ছাত্রলীগের জেরার পর বুয়েট শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার

রুম থেকে ডেকে ‘শিবির সন্দেহে’ জেরার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ ‘শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে। এই অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে।
Abrar Fahad
নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

রুম থেকে ডেকে ‘শিবির সন্দেহে’ জেরার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ ‘শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে। এই অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিহত আবরার ফাহাদ থাকতেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে।

গতকাল (৬ অক্টোবর) রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ‘শিবির’ সন্দেহে জেরা করার পর ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আবরারকে পেটান বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান ওই হলের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। 

মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু। তিনি বলেন, “আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেইজে তার লাইক দেওয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই।”

“আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরবর্তীতে প্রমাণ পাওয়ার পরে চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেওয়া হয়,” যোগ করেন ছাত্রলীগ নেতা।

তিনি আরো জানান, “খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা মারধর করে থাকতে পারে। পরে আজ (৭ অক্টোবর) ভোররাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।”

নিহত আবরার ফাহাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া


শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান সাংবাদিকদের বলেন, “ডাক্তারের ফোন পেয়ে আমি হলে আসি। এসে দেখি ছেলেটির লাশ পড়ে আছে। ডাক্তার জানান ছেলেটি আর নেই। পরে তাকে পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।”

ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে।”

বুয়েটের চিকিৎসক ডা. মাসুক এলাহী বলেন, “রাত তিনটার দিকে হলের শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন দেয়। আমি হলে গিয়ে সিঁড়ির পাশে ছেলেটিকে শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। ততক্ষণে ছেলেটি মারা গেছে। তার সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই।”

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নিহত ফাহাদের একজন সহপাঠী বলেন, “টিউশনি শেষ করে আমি রাত নয়টার দিকে হলে আসি। তখন আবরার রুমে ছিলো না। অন্যদের কাছ থেকে জানতে পারি তাকে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গেছে। পরে রাত আড়াইটার দিকে হলের একজন এসে আবরার আমাদের পরিচিত কী না তা সম্পর্কে জানতে চান। তারপর তিনি আমাদের সিঁড়ি রুমের দিকে যাওয়ার জন্য বলেন। আমরা সেখানে গিয়ে দেখি আবরার পড়ে আছে। পরে ডাক্তার এসে ওকে মৃত ঘোষণা করেন।”

ঘটনার বিষয়ে পুলিশের লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামাল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, “হল প্রশাসনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। এসে ছেলেটির লাশ দেখতে পাই। পরে তা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এর আগে ৫ অক্টোবর এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে দুটি সমালোচনামূলক পোস্ট দেন আবরার।

আরো পড়ুন:

আবরার হত্যায় বুয়েট ছাত্রলীগের ২ নেতা আটক

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now