুলোতে আজ (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক যোগে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া, দিলকুশা ও আরামবাগ ক্লাবগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে ক্যাসিনো খেলা চলছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ, পুলিশ বলছে- তারা বিষয়টি জানতেন না। অন্যদিকে, স্থানীয়দের প্রশ্ন- সাধারণ মানুষ জানেন আর প্রশাসন জানে না?

এখানে ক্যাসিনো রয়েছে তা আগে জানতেন না?- এর উত্তরে পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (মতিঝিল জোন) মিশু বিশ্বাস দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “এগুলো স্পোটিং ক্লাব। এখানে টুকটাক জুয়া খেলা হতো। তা বন্ধ করার জন্যে অভিযান চালানোও হয়েছে। কিন্তু, এতো বিশাল আয়োজনে জুয়া ও অনৈতিক কাজ চলতো তা আমাদের জানা ছিলো না।”

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা ডেইলি স্টারকে জানান, অনেকে জুয়া খেলে হেরে চোখ মুছতে মুছতে ক্লাব থেকে বের হতেন। কেউ রাস্তায় গালাগালি দিতে দিতে যেতেন। কখনো কখনো লোকজনদের মধ্যে হাতাহাতি হতো।

তারা আরো জানান, ক্লাবগুলোর সামনে মাঝে-মাঝে পুলিশের গাড়ি আসতো। পুলিশদের কেউ কেউ ক্লাবের ভিতরে যেতেন। তারা ভেতরের খবর জানতেন না তা কেমন করে হয়?- পাল্টা প্রশ্ন করেন ক্লাবগুলোর আশেপাশের কয়েকজন দোকানদার।

তাদের মধ্যে একজন বললেন, “এই অভিযানে আমাদের বেচা-কেনা কমে গেলেও আমরা খুশি।”

মোহামেডান ক্লাবে অভিযান চলাকালে কর্মচারীদের চলতি বছরের জুন মাসের বেতন তালিকার একটি অংশ। ছবি: শাহীন মোল্লা/ স্টার

স্থানীয়রা আরো জানান, ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো খেলার বিষয়ে কোনো গোপনীয়তা ছিলো না। অনেক রাজনৈতিক নেতাও এখানে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। ক্লাবগুলোতে চব্বিশ ঘণ্টাই লোকজনের আনাগোনা ছিলো। মাঝেমাঝে ভিড় এতো বেশি হতো যে ক্লাবের বাইরে অনেক মানুষ অপেক্ষা করতেন। এ নিয়ে অপেক্ষমান লোকদের হট্টগোলও হতো।

এখানে দিন না রাত তা বোঝা যেতো না। সবসময়ই লোকজনে ভরপুর ছিলো বলেও মন্তব্য করেন কয়েকজন।

অনেকের অভিযোগ- দুটি ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর গত কয়েক দিনে অনেক কিছু এই ক্লাবগুলোর বাইরে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই আজকের অভিযানে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি।

এদিকে, মোহামেডান ক্লাবে অভিযান চলাকালে কর্মচারীদের চলতি বছরের জুন মাসের বেতন তালিকা পাওয়া যায়। সেই তালিকায় ১৩ নেপালের নাগরিকের নাম রয়েছে। তাদের বেতন ৬০০ থেকে ১০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত- এমনটি উল্লেখ করা রয়েছে সেই তালিকায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই ক্লাব থেকে ৩০ প্রকারের মালামাল জব্দ করেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাসিনো খেলার নানা উপকরণ। এছাড়াও, ১১টি ওয়াকিটকি এবং বেশ কয়েকটি বড় ছুরিও উদ্ধার করা হয়। জব্দকৃত মালামালের মধ্যে আরো রয়েছে টাকা গোনার মেশিন, তাস, ইলেক্ট্রনিক বোর্ড ইত্যাদি।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।

এসব কাজে কারা জড়িত?- এর উত্তরে পুলিশ কর্মকর্তা মিশু বিশ্বাস বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ক্লাবগুলোর পরিচালনা পর্ষদে যারা রয়েছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

10h ago