বাংলাদেশ-ভারত লড়াই: গোল করাতেই তফাৎ

Bangladesh football team
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। কাঠমুন্ডুতে দশম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ-ভারত লড়াই। ৮২তম মিনিটে গোল করে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। পেতে শুরু করল জয়ের সুবাস। কিন্তু গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশকে শেষ মুহূর্তে জয়বঞ্চিত করলেন সুনীল ছেত্রী। ম্যাচের যোগ করা সময়ে ভারতীয় তারকা স্ট্রাইকারের বাঁকানো ফ্রি-কিক বাংলাদেশ গোলরক্ষক মামুন খানকে ফাঁকি দিয়ে প্রবেশ করল জালে।

পরের বছরের ঘটনা। ৬ মার্চ আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে গোয়ার পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে ফের মুখোমুখি দুদল। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ শেষ হাসি হেসে মাঠ ছাড়ার অপেক্ষায়। কিন্তু যোগ করা সময়ে আবারও স্বপ্নভঙ্গ। আবারও হন্তারক ছেত্রী, আবারও ম্যাচ শেষ হলো সমতায়।

সবশেষ এই দুটি নজির সাক্ষ্য দেয়, মুখোমুখি দেখায় ভারতের নিখাদ স্ট্রাইকাররা বারবার বাংলাদেশকে হতাশার সাগরে ডুবিয়ে ছেড়েছেন। বর্তমান ভারতীয় দলের সেরা তারকা ছেত্রীর আগে এই ভূমিকায় ছিলেন আরেক বিখ্যাত স্ট্রাইকার বাইচুং ভুটিয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা ৫টি। এর মধ্যে ২টি গোল রয়েছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে, ১৯৯৯ ও ২০০৫ আসরে। দুবারই শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে ২-০ ব্যবধানে হেরে রানার্স-আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে।

কেবল ছেত্রী কিংবা ভুটিয়াই নন, বাংলাদেশকে খাবি খাওয়ানোর কাজটা অতীতে ভালোই সেরেছেন ভারতের আইএম বিজয়ন, বিকাশ পঞ্জি, কৃষাণু দের মতো স্ট্রাইকাররা। যার প্রমাণ মেলে পরিসংখ্যানে। দুদলের মধ্যকার ২৫ ম্যাচের মাত্র ৩টিতে জিতেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। বিপরীতে ভারতের জয় ১২টিতে। বাংলাদেশের জালে তারা বল পাঠিয়েছে মোট ৩২ বার যার ১০টি করেছেন ভুটিয়া, বিজয়ন ও ছেত্রী মিলে।

sunil chhetri
সুনীল ছেত্রী। ছবি: এএফপি

ভারতের স্ট্রাইকাররা যেভাবে ম্যাচের ফল বদলে দিতে পেরেছেন, বাংলাদেশের স্ট্রাইকাররা সেভাবে পারেননি। এই জায়গাটাই বারবার তফাৎ গড়ে দেয় দুদলের লড়াইয়ে। তাই ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশের ভারতকে মোকাবিলা করতে যাওয়ার আগে কিছুটা দুশ্চিন্তায় দেশের সাবেক তারকা ফুটবলাররা।

তাদের মতে, ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতের স্ট্রাইকাররা এ ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। তবে তারা আশাবাদীও, সবশেষ ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে যেমন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তাদের উত্তরসূরিরা, সে ধারাটা বজায় রাখতে পারলে কমপক্ষে ১ পয়েন্ট নিয়ে দেশে ফিরতে পারবে বাংলাদেশ।

সাবেক ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেছেন, ‘ভারতের গোল করার ক্ষমতা আমাদের চেয়ে ভালো। তারা সাদামাটা সুযোগগুলোকে গোলে রূপান্তর করতে পারে। আমার এখনও মনে পড়ে, একবার এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা একের পর এক সুযোগ নষ্ট করেছিলাম এবং তার খেসারত দিয়ে ম্যাচ হেরেছিলাম। ভারতের তখনকার কোচ পিকে বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, তার দল আমাদের চেয়ে সব দিক থেকে পিছিয়ে ছিল, কেবল গোল করার ক্ষেত্রটা বাদে। সেই কথাটা এখনও প্রাসঙ্গিক ও সত্য।’

একেবারেই সত্য। ভারতের ছেত্রী যেখানে ৭২ গোল নিয়ে বর্তমানের তো বটেই, ভারতের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা, সেখানে বাংলাদেশের নাম্বার টেন নাবীব নেওয়াজ জীবনের গোল মাত্র ৪টি। স্ট্রাইকারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল মাহবুবুর রহমান সুফিলের, ২টি।

nabib newaj jibon
নাবীব নেওয়াজ জীবন (মাঝে)। ছবি: বাফুফে

ইলিয়াস হোসেনের মতে, অতীতে বাংলাদেশ প্রচুর ভুল করেছে ম্যাচে এবং ভারতীয় স্ট্রাইকাররা সে সুযোগটা লুফে নিয়েছে আর বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডদের গোল করার ক্ষমতাও যথেষ্ট ভালো ছিল না।

১৯৮৫ সালে ঢাকায় থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে গোল করা এই সাবেক স্ট্রাইকার জানিয়েছেন, ‘আমরা অনেক সুযোগ নষ্ট করতাম আর তাদের কৃষাণু, প্রসেনজিৎ, বিশ্বজিৎ, প্রসূনের মতো দারুণ ফরোয়ার্ড ছিল যারা বাংলাদেশের স্ট্রাইকারদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তাই বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা ভুল করলেই তারা পুরো ফায়দা নিতেন।’

সাবেকদের কথার সঙ্গে দ্বিমতে যাওয়ার উপায় নেই। সবশেষ কাতার ম্যাচে যত সুযোগ পেয়েছেন স্ট্রাইকাররা তা কাজে লাগাতে পারলে পূর্ণ পয়েন্ট পেতে পারত বাংলাদেশ। তবে আশার কথা হলো, জেমি ডের অধীনে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বেশ ভালো, উন্নতির ছাপটাও লক্ষণীয়। মাঠে এসবের প্রমাণ রেখে অতীতের দুঃসহ স্মৃতিগুলোকে মুছে দিতে পারবে বাংলাদেশ?

জানা যাবে রাতেই। যৌথ বাছাইয়ে ‘ই’ গ্রুপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে আজ মঙ্গলবার ভারতের আতিথ্য নেবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে কলকাতার সল্টলেক (বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন) স্টেডিয়ামে। খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়।

Comments

The Daily Star  | English

UN says cross-border aid to Myanmar requires approval from both govts

The clarification followed Foreign Adviser Touhid Hossain's statement on Sunday that Bangladesh had agreed in principle to a UN proposal for a humanitarian corridor to Myanmar's Rakhine State

45m ago