দুই গোলে এগিয়েও রিয়ালকে হারাতে পারল না ব্রুস
প্রতিপক্ষ ভয়ঙ্কর দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে সফল দলও বটে। তার উপর আবার তাদের মাঠেই খেলতে এসেছে দলটি। কিন্তু জমাট রক্ষণ তৈরি করে রিয়াল মাদ্রিদকে রুখে দিয়েছে বেলজিয়ামের দল ক্লাব ব্রুস। ১০ জন নিয়ে খেলেও স্পেন থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরছে দলটি। অন্যদিকে শুরুতে দুই গোলে পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদও বেরিয়েছে হারের বৃত্ত থেকে। পিএসজির বিপক্ষে হারের পর এদিনও হারতে বসেছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই মুহুর্মুহু আক্রমণ করে রিয়াল। কিন্তু নিজেদের রক্ষণ ছিল ছন্নছাড়া। তার সুযোগ নিয়ে প্রথমার্ধেই দুই গোল দেয় বেলজিয়ান ক্লাব ব্রুস। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় রিয়াল মাদ্রিদ। গোল শোধ করে দুটিই। তাতে অন্তত হার এড়াতে পেরেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম সেরা দলটি। নিজেদের মাঠে বেলজিয়ান ক্লাবটির সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে রিয়াল।
ঘরের মাঠে এদিন ম্যাচের নবম মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। অফসাইডের ফাঁদ পেতেছিলেন তারা। ব্রুসের এক খেলোয়াড়ের বাড়ানো বলে সে ফাঁদ ভেঙে ঢুকে পড়েন পেরসি টাউ। আড়াআড়ি ক্রস দেন ইমানুয়েল ডেনিস বোনাভেনচারকে। আলতো টোকায় লক্ষ্যভেদ করতে কোন ভুল করেননি এ নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড।
তবে ২১তম মিনিটে সে গোল শোধ করতে পারতো রিয়াল। দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন লুকা মদ্রিচ। দানিয়েল কার্বাহালের কাছ থেকে ডি-বক্সে অনেকটা ফাঁকায় বল পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার শট লক্ষ্যে থাকেনি। সাত মিনিট পর অবশ্য ভাগ্য বঞ্চিত হয় রিয়াল। অবিশ্বাস্য এক সেভ করেন ব্রুস গোলরক্ষক সাইমন মিগনোলেট। টনি ক্রুসের করা কর্নার থেকে একবারে ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পান রাফায়েল ভারানে। হেডও দিয়েছিলেন দারুণ। কিন্তু দারুণ ক্ষিপ্রতায় বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে সে বল ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।
৩৪ তম মিনিটে ক্রেপিন দিয়েত্তার বাড়ানো ক্রসে রিয়ালের অফসাইডের ফাঁদ আরও একবার ভেঙ্গেছিলেন টাউ। এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অসাধারণ শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাঁ পায়ের কোণাকোণি শট ঝাঁপিয়ে পরে ঠেকিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক থিবো কর্তুয়া। দুই মিনিট পর বেনজেমার ক্রস থেকে একবারে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে শট নিয়েছিলেন টনি ক্রুস। কিন্তু অল্পের জন্য নিশানা ঠিক থাকেনি।
৩৯ মিনিটে লুকা মদ্রিচের ভুলে আরও একটি গোল খায় রিয়াল। পাশে দাঁড়ানো রামোস বল ছাড়তে চেয়েছিলেন মদ্রিচ। কিন্তু মাঝে সে বল ধরে ফেলেন বোনাভেনচার। এরপর মাঝ মাঠ থেকে ডি বক্সের যাওয়ার পথে নিজের নিয়ন্ত্রণও প্রায় ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে আলতো চিপ তুলে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
দুই গোল হজম করলেও আক্রমণাত্মক খেলার ধারাবাহিকতা কমায়নি রিয়াল। ৪৫তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ ছিল ক্রুসের। কিন্তু তার শট প্রায় বার পোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশা বাড়ে স্বাগতিকদের। পরের মিনিটে একক দক্ষতায় তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন বেনজেমা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে সে সুযোগও নষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় রিয়াল। ৫০তম মিনিটে হ্যাজার্ডের জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন ব্রুস গোলরক্ষক। চার মিনিট পর নিজের হ্যাট্রিক পূরণ করতে পারতেন বোনাভেনচার। ভারানের ভুলে নিজেদের অর্ধ থেকে পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন তিনি। দারুণ শটও নিয়েছিলেন। কিন্তু তার শট বদলী গোলরক্ষক গায়ে লেগে ফিরে আসে।
পরের মিনিটে কাসেমিরোর দূরপাল্লার শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন ব্রুস গোলরক্ষক। তবে কর্নার থেকে সতীর্থের পা ঘুরে দারুণ এক ক্রস দেন বেনজেমা। সে ক্রস থেকে দারুণ হেডে ব্যবধান কমান রিয়াল অধিনায়ক সের্জিও রামোস।
এক গোল দেওয়ার পর রিয়াল যেন আরও তেতে ওঠে। ৬২তম মিনিটে লুকাস ভাসকেসের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তিন মিনিট পর হ্যাজার্ডের দূরপাল্লার শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৭০তম মিনিটে ফাঁকায় থেকে শট নিয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মদ্রিচ।
৮৫তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় ব্রুস। ডি-বক্সের সামনে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে ট্যাকল করায় লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক রুড ভোরমার। আর সে ফ্রিকিক থেকেই গোল আদায় করে নেয় রিয়াল। ক্রুসের ক্রস থেকে দারুণ হেডে বল জালে জড়ান কাসেমিরো। এরপর ম্যাচের যোগ করা সময়ে গোল করার সুযোগ পেয়েছিল দুই দলই। কিন্তু গোল না হলে ড্র মেনেই মাঠ ছাড়ে দুই দল।
Comments