জন্মান্ধ ছেলেকে খেলার বর্ণনা শোনানো সেই মা জিতলেন পুরস্কার

ছবি: এএফপি

‘তুঝে সাব হ্যায় পাতা, হ্যা না মা?’ বলিউড মুভি ‘তারে জামিন পার’-এর এ গানটি ভালো লাগে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দায়। প্রশ্নটি ছেলের হলেও উত্তর একটাই, মায়েরা সন্তানের সবই জানেন। নিকোলাসের মা সিলভিয়া গেকোও জানেন। জানেন তার ছেলে কতোটা ফুটবল পছন্দ করে। কিন্তু বিধাতা তাকে দেয়নি দৃষ্টিশক্তি। তাই বলে কি ছেলের স্বাদ অপূর্ণ থাকবে? ছেলের ইচ্ছা পূরণ করেছেন সিলভিয়া। আর তার স্বীকৃতিও পেয়েছেন ফিফার কাছ থেকে। যদিও মায়েদের কোনো স্বীকৃতির প্রয়োজন হয় না।

আগের রাতে ইতালিতে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় ফিফা দ্য বেস্ট পুরষ্কার। রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বর্ষসেরা হয়ে সবার নজর কেড়েছেন লিওনেল মেসি। তবে অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রার আবেশ ছড়িয়ে আবেগের পুরোটাই কেড়ে নিয়েছেন সিলভিয়া ও তার ১২ বছর বয়সী ছেলে নিকোলাস। ফিফার বর্ষসেরা ভক্ত নির্বাচিত হয়েছেন সিলভিয়া। ৫৮.৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন এই মমতাময়ী।

সিলভিয়া ও তার ছেলে নিকোলাস সাও পাওলোর দল পালমেইরাসের ভক্ত। পছন্দের দলের খেলা দেখতে প্রায়ই মাঠে যান তারা। পালমেইরাসের এক ম্যাচে গত বছর ব্রাজিলিয়ান এক রিপোর্টার লক্ষ্য করেন যে, গ্যালারিতে এক মা তার অন্ধ ছেলেকে খেলার বর্ণনা শোনাচ্ছেন। তিনি তখন ক্যামেরাম্যানকে বলেন, সে দৃশ্য ধারণ করতে। পরে নিকোলাসের সে ভিডিও তিনি পুরো ব্রাজিলকে দেখান। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় দেখে পুরো বিশ্বও।

‘আমি পুরো বিষয়টা বর্ণনা করি। পরিবেশ-পরিস্থিতি, প্রতিটি খেলোয়াড়ের ধরন বর্ণনা করি। এমনকি খেলোয়াড়রা কি ধরনের জার্সি পড়ে, কি রঙের বুট পড়ে। তাদের চুলের রংও। আমি পেশাদার নই, খুব ভালো বলতে হয়তো পারি না, তবে আমি যা আমি অনুভব করি, তাই আমার ছেলেকে শোনাই। এমনকি মাঝে-মধ্যে রেফারিকে অভিশাপও দিতে বলি। তবে গোলের বর্ণনা দেওয়া রোমাঞ্চকর একটি ব্যাপার’- ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ছেলেকে কি কি বর্ণনা করেন তা জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে এমনটাই বলেছিলেন সিলভিয়া।

দল হিসেবে পালমেইরাসের ভক্ত হলেও নিকোলাসের প্রিয় খেলোয়াড় নেইমার। মায়ের কাছ থেকেই এ পিএসজি তারকার স্কিল সম্পর্কে জেনেছেন তিনি। প্রিয় তারকার সঙ্গে সাক্ষাতও মিলেছে তার। সিলভিয়ার ভাষায়, ‘নেইমার তাকে কাঁধে তুলে নিয়েছে এবং সে তার হাত নেইমারের চুলে রেখেছে। এটা অনেক বড় মুহূর্ত। আমি তখন নেইমারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে শৈশবে কোন দলকে সমর্থন করত এবং সে বলেছে পালমেইরাস।’

উল্লেখ্য, জন্মের নির্দিষ্ট সময়ের পাঁচ মাস আগেই পৃথিবীতে এসেছে নিকোলাস। এমন বাচ্চাদের বেঁচে সম্ভাবনা থাকে খুবই কম। শারীরিক গঠন পরিপূর্ণ হয় না। নিকোলাসের বেলায়ও তাই হয়েছে। শরীরের গঠন ঠিকঠাক হলেও চোখের গঠনটা হয়নি। তাই জন্মান্ধ। এ ছেলেকে দত্তক নিয়েছেন সিলভিয়া। এছাড়া নিজের একটি মেয়েও আছে তার। কিন্তু তার মেয়ে এবং স্বামী আবার অন্য দলের ভক্ত। তাই মাঠে মা-ছেলে এবং বাবা-মেয়ে থাকেন আলাদা আলাদা গ্যালারিতে।

 

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

6h ago